WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

বিদ্রোহী না প্রেমিক নজরুল ? বিদ্রোহী না প্রেমিক নজরুল ?

বিদ্রোহী না প্রেমিক নজরুল ?

প্রকাশঃ মে ২৫, ২০১৬ সময়ঃ ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪৯ অপরাহ্ণ


naz 2কবি নজরুলের গান ও কবিতায় বিদ্রোহ ও প্রেমের দ্বৈত চিত্রকল্প একইসাথে মূর্ত হয়ে উঠেছে। বিদ্রোহের অনলে পুড়লেও শাশ্বত প্রেমের আহ্বানকেও কবি ‘না’ বলেননি। তিনি যেমন রণতরীতে যাত্রা করেছেন- তেমনি প্রেমের সাগরেও ভেলা ভাসিয়েছেন। তাঁর গান, কবিতা, গজলে-এ দ্বৈত চেতনাই স্ফুরিত হয়েছে। বিদ্রোহী প্রেমিক এ কথাটি তাই সম্ভবত নজরুলের ক্ষেত্রেই শতভাগ সত্য।
বিদ্রোহের অগ্নিদ্রোহ থেকে কিভাবে প্রেমের মধুর রস নি:সৃত হয়ে প্রকৃতিকেও প্রেমময় করে তোলে তাঁর বিরল দৃষ্টান্ত নজরুল। বিদ্রোহের বিষবাষ্প নজরুলকে স্ফুলিঙ্গের মত জ্বলে উঠালেও তাঁর প্রেমিক সত্তাকে তা বধ করতে পারেনি। বরং প্রেমের শাশ্বত সুধা পান করে তিনি পুন: পুন: শক্তিতে বলীয়ান হয়ে বিদ্রোহের আগ্নেয়গিরিতে আত্মাহুতি দিয়েছেন।

বলা যায় প্রেম ও বিদ্রোহের বৈপরিত্যপূর্ণ অথচ সমান্তরাল পথই নজরুলকে দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব। তাঁর কবিতা ও গানে তাই আমরা একইসাথে পাই প্রেমিক ও বিদ্রোহী সত্তাকে।

‘বিদ্রো হী’ কবিতায় আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য।’ এ কবিতাতে আমরা চির দুর্বিনীত, নিশঙ্ক চিত্তের একরোখা, সাহসী নজরুলকে দেখতে পাই। নজরুলের সাথে আমাদের চিত্তও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
আবার নজরুল তাঁর গানে যখন উদাত্ত আহ্বান জানান ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী/ দেব খোঁপায় তারার ফুল’। তখন কবি নজরুল নিতান্তই প্রেমিক হিসেবে ধরা দেন। প্রেমিক নজরুল এখানে তাঁর প্রেমিকাকে প্রকৃতি থেকে উপকরণ নিয়ে সাজাতে চান, হৃদয়ের রাণীর ভালোবাসার স্রোতে ভেসে যেতে চান। নজরুলের উদাত্ত আহ্বান আমাদের কোমল হৃদয়েও ঝড় তোলে, প্রেমের দরজায় কড়া নাড়ায়। একইসাথে দ্রোহ এবং প্রেমকে ধারণ করে এমন স্বত:স্ফূর্ত প্রকাশ কেবল নজরুলের পক্ষেই সম্ভব।
রাজবন্দী হয়ে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নজরুল যখন হুংকার ছাড়েন ‘কারার ঐ লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল কররে লোপাট/ লাথি মার ভাঙরে তালা/ যতসব বন্দীশালার আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা’ এ গানের সাথে আমাদের রক্ত টগবগ করতে থাকে, সমস্ত চৈতন্যে বিদ্রোহ এসে ভর করে। নজরুলের সাথে আমরাও আগ্নেয়গিরির মত জ্বলে উঠি।
এরকম জ্বলে উঠার পরও কবির প্রেমিক সত্তা নিস্তেজ হয় না। কবি সিন্ধুর তরঙ্গের মধ্যে প্রেমের বিরহে ‘চক্রবাকে’ লেখেন ‘এক জ্বালা এক ব্যথা নিয়ে
তুমি কাঁদ,আমি কাঁদি
কাঁদে মোর প্রিয়া’
কবি এখানে তাঁর প্রিয়া হারানোর বেদনা অনুভব করেন। কবির সাথে পাঠকও ব্যথিত হয়। নজরুলের মত সেও প্রিয়ার জন্য ব্যথা অনুভব করে। এভাবেই নজরুল তাঁর ভাবকে সঞ্চারিত করেন এটাই তাঁর সার্থকতা।
বিদ্রোহের চরম সীমায় পৌঁছে কবি যখন ঝংকার তোলেন
“মহা প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস
আমি ভেঙে করি সব চুরমার”

