WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

এবার রুখে দাঁড়াবে বাংলাদেশ- জাফর ইকবাল এবার রুখে দাঁড়াবে বাংলাদেশ- জাফর ইকবাল

এবার রুখে দাঁড়াবে বাংলাদেশ- জাফর ইকবাল

প্রকাশঃ মে ৭, ২০১৬ সময়ঃ ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:১১ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

jafor_iqbal-banglarkotha24 (1)

সম্প্রতি দেশে ঘটে গেছে নানা হত্যাকান্ড এর মধ্যে রয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রেজাউল করিম সিদ্দিকী, তনু হত্যা কান্ড, এলজিবিটি কর্মী জুলহাস মান্নান, নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তন্ময়। এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে এখন পর্যন্ত একটিরও সুষ্ট বিচার হয়নি। আইনশৃংখ্লা বাহিনী সেসব হত্যাকান্ডে খুনীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখন অবধি কাউকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। গতকাল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে এসব হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। তারই হুবহু এই লাইনগুলো পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল।

১.

আজ দুপুরবেলা আমি আমাদের সহকর্মীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির সামনে বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে বসেছিলাম। মাত্র কয়েকদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের মতোই একজন প্রফেসর রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কয়েকজন কমবয়সী তরুণ মোটর সাইকেলে এসে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। (আমি কী সহজেই না কথাটি লিখে ফেললাম, মানুষকে খুন করার এই প্রক্রিয়াটি কী ভয়ংকর একটি নিষ্ঠুরতা, অথচ কত দ্রুত আমরা এই নিষ্ঠুরতায় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি!)

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশান প্রফেসর সিদ্দিকীর এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে এসে বসে থেকেছি।

সেখানে বসে আমি ডানে বামে তাকিয়ে হঠাৎ করে আবিষ্কার করলাম, প্রফেসর সিদ্দিকীর মতো একজন মানুষকে যদি চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা যায়, তাহলে আমার ডানে বামে বসে থাকা যে কোনো একজন শিক্ষককেও আসলে যে কোনো সময় হত্যা করে ফেলা সম্ভব।

প্রফেসর রেজাউল করিম সিদ্দিকী সত্যিকারের একজন শিক্ষক। ছাত্রদের পড়ান, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন, সঙ্গীত ভালোবাসেন, সেতার বাজাতে পারেন। নিজের গ্রামে স্কুল করে দিয়েছেন, গ্রামের মসজিদ-মাদ্রাসাকে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন। ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকায় তাঁর ছাত্রের তোলা একটা ছবি ছাপা হয়েছিল, সেই ছবিটি ছিল নিবেদিতপ্রাণ একজন শিক্ষকের পরিপূর্ণ প্রতিমূর্তি। এই মানুষটিকেই যদি হত্যা করা যায় তাহলে অন্য শিক্ষকদের হত্যা করতে বাধা কোথায়?

দেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই তাঁর মতো অনেক শিক্ষক আছেন। তাঁরা সবাই নিশ্চয়ই এখন হত্যাকাণ্ডের টাগের্ট।

এই মানুষটিকেই যদি হত্যা করা যায় তাহলে অন্য শিক্ষকদের হত্যা করতে বাধা কোথায়?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও একই ধরনের কথা বলেছেন। তাদের কথা সত্যি। আমরা যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাই গাড়ি-বাস-ট্রেন চলছে; মানুষ চলাচল করছে; ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে যাচ্ছে; শিক্ষকেরা ক্লাশ নিচ্ছেন; মানুষজন অফিস-আদালতে যাচ্ছেন; দোকান-পাটে বেচাকেনা হচ্ছে; নাটক-থিয়েটার হচ্ছে।

সত্যিই তো, আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক না হলে দেশে এই সব কিছু কি এ রকম স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে?

কিন্তু এর পাশাপাশি আরও একটি চিত্র আছে, সেটি কী সবাই জানে না। প্রগতিশীল মানুষ, যাঁরা গল্প-কবিতা লিখেন, নাটক করেন, গান শুনেন, যাঁরা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন, তাঁরা যে হঠাৎ করে এক ধরনের চাপা আতঙ্কে থাকছেন, প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, সেটি কি সবাই জানে?

বাইশ বছর আগে আমি দেশে ফিরে এসেছিলাম। তখন থেকে আমি পুরো দেশটিতে চষে বেড়িয়েছি। গণিত অলিম্পিয়াড, সাহিত্য সম্মেলন, পুরস্কার বিতরণী, সায়েন্স ফেয়ার, এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই যেটাতে যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের এক কোণ থেকে আরেক কোণে যাইনি। অথচ এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে যাওয়ার সময়ও সশস্ত্র পুলিশ আমাকে চোখে চোখে রাখে!

