WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

বেঁচে যাওয়া ভারতীয় নাগরিকের আট পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে 'গুলশান হামলা' বেঁচে যাওয়া ভারতীয় নাগরিকের আট পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে 'গুলশান হামলা'

বেঁচে যাওয়া ভারতীয় নাগরিকের আট পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে ‘গুলশান হামলা’

প্রকাশঃ আগস্ট ১২, ২০১৬ সময়ঃ ৩:৫৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৪৭ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ভারতীয় নাগরিক সত্য প্রকাশ। ছবি : বাংলা ট্রিবিউন
গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ভারতীয় নাগরিক সত্য প্রকাশ। ছবি : বাংলা ট্রিবিউন

গুলশান হামলায় বেঁচে যাওয়া যেসব ব্যক্তি পুলিশ ও আদালতের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ভারতীয় নাগরিক সাত প্রকাশ। আদালতে সাক্ষী হিসেবে গত ২৬ জুলাই ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি ওই রাতের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। তবে জানা যায়, এই জবানবন্দি ছিল আট পৃষ্ঠায় ইংরেজিতে লিখিত। তবে একটি লাইন আছে বাংলায়। জবানবন্দির কপি সংগ্রহে আছে।

জবানবন্দিতে সাত প্রকাশ বলেছেন, “দিনটি ছিল শুক্রবার। আমি হলি আর্টিজান বেকারিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেখানে আমি আমার গাড়ি নিয়ে যাই। আমার গাড়ি সেখানে পার্কিং করি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমি ভেতরেই ছিলাম। আমি সামনের দিকে মুখ করা কোনার দিকের টেবিলে বসি। এ সময় তন্ময় নামে আমার এক বন্ধুকে ফোন করি। সে আমাকে জানায়, খাবার মিস করতে চায় না; কিন্তু তার আসতে দেরি হবে। আমি পাস্তা ও কমলার জুস অর্ডার দেই। তারা আমাকে কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে পাউরুটি ও সসেজ দিল। আমি আমার বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ আমি দু-তিনজন ছেলেকে দেখতে পাই। তারা ধাক্কাধাক্কি করে রেস্টুরেন্টের প্রধান গেট দিয়ে ঢুকছিল। এমন সময় একটা শব্দ শুনতে পেলাম, যা আমার কাছে বোমার শব্দের মতো মনে হলো। হঠাৎ ছয়-সাতজন রেস্টুরেন্টের দিকে দৌড়ে এলেন। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। স্থবির হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। একজনকে পড়ে যেতে দেখলাম। একই সময়ে আমি ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি একটি পিলারের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় মুখে হাত দিয়ে দৌড়াতে দেখি। তাকে দেখতে চীন, জাপান বা কোরিয়ার মতো দূর প্রাচ্যের দেশগুলোর নাগরিকের মতো মনে হচ্ছিল। আমি সম্ভাব্য ঝামেলার আশঙ্কায় ওই জায়গা থেকে সরে যাওয়ার কথা চিন্তা করলাম। সেখানে এক শ্রীলঙ্কান দম্পতিও ছিলেন, যাঁদের আমি আগে থেকেই চিনতাম। তাঁরাও ওই পিলারের পেছনে লুকাতে আসেন। জানালা দিয়ে এক হামলাকারীকে উদ্ধত অবস্থায় দেখলাম। সে ধারালো বস্তু দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা একজনকে কোপাচ্ছিল। আমি চোখ খুললাম। কিছুক্ষণ পর দেখতে পেলাম, ওই দম্পতির দিকে এক হামলাকারী এগিয়ে এলো। সে বলল, লুকাবেন না, আমরা আপনার ক্ষতি করব না। আপনারা ওখানে (পিলারের আড়ালে) নিরাপদ নন। দ্রুত বেরিয়ে আসুন। নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বেরিয়ে এলাম। একজন আমাদের কাছে মোবাইল চাইল। আমি তাকে মোবাইলটা দিয়ে দিলাম। শ্রীলঙ্কান দম্পতি (নারী) ব্যাগ ছুড়ে দিল, সেটি গিয়ে হামলাকারীর কাছে পড়ল। হামলাকারী জানতে চাইল আমি বাঙালি কি না? আমি বললাম, ‘ইয়েস আমি বাঙালি’ (অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরাও সামান্য বাংলা বলতে পারত এবং বাংলায় বেশির ভাগ কথাই বুঝত)। হামলাকারীরা তাদের বাংলায় শুয়ে পড়তে বলল। আমি শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ওই শ্রীলঙ্কান দম্পতি তখনো দাঁড়িয়েছিলেন। তখন বন্দুকধারী ওই হামলাকারী আমাকে ভেতরে চলে যেতে বলল এবং আমাকে বাংলাদেশি অন্য লোকজনের সঙ্গে বসতে বলল। তারা আমাকে টেবিলে মাথা রেখে চেয়ারে বসতে বাধ্য করল। টেবিলের নিচে দুটি মেয়ে লুকিয়েছিল। হামলাকারীরা তাদের বেরিয়ে এসে আমার পাশে বসতে বলল।”