naz 5তখন ধ্বংসলীলায় মেতে উঠতে আমরাও উন্মাদ হয়ে উঠি। মূলত এ বিদ্রোহ ভাবই নজরুলকে বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকের কঠোর জীবন যাপনে উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। তিনি বনে যান পুরোদস্তুর সৈনিক।
কিন্তু প্রেমিক সত্তা যখন সৈনিক নজরুলকে পাগলপারা করে তোলে তখন তিনি উর্দি ছেড়ে আবার ডুবে যান গানে-কবিতায়। শুধু কি গানে-কবিতায়, বাস্তবেও। নার্গিসের প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে তিনি লেখেন একের পর একে গান
“বুলবুলি নিরব নার্গিস বনে।
নজরুলের মধ্যে যে তেজ তাঁর গান, আবৃতি, বক্তৃতায় ঝরেছে যে আগুন তা আর কোন কবির বেলায় হয়নি।
সাম্রাজ্যবাদ ভ্রুকুটি অগ্রাহ্য করে তিনি বলতে পারেন
“তোদের চক্ষু যতই রক্ত হবে
মোদের চক্ষু ততই ফুটবে”
নজরুল শুধু ব্রিদ্রোহী প্রেমিকই নন; তিনি মানবতাবাদী, সাম্যবাদীও বটে।

নজরুলের সুপ্রসিদ্ধ গান ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশিতে যাত্রিরা হুঁশিয়ার
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে দিতে হবে অধিকার।”
এ গানে বঞ্চিত জনের প্রতি নজরুলের ভালোবাসা যেমন ঠিকরে পড়ে তেমনি তাদের সাহসী হতেও উদ্দীপ্ত করে।
প্রেম ও বিদ্রোহের এক অপূর্ব মিশেল কবি নজরুল। প্রেম তাঁকে রোমাঞ্চিত করলেও বিদ্রোহের অগ্নিকে অবদমিত করতে পারেনি। বিপ্লবের কবি নজরুল যখন বলেন,
“চল্ চল্ চল্
উর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণী তল
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল্ চল্ চল্ ।