আমাকে এভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যে সরকারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ এবং অবশ্যই খুবই বিব্রত। কিন্তু যদি দেশটি এমন হত যে, কাউকেই আলাদাভাবে নিরাপত্তা দিতে না হত, তাহলে আমরা সবাই কি আরও অনেক বেশি খুশি হতাম না?

প্রফেসর রেজাউল সিদ্দিকীর মতো একজন খাঁটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে যারা ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে ফেলতে পারে, তাদের সংখ্যা বাংলাদেশের মাটিতে কিছুতেই খুব বেশি হতে পারে না। দশ বছরে একবার এ রকম একটি ঘটনা ঘটলে এবং তার সমাধান করতে না পারলে হয়তো মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যদি এক মাসে প্রায় আধ ডজন একই রকম ঘটনা ঘটে, সেগুলোর যদি রহস্য ভেদ না হয়, সেটা পৃথিবীর কেউ মেনে নেবে না।

পুলিশ বাহিনী চাইলে অপরাধীকে ধরতে পারে না সেটি বিশ্বাস হয় না। কেন জানি মনে হয় কোথায় জানি আন্তরিকতার অভাব। যারা হত্যা করছে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তারা যেটুকু অপরাধী মনে হয়, যাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে রাষ্ট্রের কাছে তারা বুঝি আরও বেশি অপরাধী! ধর্মের অবমাননা করা হলে কী রকম কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে সেটি খুব কঠিন ভাষায় সরকার অনেকবার বলেছে। কিন্তু মতের মিল না হলেই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে ফেললে সেই খুনিকে কী শাস্তি দেওয়া হবে সেই কথাটি কেন জানি কেউ জোর গলায় বলছেন না।

কারণটি কী, কেউ কী আমাকে বুঝিয়ে দেবেন?

আমি ‘আন্তরিকতার অভাব’ কথাটি ব্যবহার করেছি। যতবার এই বিষয়ে লিখেছি আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই কথাটা বলেছি। আমি যে একা এই কথা বলছি তা নয়, বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমে বিশাল একটি প্রতিবেদন বের হয়েছে যার শিরোনাম, ‘জামিন পাচ্ছে জঙ্গিরা’– যেখানে একেবারে তথ্য-প্রমাণ এবং সংখ্যা দিয়ে কীভাবে জঙ্গিদের ধরে ফেলার পরেও ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কিংবা অদক্ষতার কারণে বিচার হচ্ছে না, তার নিখুঁত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

সেই লেখাটি পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারবেন পুরো ব্যাপারটিতে সত্যি সত্যি আন্তরিকতার অভাব আছে। বিশেষ করে আমাদের আশাভঙ্গ হয় যখন দেখি এত হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডগুলোকে শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র রাজনীতির বক্তব্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আন্তরিকতা না থাকলে যে বিচার হয় না. আমাদের দেশে তার উদাহরণের কোনো অভাব নেই। সবচেয়ে জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছে তনু হত্যাকাণ্ড। আমাদের সংবাদপত্রের মেরুদণ্ডে জোর নেই বলে তারা তনু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টা সামনে নিয়ে আসতে সাহস পায়নি। বিষয়টা দেশের মানুষের সামনে এনেছে অনলাইন কর্মীরা। নূতন করে পোস্টমর্টেম হয়েছে, নূতন করে তদন্ত হয়েছে। কিন্তু এখনও অপরাধী ধরা পড়েনি। কমবয়সী হাসিখুশি এই মেয়েটির বিচার যদি এই দেশের মানুষ করে যেতে না পারে, তাহলে এই অপরাধবোধ থেকে কারও মুক্তি নেই।

কমবয়সী হাসিখুশি এই মেয়েটির বিচার যদি এই দেশের মানুষ করে যেতে না পারে তাহলে এই অপরাধবোধ থেকে কারও মুক্তি নেই

কিন্তু পর পর এতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে যে, এখন কেউ যদি তনু হত্যাকাণ্ডের বিচারের কথা বলে সবাই নিশ্চয়ই অবাক হয়ে তার দিকে তাকাবে। এই দেশে যে বিচারটুকু না করার পরিকল্পনা করা হয় সেটাকে ধীরে ধীরে ধামাচাপা দিতে হয়! তনু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টা কি সেদিকেই এগুচ্ছে? কিন্তু আমরা কী সেই জাতি নই যারা চল্লিশ বছর পরে হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কিংবা যুদ্ধাপরাধীর বিচার করেছি?

কমবয়সী হাসিখুশি একটি প্রায়-কিশোরী মেয়ের জীবনটি কি এখন আমাদের বিবেকের সামনে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে যায়নি? ক্যান্টনমেন্টে কী হয়েছিল যেটি এই দেশের মানুষকে কি কিছুতেই জানানো যাবে না?

