WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

আত্নপীড়িত এক মধুকবির গল্প আত্নপীড়িত এক মধুকবির গল্প

আত্নপীড়িত এক মধুকবির গল্প

প্রথম প্রকাশঃ জুন ২৯, ২০১৬ সময়ঃ ৪:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সাদিয়া এইচ. তানহাঃ

1422115017মহাকবি, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, নাট্যকার প্রভৃতি অনেকগুলো পরিচয় রয়েছে তাঁর। বাংলা সাহিত্য আধুনিক যুগে প্রবেশ করে তাঁর হাত ধরেই। কিন্তু এত কিছুর পরও তাঁর পরিচয়ের সারাংশ বোধহয় এক দিগভ্রষ্ট কবি হিসেবে, যিনি নিজের জীবন নিয়ে যাচ্ছেতাইভাবে খেলেছেন। এই কবির নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বাংলা সাহিত্যের বাগানে প্রস্ফুটিত এক অপূর্ব সুন্দর ফুল।

মধুকবির জন্ম হয় এক জমিদার বংশে, ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে  সাগরদাঁড়ি গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন কলকাতার প্রতিষ্ঠিত উকিল রাজনারায়ণ দত্ত এবং মাতা ছিলেন জাহ্নবী দেবী। মাতার নিকটেই পড়াশোনায় হাতেখড়ি মধুসূদনের।

এই মহাকবির কাব্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে হিন্দু কলেজে পড়ার সময়। তিনি খুব দ্রুতই কলেজের অধ্যক্ষ রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন, যিনি তাঁকে কাব্য রচনায় উৎসাহিত করেন।

মধুকবি বরাবরই ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী। হিন্দু কলেজে অধ্যায়নকালে তাঁর রচিত ইংরেজি কবিতা Literary Gazette ও Literary Gleaner পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ সময় ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত Bentley’s Misscellany ও Black wood’s ম্যাগাজিনেও তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়। এ সময় থেকে তাঁর মনে ইংল্যান্ড যাওয়ার বাসনা তীব্র হয়ে ওঠে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তাঁর মনে মহাকবি হওয়ার বাসনা প্রবল হয়ে ওঠে এবং তিনি বিলাত যেতে মনস্থ করেন। কারণ বাংলা ও ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি এক ধরণের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য তাঁর মনে সব সময়ই বিরাজ করতো। তাই তিনি মনে করতেন বড় কবি হওয়া সম্ভব একমাত্র শেক্সপিয়ার, লর্ড বায়রনদের দেশে গিয়েই। বাংলা ভাষায় মহৎ সাহিত্য সৃষ্টি কোনভাবেই সম্ভব নয়।
ছেলের এহেন উন্নাসিকতা দেখে পিতা রাজনারায়ণ দত্ত তাঁর বিবাহ ঠিক করেন। কিন্তু মধুকবি ভারত, তার সংস্কৃতি, ধর্ম ও জীবনাচরণ সব কিছুর প্রতিই এত বীতশ্রদ্ধ ছিলেন যে তিনি ১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর ঐ বছরই ১৩ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি পাদ্রী ডিলট্রির নিকট খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় রাজনারায়ণ দত্ত ত্যাজ্য করেন পুত্রকে।

প্রেম ও বিয়ের জন্যও কোন বাঙালি বা ভারতীয় নারীকে উপযুক্ত মনে করেননি কবি। বিয়ের ক্ষেত্রেও মধুসূদন বেছে নিয়েছিলেন পশ্চিমা নারীকে। তাঁর প্রথম স্ত্রী রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ নারী যাকে তিনি মাদ্রাজ, বর্তমান চেন্নাইয়ে অবস্থানকালে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্যজীবন সাত বছর স্থায়ী হয়েছিল। আর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন এমিলিয়া আঁরিয়েতা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণী, যাকে তিনি মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করেন। আঁরিয়েতা মাইকেলের সঙ্গে আমৃত্যু ছিলেন।
এদিকে মাইকেল তাঁর এক কপি “দ্য ক্যাপটিভ লেডি” বন্ধু গৌরদাস বসাককে উপহার পাঠালে, গৌরদাস সেটি জে ই ডি বেথুনের কাছে উপহার হিসেবে পাঠান। মাইকেলের ইংরেজি সাহিত্য কিছু মাত্রায় প্রসংশিত হয়েছে কিন্তু সমালোচনাই তিনি উপহার পেয়েছেন বেশি। তাঁর ইংরেজি রচনা সম্পর্কে বলা হয় এগুলোতে কোন প্রাণ নেই, স্বতস্ফূর্ততা নেই। কেবল তিনি কত বেশি পশ্চিমা সাহিত্য পড়েছেন তা জাহির করার প্রচেষ্টা আছে।

