জা.বি প্রতিবেদক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পরীক্ষামূলকভাবে জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে কোরিয়ান জিনসেং এর উৎপাদন শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার চুংবুক বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনসেং উৎপাদনকারী সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়েলগ্রীন ইনকরপোরেশনের সহযোগিতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সোহায়েল সেল জেনেটিক্স, প্লান্ট বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবরেটরিতে জীবপ্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জিনসেং মূলের উৎপাদন শুরু করেছেন।
ড. সোহায়েল এ ব্যাপারে প্রতিক্ষণ প্রতিবেদককে জানান, জিনসেং একটি বহুল ব্যবহৃত ঔষধি, গুণ স¤পন্ন উদ্ভিদ, যার মূলে রয়েছে বিশেষ রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা। হাজার বছর ধরে চীন, জাপান এবং কোরিয়াতে জিনসেং মূল রোগের প্রতিষেধক, শক্তি উৎপাদনকারী, পথ্য ও টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ড. সোহায়েল আরো জানান, জিনসেং বর্তমানে সারা বিশ্বে একটি আলোচিত ঔষধি। আমেরিকা এবং ইউরোপে ফাংশনাল ফুড হিসেবে এটি বহুল প্রচলিত। জিনসেংর বহুমুখী উপকারিতা, ঔষধি গুণের কথা বিবেচনা করে বিশ্বব্যাপি নতুন নতুন উৎপাদন পদ্ধতির উদ্ভাবন চলছে, যাতে করে এই মহামূল্যবান ঔষধিটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পৃথিবীর যে কোন স্থানে উৎপাদন করা যায়।
জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে জিনসেং মূলের উৎপাদন প্রসঙ্গে ড. সোহায়েল জানান, জিনসেং কোরিয়াতে এবং বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হলেও এর চাষাবাদ বেশ কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। মাঠ পর্যায়ে মাটিতে চাষাবাদের জন্য সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন এছাড়াও এর বৃদ্ধি খুব ধীর, চাষাবাদ পরিশ্রম সাধ্য ও ব্যয়বহুল। এভাবে চাষ করলে চারা থেকে বাজারজাত যোগ্য অবস্থায় পৌছাতে কমপক্ষে ৫-৭ বছর লেগে যায়। এটি দূষণ, সংক্রমণ ও কীট-পতঙ্গের আক্রমন ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন হ্রাসের ঝুঁকিতে থাকে। তাই বিভিন্ন দেশে জিনসেং-এর চাহিদা মেটানোর জন্য বিকল্প পদ্ধতিতে জিনসেং মূলের টিস্যু থেকে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জিনসেং মূল উৎপাদন করা হয় ।
বাংলাদেশে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ঔষধ কোম্পানীগুলো বিদেশ থেকে এই মহামূল্যবান জিনসেং মূল আমদানী করছে। এই গবেষণা প্রয়াসটি সফল হলে বাংলাদেশেই কোরিয়া এবং চীনের মত জিনসেং মূল এর বিপুল উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস ড সোহায়েলের।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার চুংবুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পেক কি ইউপ পরীক্ষাগারে জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে জিনসেং উৎপাদনের বিস্তার এবং বিপ্লব ঘটিয়েছেন । ড. পেক কি ইউপ এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশে এই প্রথম বারের মত জিনসেং মূলের উৎপাদন শুরু করেছেন ড. সোহায়েল।
জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত জিনসেং মুল খুব সহজেই বায়োরিয়্যাকটরের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য উক্ত ল্যাবে প্লান্ট বায়োরিয়্যাকটর চালু করা হয়েছে।
জিনসেং এর স্বাস্থ্যগত উপকারীতা সম্পর্কে ড. সোহায়েল বলেন, জিনসেং এ রয়েছে স্যাপোনিন এবং জিনসেনোসাইডস। কোরিয়ান জিনসেং এ রয়েছে প্রায় ৩০ প্রকারের জিনসেনোসাইডস। এছাড়াও এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, নাইট্রোজেন যুক্ত যৌগ, ফ্যাট-দ্রবীভূতকারী পদার্থ, মিনারেলস প্রভৃতি। জিনসেং এ আরও রয়েছে ফেনলিক যৌগ যার রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ, পলিঅ্যাসিটিলিন যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে ভূমিকা রাখে। জিনসেং স্নায়ুতন্ত্রের উপর সরাসরি কাজ করে যেমন- মানসিক ক্ষমতা, মনযোগ, স্মৃতিশক্তি, কথা শোনার সাথে সাথে বুঝতে পারার ক্ষমতা, কল্পনা শক্তি, শেখার ক্ষমতা, বিচার বুদ্ধি, চিন্তা শক্তি ও সমস্যা সমাধান করে কোন একটা সিদ্ধান্তে পৌছানোর ক্ষমতা ইত্যাদি বৃদ্ধি করে । জিনসেং টাইপ ২ ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টে কার্যকরী বলে প্রমাণিত। বর্তমানে ঔষধের পাশাপাশি প্রসাধন এবং খাদ্য শিল্পে জিনসেং বহুল ব্যবহৃত।
ড. সোহায়েল মনে করেন বাংলাদেশে জিনসেং মাটিতে চাষ অসম্ভব হলেও জীব প্রযুক্তির মাধ্যমে এর উৎপাদন, উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিকীকরণ সম্ভব। বর্তমানে কোরিয়ান জিনসেং এ দেশের মাটিতেও জন্মানো যায় কিনা এ বিষয়ে গবেষণা চলছে। এর মাধ্যমে সাফল্য অর্জিত হলে অর্থনৈতিক ও কৃষির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