বিচার হয়নি এ রকম ঘটনার কথা মনে হলেই আমার সাগর রুনির কথা মনে পড়ে। সত্যিই কী খুনিরা এতই কৌশলী ছিল যে, রাষ্ট্রযন্ত্র তার পুরো শক্তি ব্যবহার করেও তাদের ধরতে পারেনি?

সাগর রুনির সাথে সাথে গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডেন্ট নুরুল ইসলাম এবং তা*র ছেলে তমোহর ইসলাম পুচির কথাও মনে পড়ে। এই দুজনের হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন কারা হতে পারে সেটি সবাই জানে। তারপরও কখনও তদন্ত শেষ করে অপরাধীদের ধরা হয়নি। পরিবারের আপনজনেরা বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে বের হয়ে চলে যাওয়া মানুষ দুটোর জন্যে শোক করার অবসরটুকু কখনও পাননি।

আমার মাঝে মাঝেই ফুটফুটে কিশোর ত্বকীর কথাও মনে পড়ে। পৃথিবীটা কি এতই নষ্ঠুর যে, তার মতো একজনকে হত্যা করার পর খুনিরা সদর্পে ঘুরে বেড়াবে এবং তাদের স্পর্শ করা যাবে না?

আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, ভালো করে কথা বলা পর্যন্ত শিখিনি, তখন আমার বাবা আমাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রশ্ন’ কবিতাটি আবৃত্তি করতে শিখিয়েছিলেন। সেই কঠিন কবিতাটির একটি লাইনের অর্থও আমি বুঝতাম না, তোতা পাখির মতো আবৃত্তি করে যেতাম। কবিতার লাইন ছিল এ রকম:

“আমি যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।”

সেই কথাটির অর্থ শৈশবে আমি বুঝিনি। এখন বুঝি। প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধ কী ভয়ানক হতে পারে সেটি এখন আমরা অনেকেই টের পেতে শুরু করেছি। যদি প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হত তাহলে আমরা নিশ্চয়ই আজকে এ রকম একটা রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় দিন কাটাতাম না।

২.

মাঝখানে কিছুদিন বিরতি দিয়ে সাম্প্রতিক যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটতে শুরু করেছে, সেটা শুরু হয়েছিল জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে দিয়ে। চাপাতির আঘাতে কাউকে খুন করে ফেলার জন্যে কোনো কারণের দরকার হয় না। কিন্তু নাজিমের বেলায় খুনিরা মনে হয় একটা কারণ খুঁজে বের করেছিল। সে ছিল গণজাগরণ মঞ্চের একজন কর্মী। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি করার জন্যে এর আগেও এই দেশে অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে।

নাজিম সিলেটের ছেলে, সিলেট শহরের গণজাগরণ মঞ্চে সে হাজির ছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের সাথে আমিও অনেকবার সেখানে গিয়েছি। আমরা বেঁচে আছি, সে বেঁচে নেই। যতবার বিষয়টা মনে পড়ে, আমি একই সাথে গভীর দুঃখ এবং তীব্র ক্ষোভ অনুভব করি।

বিচার হয়নি এ রকম ঘটনার কথা মনে হলেই আমার সাগর রুনির কথা মনে পড়ে

সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে ঢাকার বাইরে, টাঙ্গাইলে। যে মানুষটিকে হত্যা করা হয়েছে তাঁর নাম নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার। পেশায় একজন দর্জি। হত্যা করার প্রক্রিয়া এক এবং অভিন্ন, মোটর সাইকেলে এসে প্রকাশ্য দিনের বেলায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লাশ ফেলে দেওয়া। খবরের কাগজে দেখেছি, তাঁর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আমরা এক ধরনের কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করছি, সত্যি সত্যি খুনিদের ধরা সম্ভব হয় কি না সেটি দেখার জন্যে।

এর মাঝে একজন হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করা হয়েছে এবং একজন কারারক্ষীকেও হত্যা করা হয়েছে। যে দুটি হত্যা নিয়ে শুধু দেশে নয় দেশের বাইরেও আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তার একজন হচ্ছে এলজিবিটি কর্মী জুলহাস মান্নান, অন্যজন তাঁর বন্ধু, নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তন্ময়। অনুমান করছি, জুলহাজ মান্নানকে প্রাণ দিতে হয়েছে এলজিবিটি কর্মী হওয়ার জন্য।

আমি জানি না সবাই জানে কি না যে, ভিন্ন জীবনধারার মানুষ এলজিবিটি কর্মী হিসেবে কাজ করে, পৃথিবীতে তার আনুমানিক সংখ্যা শতকরা দশ ভাগ। যে ‘অপরাধের’ জন্যে জুলহাজ মান্নানকে প্রাণ দিতে হয়েছে, সেই অপরাধের অপরাধী সবাইকে শাস্তি দিতে হলে শুধু বাংলাদেশেই দেড় কােটি মানুষকে হত্যা করতে হবে!

নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তন্ময় নাট্য আন্দোলনের খুব জনপ্রিয় একজন কর্মী। সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমীতে তাঁর বিশাল একটা ছবি নাট্যকর্মীরা টানিয়ে রেখেছেন। কৃত্রিম বিশাল গোঁফ লাগানো সেই ছবিটিতে তন্ময় এক ধরনের কৌতুক চোখে সবার দিকে তাকিয়ে আছেন। একজন মানুষ যখন শুধুমাত্র ছবি হয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তখন সেটি মনে নিতে খুব কষ্ট হয়।

৩.

আমি এই লেখাটি লিখতে গিয়ে খুব কষ্ট অনুভব করেছি। প্রায় দুই যুগ থেকে আমি প্রায় নিয়মিতভাবে লিখে আসছি। যতদিন দেশের বাইরে ছিলাম ততদিন দেশকে সমালোচনা করে কখনও একটি লাইনও লিখিনি। আমার মনে হত, বিদেশের মাটিতে নিশ্চিত নিরাপদ জীবন কাটাতে কাটাতে দেশের সমালোচনা করার আমার কোনো অধিকার নেই।

দেশে ফিরে এসে আমার মনে হয়েছে, এখন বুঝি দেশ, দেশের সমাজ, রাষ্ট্রকে নিয়ে আমার সমালোচনা করার অধিকার হয়েছে। এই সুদীর্ঘ সময়ে আমি কম লিখিনি, কিন্তু আজকে লিখতে গিয়ে আমি এক ধরনের গ্লানি অনুভব করছি। পুরো লেখাটিতেই শুধু হত্যাকাণ্ডের কথা, শুধু হতাশার কথা, মন খারাপ করার কথা। যে ধর্মান্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে তারাও তো এটিই চায়, আমাদের মাজে ক্ষোভের জন্ম দিতে চায়, হতাশার জন্ম দিতে চায়, আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে চায়।

কিন্তু আমরা এর থেকে সহস্র গুণ বেশি দুঃসময় পার হয়ে এসেছি। কাজেই আমি নিশ্চিত, আবার আমরা এই দুঃসময় পার করে যাব। বাংলাদেশের মানুষ আর যাই হোক কখনোই ধর্মান্ধ জঙ্গি মানুষকে এই দেশের মাটিতে শিকড় গাড়তে দেবে না। অবশ্যই এই দেশের সব মানুষ মিলে এই ধর্মান্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীকে এই দেশের মাটি থেকে উৎখাত করবে। করবেই করবে।

আমি বেশিরভাগ সময়েই কমবয়সী ছেলেমেয়েদের জন্যে লিখি। তাই শুনেছি পত্রপত্রিকায় আমার এই কলামগুলোও তারা পড়ে ফেলে। আমার এই নিরানন্দ কলামটি পড়ে তারা মন খারাপ করে ফেললে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। তাই মন ভালো হয়ে যায় সে রকম কিছু একটা লিখে আমি এই কলামটা শেষ করতে চাই।

মন ভালো করার মতো কিছু কী ঘটেছে গত সপ্তাহে? অবশ্যই ঘটেছে, চৌদ্দ বছরের কমবয়সী মেয়েরা টানা দ্বিতীয়বার ফুটবল খেলায় এএফসি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফাইনাল খেলায় এক বিলিয়ন মানুষের দেশ ভারতের টিমটিকে একটি নয়, দুটি নয়, চার চারটি গোলে হারিয়ে দিয়েছে।

ডেইলি স্টারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের কয়েক জনের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। হালকা পাতলা ছিপছিপে সেই কিশোরীদের দেখে আমার মনে হয়েছিল, ফুঁ দিলে বাতাসে বুঝি তারা উড়ে যাবে। কিন্তু কী বিস্ময়কর তাদের প্রাণশক্তি! আমি তাদের দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের বড় মানুষেরা যেটি কখনও পারেনি, চৌদ্দ বছরের কমবয়সী কিশোরীরা আমাদের দেশকে সেটি এনে নিয়েছে! একবার নয় বার বার।

ধর্মান্ধ জঙ্গিরা জানে না, এই কিশোরীর দল হচ্ছে আমাদের সত্যিকারের বাংলাদেশ! কার সাধ্যি আছে এই বাংলাদেশকে অবরুদ্ধ করে রাখার?

রুখে দাঁড়াবে আমাদের এই বাংলাদেশ।

১ ২

৩ ৪

৬

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/আরএম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G