আমি পুরোপুরি আমার মাথা টেবিলে ঠেকিয়ে রাখতে পারছিলাম না, তখন কেউ আমার মাথায় আঘাত করে। ওই মেয়েরা ও এক যুবক হামলাকারীর কাছে অনুরোধ করছিল তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য। হামলাকারী জবাব দেয়, ‘আমাদের বিবেচনায় আপনারা যদি কাফের না হন, তাহলে আমরা আপনাদের কোনো ক্ষতি করব না’। তারা বলে যে যারা কাফের নয় সেসব মানুষের কোনো ক্ষতি তারা করবে না।

হামলাকারীদের একজন ইংরেজিতে বলল, ‘আপনারা কি জানেন, কিভাবে আমাদের মুসলিম ভাই ও বোনেরা সিরিয়ায় নির্যাতিত ও হত্যার শিকার হচ্ছেন। তারা ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় কথা বলছিল। আমি এক হামলাকারীর সঙ্গে ইসলাম নিয়ে এক যুবককে কথা বলতে শুনি (পরে আমি ওই যুবকের নাম জেনেছি তাহমিদ)। তাঁরা আমাদের মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করতে বলেন। আমি নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে ফেলি। একজন হামলাকারী আমার কাছে জানতে চায় মিডিয়ার কিংবা পুলিশের কাউকে আমি চিনি কি না। আমি জবাব দিই ‘না’। এ কথা শুনে এক মেয়ে তার মাকে ফোন করে লাউড স্পিকারে কথা বলে। সে তার মাকে বলে, আম্মা তাড়াতাড়ি বেনজীর আঙ্কেলকে বলো, আমি এখানে (গুলশান) আটকে আছি। মেয়েটির মা তখনো ওই ঘটনা সম্পর্কে জানতেন না। এরপর আরেকটি ফোন বেজে ওঠে। আমার সামনে বসা এক ব্যক্তি লাউড স্পিকারে কথা বলেন। (পরে আমি জেনেছি তিনি হাসনাত)। ফোনে বলা কথাগুলো আমি মনে করতে পারছি না। এরপর তারা আমাদের পানি ও মাফিন খেতে দেয়। তারা আমাদের বাথরুম ব্যবহারও করতে দেয়। বাথরুমে যাওয়ার সময় আমি দেখি, সিঁড়ির গোড়ায় এক নারী পড়ে আছেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজের মুখ ঢেকে ফেলি। কিছু সময় পর আমি শুনতে পাই হামলাকারীরা রেস্তোরাঁর এক কর্মচারীকে বলছে, রান্নাঘরে যারা আছে তাদের দরজা খুলে বের হয়ে আসার কথা বলতে। হামলাকারীরা বাংলাদেশিদের হত্যা করবে না বলে ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের আশ্বস্ত করেছিল ওই কর্মচারী। এরপর হামলাকারীরা কয়েকবার চেষ্টার পর কোল্ডরুম খুলতে সমর্থ হয়। ভেতরে দুই ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। দুজনের একজন ছিলেন রেস্তোরাঁর এক কর্মচারী এবং অন্যজন ছিলেন একজন জাপানি। (জাপানি ভাষায় কথা বলছিলেন)। হামলাকারীরা বাংলাদেশিকে অন্যদের সঙ্গে বসতে দেয় এবং জাপানি নাগরিককে গুলি করে। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে যে ওই জাপানি বেঁচে আছেন কি না। জাপানি ব্যক্তি জবাব দেন, ‘হ্যাঁ’। হামলাকারী আবার তাঁকে গুলি করে। গুলি করার আগে তারা আমাদের কানে হাত দিতে এবং শিশুদের চোখ ঢেকে দিতে বলে। একসময় আমি এক নারীর যন্ত্রণার গোঙানির শব্দ শুনতে পাই। কোপাতে থাকা ব্যক্তিটি বলছিল ‘মহিলা মরতেছে না’।

