‘গরু’ ডাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৭ সময়ঃ ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

collegeপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‌‌’গরু’ বলায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিবের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তার বিচার ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছিল উত্তাল।
 
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন।  পরে শিক্ষার্থীরা ডেপুটি রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি রোববারের মধ্যে এহসান হাবিবের স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন।

এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এহসান হাবিব গত ৩১ জানুয়ারি সকাল ৮টা ২৪ মিনিটে তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে  লেখেন, ‘পাবলিকের অনেক গরু প্রতিদিন আমি আমার বাড়ির মাঠে ঘাস খেতে দেখেছি।’ এরপর ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বিষয়টা প্রাইভেট পাবলিকের না। বিষয়টা হলো মেধার। যোগ্যতার। আপনি পাবলিকের গরু নেবেন নাকি প্রাইভেটের মেধা নেবেন।’

এই স্ট্যাটাসের পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ছেলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বিভাগে শিক্ষক প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছেন। তার নিয়োগ নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠলে সহকারী রেজিস্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিব উপাচার্যের ছেলের পক্ষে এ স্ট্যাটাস দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা শিক্ষা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বিপ্লব হাসান বলেন, ‘ইংরেজি বিভাগ থেকেই অনেক মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষার্থী বেরিয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে স্বজনপ্রীতি করে নিয়োগ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা এটা মানি না। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বজনপ্রীতির নিয়োগ বন্ধ না হবে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাত আরা অভিযোগ করেন, ‘ভিসি স্যারের ছেলেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সে হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ দিলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তাছাড়া আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গরু বলাটা অপমানজনক।’

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক অনিক অভিযোগ করেন, ‘ভিসি স্যারের ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে সহকারী রেজিস্ট্রার হাবিব জনমত গঠনে তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, পাবলিকের গরু নেবেন, না প্রাইভেটের মেধা নেবেন। এ ছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও কটূক্তিমূলক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচার দাবি করছি।’

জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সহকারী রেজিস্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিবের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ছাত্রজীবনে সে জামাত-শিবির করতে পারে। ছাত্রজীবনে অনেকেই অনেক কিছু করে। তাই বলে পেশাগত কর্মস্থলে এ রকম করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্তে ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহকারী রেজিস্ট্রার বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলেন, উপাচার্যের নির্দেশে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসে তারা রিপোর্ট জমা দেবেন। দোষী হলে সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G