বইমেলায় রাকিব হাসানের টেলিভিশন সাংবাদিকতা বিষয়ক বই

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮ সময়ঃ ১:০৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:১৬ অপরাহ্ণ

রাকিব হাসান। কবিতা, সাইন্স ফিকশন আর মজার মজার গল্প দিয়েই ছোটবেলা থেকে তার লেখালিখির জগতে হাতেখড়ি। সেই থেকে মনের অগোচরে একটু একটু করে ভালবাসার জন্ম হয় সাংবাদিকতাকে ঘিরে। পোক্ত হাতের লেখা আর একাডেমিক সাংবাদিকতার শিক্ষা এ দুয়ের চমৎকার মেল বন্ধন ঘটে পেশাগত জীবনে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে। কথায় আছে, সৃজনশীলতাবিহীন সাংবাদিকতা তলাবিহীন ঝুড়ির মতো। কারণ সাংবাদিকতার সাথে লেখার সম্পর্ক অতি নিবিড়। একটি আরেকটির পরিপূরক। তাই স্রষ্টা প্রদত্ত লেখনী ক্ষমতা, প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতার পাঠ ও পেশাগত সাংবাদিকতা; এ ত্রিরত্মের সম্মিলনে অর্জিত অভিজ্ঞতার বহি:প্রকাশ ঘটে ‘সাংবাদিকতা: রিপোর্টিং পরিকল্পনা ও রিপোর্টার’ বইটিতে। সাংবাদিকতা, এক মহান পেশা। এটাকে যদি সেবাশ্রম মনে করা হয় তবে সাংবাদিক একজন সেবক মাত্র। এই ব্রত নিয়েই লেখক ও সাংবাদিক রাকিব হাসান তার সাংবাদিকতা পেশাকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। এ পেশার শক্তিকে পেশি শক্তিতে রূপান্তর করবার হীন মানসিকতা থেকে তিনি নিজেকে সবসময় দূরে রেখে চলেছেন। মানবিকতার মানসিকতা নিয়েই সাংবাদিকতার চারটি জগতেই তিনি কাজ করেছেন। তাই সমস্ত ভালোবাসা এই সাংবাদিকতাকে ঘিরে।

জন্মেছেন ঐতিহাসিক ঐতিহ্যমন্ডিত শহর কুমিল্লায়। প্রয়াত মা রওশন আক্তার বকুল এবং বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাইন উদ্দিন। বাবার চাকুরির সুবাদে ছেলেবেলার পুরোটা সময় কেটেছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আধার বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় এবং স্নাতকোত্তর-এ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একাডেমিক পাঠ শেষে সাংবাদিকতার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ রিপোটিং এ কেটে গেল তেরো বছর। রেডিও, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়া- সাংবাদিকতার এ চারটি প্লাটফর্মে বিচরণ করার সুযোগ হয়েছে তার।

শুরুর দুই বছর কেটেছে বাংলাদেশ বেতারে। সে স্বপ্নীল পথ বিস্তৃত হয়েছে দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ এর হাত ধরে। এরপর অনলাইন নিউজ পোর্টাল শীর্ষ নিউজ ডট কমে অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের জটিল সমীকরণের হাতে খড়ি। রাজনৈতিক বিটে কিছুটা পোক্ত হবার পর একুশে টেলিভিশনে যাত্রা শুরু। কোর্ট বিটে ৫ বছরের সফল যাত্রা শেষে সুযোগ আসে ক্রাইম বিটে। এই বিটে একের পর এক অনুসন্ধানী সিরিজ রিপোর্ট দিয়ে নিজেকে প্রমাণের পর দায়িত্ব পান ক্রাইমের অনুসন্ধানী প্রোগ্রাম ‘একুশের চোখে’। এই প্রোগ্রামের সাথে দীর্ঘ যাত্রায় যে অভিজ্ঞতা তা সাংবাদিকতার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রতিক্ষণ ডট কমের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে আত্মপ্রকাশ বছর পাঁচেক আগে থেকে। এছাড়া অনলাইন পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এসোসিয়েশন’ এর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। গণমাধ্যমের স্বরূপ বুঝতে কেটেছে দীর্ঘসময়। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার রিসোর্স পার্সন হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন নবীন সাংবাদিকদের।

নিজের লেখা ‘টেলিভিশন সাংবাদিকতা: রিপোর্টিং পরিকল্পনা ও রিপোর্টার’ বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন,“টেলিভিশন সাংবাদিকতা নিয়ে বাংলায় যে কয়টা বই আছে তাতে শুধুই তত্ত্বীয় আলোচনা; প্র্যাকটিক্যাল দিকগুলো নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। যে কারণে থিওরিটিক্যাল ও প্র্যাকটিক্যাল সাংবাদিকতার মধ্যে যোজন-যোজন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যথাযথভাবে সংযোগটি না হওয়াতে পরবর্তীতে অনেক সময় নিয়ে ফিল্ডে কাজ করে বিষয়গুলো আয়ত্ত্ব করতে হচ্ছে নবীন রিপোর্টারদের। যে সময়টিতে ফিল্ডে গিয়ে এক্সক্লুসিভ সংবাদ বের করে আনার কথা ছিলো, সে সময়টাতে তাকে থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যালের মধ্যে সংযোগ ঘটানোতে মনোনিবেশ করতে হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত নতুনদের মধ্যে জন্ম নেয়া ক্ষোভ ও হতাশার সংমিশ্রণের যে বিরল অভিজ্ঞতা; তা নিয়েই প্রতিকূল পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর সংগ্রামে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। মূলত সেই দূরত্বকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ‘টেলিভিশন সাংবাদিকতা: রিপোটিং পরিকল্পনা ও রিপোর্টার’ বইটিতে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক সাংবাদিকতার মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়েছে।
বাস্তবে কীভাবে টেলিভিশন রিপোর্ট করতে হয়, স্ক্রিপ্ট কীভাবে লিখতে হয়; লিংক, ভয়েজওভার, ভক্সপপ, সিংক, পিটিসির মাধ্যমে কীভাবে একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হয়; তার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে প্রতিটি প্যাকেজ প্রতিবেদনে ব্যবহৃত আপসাউন্ড, এমব্রিয়্যান্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে একটি রিপোর্টের আবেদনকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়; সেসব কৌশলও উঠে এসেছে। এছাড়া লাইভ, এজলাইভ ও ফোনোলাইভ-এ রিপোর্টারের উপস্থাপন কৌশল ছাড়াও দেশের চলমান রাজনীতি, অর্থনীতি, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি, কোর্ট, ক্রাইম ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির নানা দিক এবং ফিল্ডে এসব রিপোর্ট করতে গিয়ে কীভাবে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়; তা তুলে ধরা হয়েছে একজন রিপোর্টারের বাস্তব অভিজ্ঞতার ও ঘটনা প্রবাহের ভেতর দিয়ে।
মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকতা শিক্ষার পর; বাস্তবে এ পেশায় ১৩ বছর ফিল্ডে কাজের যে অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ ঘটেছে; তা থেকে এ বইটি লেখার বিশেষ তাগিদ অনুভব করেছি। তাই আশা নয়, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে এই চ্যালেঞ্জিং পেশায় পথ চলতে আগ্রহী ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের জন্য এই বইটি বিশেষভাবে সহায়ক হবে”।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
20G