তখন যেন যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়। যুদ্ধের দামামা বেজে উঠে। উদ্দীপনা ও বিপ্লবের গান গেয়ে নজরুল এভাবেই তাঁর চারপাশকেই জাগিয়ে তোলেন।
আবার মধ্যরাতে যখন সমস্ত কলরব থেমে যেত, প্রকৃতি হয়ে যেত নিস্তব্ধ তখন কবি মনের গহীনে ডুবে যেতেন। তিনি ‘স্তব্ধরাতে’ কবিতায় লেখেন-
থেমে গেছে রজনীর গীত কোলাহল
ওরে মোর সাথী আখিঁ জল
এইবার তুই নেমে আয় অতন্দ্র এই নয়ন পাতায়”।
নজরুলের কবি সত্তায় পিতৃস্নেহের আকুলতা এসে যখন ভর করে তখন বিদ্রোহীর স্থলে আমরা দেখি এক শোকাতুর পিতাকে। প্রয়াত শিশুপুত্র বুলবুলের জন্য তাঁর ভালবাসার কমতি ছিল না। তাঁর গজলে বুলবুলের জন্য তাঁর ভালবাসার কমতি ছিল না। তাঁর গজলে বুলবুলের প্রতি ভালবাসা যেন বেদনা হয়ে ঝরত
“বাগিচার বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল।”
“করুণ কেন অরুণ আঁখি লওগো সাকী, লও শরাব”
এখানে নজরুল শুধুই একজন পিতা, পুত্রশোকে যাঁর আঁখি ছলছল করে। নজরুল এ শোককে শক্তিতে পরিণত করে পরক্ষণেই আবার প্রকৃতির প্রেমে ডুব দেন। প্রথম যৌবনের প্রেমের মতই সৃষ্টি করেন রোমাণ্টিক কবিতা
“বিদায় হে মোর বাতায়ন পাশে নিশীত জাগার সাথী
ওগো বন্ধুরা পান্ডুর হয়ে এল বিদায়ের রাতি
গুবাক বৃক্ষের দেহের মতই দীঘল প্রিয়ার কুণ্ঠিত বাণী
গুবাক পত্রের হাওয়া, প্রিয়ার অঙ্গুলির মতই নিবিড়
আদর পাওয়া”।
এখানে একটি সাধারণ গুবাক তরুর সারি(সুপারি বাগান) নজরুলের রোমাণ্টিক কল্পনা শক্তির গুণে হয়ে উঠেছে রহস্যময়ী অপরূপ প্রেমময়ী নারী, কবির নিশীত জাগার সাথী, প্রকৃতির অন্তরালে এখানে কবি কোন এক প্রিয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ গুবাক তরুর রূপকে প্রিয়াই অনুভব করেছেন কবি। সে প্রিয়া স্বপ্নের মধ্যে এসে গোপনে তাঁর তপ্ত ললাটে চুম্বন করে যায়।
নজরুলের কবিতা-গানে প্রেম এবং বিদ্রোহ যেন মুদ্রার এ-পিঠ-ও-পিঠ। তিনি যখন গেযে ওঠেন-

“শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল পরা ছল
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল”।

naz 1তাঁর এ গান চেতনাকে শাণিত করে। বিদ্রোহাতক ভাবকে তুঙ্গে নিয়ে পৌঁছায়। বিদ্রোহ সঞ্চারিত হয় জনে জনে। আর এ অদম্য বিদ্রোহের হোতা নজরুলকে গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে ওঠে ব্রিটিশ পুলিশ। নজরুল গ্রেফতারও হন। কিন্তু বিদ্রোহের যে বীজ তিনি অঙ্কুরিত করেছেন তার দাবানল ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এমনই বিদ্রোহের প্রতীক আমাদের কবি নজরুল। সেই নজরুল বিদ্রোহী সত্তার নিচে চাপা পড়ে থাকেন না বরং প্রেমের বারতা নিয়ে মানুষের হৃদয়ে কোমল ভালোবাসার পরশ ভুলিয়ে যান। তিনি লেখেন-
“মর্মেতর বাণী শুনি তব/ শুধু মুখের ভাষায় কেন
জানিতে চায় ও বুকের ভাষাতে লোভাতুর মন হেন
জানি/ মুখে হবেনা মোদের কোনদিন কানাকানি।
একি শুধু জড় প্রকৃতিকে অভিবাদন জানানো ? এই প্রকৃতির মধ্য দিয়ে উঁকি দিচ্ছে বাংলার শাশ্বত রমণী মূর্তি। প্রকৃতি থেকে সৌন্দর্য চয়ন করে প্রিয়াকে সুন্দর করে তোলার এ প্রয়াস কবির রোমাণ্টিক চেতনারই বহি:প্রকাশ। দোঁলনচাপা ও ছায়ানট কাব্যের প্রকৃতি চেতনা থেকে ‘সিন্ধু হিন্দোল’ ‘চক্রবাক’ গ্রন্থে এ চেতনা স্পষ্টতর।
আবার অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশীও সমভাবে বিদ্রোহের বলিষ্ঠ কণ্ঠ হিসেবে মূর্তমান। সুতরাং প্রেম ও বিদ্রোহের এক অপূর্ব মিশেল কাজী নজরুলকে দিয়েছে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। তাই ১১৭তম জন্মদিনেও কাজী নজরুল ইসলামের উপস্থিতি আমাদের কাছে এত প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল এবং প্রাসঙ্গিক।

রাকিব হাসান
লেখক: সাংবাদিক

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G