আমি তাদের দেখি, দুটি বড় গ্যাস সিলিন্ডার কাচের দরজার দুই পাশে রাখতে। তারা মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ব্যবহার করেছিল। তারা মোবাইল ফোন থেকে খবর পড়েছিল ও হাসছিল এবং জোরে জোরে বলছিল, ‘তারা আমাদের সন্ত্রাসী বলছিল, এখন আমাদের জঙ্গি বলছে। আগামীকাল আমাদের কী বলবে তারা জানেই না’। একপর্যায়ে তারা (হামলাকারী) আমাদের বাংলায় একটি বার্তা (মেসেজ) পড়ে শোনায়। তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে এ বার্তা পাঠানো হয়। বার্তাটি অনেক দীর্ঘ ছিল। সবটা আমার মনে নেই। তবে আমার মনে আছে এতে বলা হয়েছে, তারা খুব বড় কাজ করেছে, এ জন্য তাদের ভাইয়েরা তাদের নিয়ে গর্বিত। এরপর তারা সাহরি খেতে দেয়। তাদের সন্দেহ এড়াতে আমি কয়েক কামড় খাই।

সাহরির পর তারা আবারও আমাদের টেবিলে মাথা রাখতে বলে। আমার আবছাভাবে মনে পড়ে, কেউ একজন নির্দেশনা দিচ্ছিল। দুই ব্যক্তি (হামলাকারী) থাকবে ওপরের সিঁড়িতে, দুজন থাকবে সিঁড়ির নিচের দিকে। একজন কিছু একটা করবে, যা আমার মনে পড়ছে না। পরে তারা দুই ব্যক্তিকে তাদের (হামলাকারীদের দিকে) কাছে আসতে বলে। আমি তাদের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখি। কিছু সময় পর তাঁরা ফিরে আসেন এবং আমার সামনে টেবিলে মাথা নিচু করে বসেন। এ সময় আমি একমাত্র হামলাকারীকে চলাফেরা করতে দেখি। আমি দেখি, টাক মাথার ব্যক্তি (হাসনাত) সামনের দরজা খুলছেন। আমি বাকি সবার সঙ্গে উঠে দাঁড়াই এবং তারা আমাদের ছড়িয়ে পড়তে বলে। হঠাৎ আমি দেখি, এক ব্যক্তি (হামলাকারী) তাহমিদকে পবিত্র কোরআন শরিফ দিচ্ছিল। কিন্তু তাহমিদ তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। আমি তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তারা আমাদের ফোন (টেবিলের ওপর রাখা) ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়। আমরা রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করি। এটাই আমার জবানবন্দি। সাত প্রকাশ জানিয়েছেন, তাঁর বয়স ৪৪ বছর এবং তাঁর বাবার নাম বিক্রম সিং।

প্রতিক্ষণ/এডি/এসটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G