এমন আশাতীত ব্যর্থতায় মাইকেল একেবারে মুষড়ে পড়েন এবং আত্নপীড়ণে ভুগতে থাকেন। এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে যারা তাঁকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে উৎসাহিত করেছিল তারাই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর তাঁর বিপদকালীন সময়ে তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এমন অবস্থায় বন্ধুদের পরামর্শে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু করেন মধুকবি। এবং মানুষ অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন, কী অসাধারণ সব লেখা বেরিয়ে আসছে মাইকেলের হাত থেকে। মাইকেল নিজেও অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, বাংলা ভাষার সাহিত্য ভান্ডার কী প্রাচুর্যময়। কী দারুণ সব সাহিত্য বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে।
এরই মধ্যে এক পর্যায়ে তিনি ইংল্যান্ড এবং সেখান থেকে ফ্রান্সে চলে যান। এসময় পারিবারিক জীবনে অস্থিরতা, প্রবাসকালীন অর্থকষ্ট ও অনাত্নীয় পরিবেশ প্রভৃতি কারণে মাইকেল খুবই বিপর্যস্ত ছিলেন। এর মধ্যেই তাঁর বাংলার প্রতি অনুরাগ গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো। বাংলা ভাষা থেকে কেন তিনি এতদিন দূরে ছিলেন সে আফসোস থেকে লিখলেন,
“হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন; –
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।”
নিজেকে ভিক্ষুকের সাথে তুলনা করতে দেখলেই মাইকেলের আত্নগ্লাণির স্বরূপটি খুব ভালোভাবে বোঝা যায়।

তবে তাই বলে তিনি ভারতবর্ষের সব প্রথাব্যবস্থা মুখ বুঁজে মেনে নেননি। তাইতো তিনি লিখেছেন “বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ” এর মতো প্রহসন যেখানে ভারতের মান্ধাতা আমলের প্রথাব্যবস্থাকে নিয়ে উপহাস করা হয়েছে। আবার পশ্চিমের প্রতি অন্ধ আসক্তি কেটে গিয়ে তিনি যে একজন সত্যিকার যুক্তিবাদী মানুষ হয়ে উঠতে শুরু করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর আরেক কালজয়ী প্রহসন “একেই কি বলে সভ্যতা”তে। এখানে তিনি পশ্চিমা ভাবাদর্শের আবেগে অন্ধ ইয়ং বেঙ্গলের যুবকদের মদ্যপান, উচ্ছৃঙ্খলতা প্রভৃতি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।

মধুসূদনকে বাংলা মহাকাব্যের গুরু হিসেবে অভিহিত করা যায়। তাঁর রচিত মেঘনাদ বধ কাব্য বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। এ কাব্যে তিনি রাবন ও তার পুত্র মেঘনাদকে খলনায়ক হিসেবে দেখার রামায়নের চিরন্তন রীতি ভেঙ্গে দেন। মেঘনাদকে নায়ক ও ট্র্যাজিক হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে তিনি কাউন্টার ন্যারেটিভে গিয়ে নব মানবতাবোধের এক অসাধারণ আখ্যান রচনা করেন।
প্রকৃতপক্ষে মাইকেলের প্রচুর পশ্চিমা সাহিত্য পাঠ একেবারেই বিফল ছিল না। বরং বাংলা ভাষায় পেত্রার্কীয় রীতি, মহাকাব্য রচনা, নাটক রচনা, ন্যায়ধর্মকে পাশে সরিয়ে মানবধর্মের জয়গান – এসব কিছুই এত সহজ হয়েছিল মাইকেলের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। মাইকেল শেষ মুহূর্তে পুরো পৃথিবীকে এনে সংযুক্ত করেছিলেন বাংলায়। কিন্তু তাঁর মনে যে তাঁর প্রথম জীবনে অন্ধ পশ্চিমা জীবনের প্রতি আসক্তির ফলে খেদ থেকে গিয়েছিল তা বারবার তাঁর সাহিত্যে ফুটে উঠেছে। যেমন মেঘনাদ বধ কাব্যে তিনি লিখেছেন –
“শাস্ত্রে বলে , গুণবান যদি পরজন , গুণহীন স্বজন, তথাপি
নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা!’”

কোনদিনই জীবনকে গুছিয়ে উঠতে পারেননি মাইকেল। তাঁর সাহিত্যজীবনও তাই খুব দীর্ঘতর হয়নি।

১৮৭৩ সালের ২৯ জুন রবিবার অপরাহ্ন প্রায় দুইটার সময় স্ত্রীর মৃত্যুর তিনদিন পর জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুবরণ করেন। এখনো পশ্চিম বাংলার কলকাতায় মহাকবির সমাধিস্থলে তাঁর শেষ লেখা জন্ম পরিচিতি কবিতাটুকু এপিটাফে শোভা পায়। যেখানে তিনি লিখেছেন –
“দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব
বঙ্গে; তিষ্ঠ ক্ষণকাল। এ সমাধিস্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি
বিরাম) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত্ত
দত্ত-কুলোদ্ভব কবি শ্রী মধুসুদন।
যশোরে সাগরদাঁড়ী কপোতাক্ষ-তীরে
জন্মভূমী, জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী।”

এ কবিতাতেও বাংলা ও বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর অনুরাগ ধরা পড়ে। আত্নপীড়িত এই মহাকবির আজ ১৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। এমন মানুষের মৃত্যুবার্ষিকী তো আসলে তাঁকে হারানোর কোন সংকেত নয়, বরং মাইকেলকে মনে করার, আবার তাঁকে পাঠ করার একটি চমৎকার উপলক্ষ্য।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G