আমাদের প্রাণের কবি নজরুল

প্রকাশঃ আগস্ট ২৭, ২০১৭ সময়ঃ ৮:২৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:০৩ অপরাহ্ণ

আমাদের প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। জন্মগ্রহণ করেছেন ২৪ মে ১৮৯৯ সালে এবং মৃত্যুবরণ করেন ২৯ শে অগাস্ট ১৯৭৬ সালে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬–ভাদ্র ১২, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ)। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক; যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য। বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন নজরুল। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ।

বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সবসময় ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই “বিদ্রোহী কবি”, তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।

নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা ছিল মসজিদ-মাদ্রাসায়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে গিয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। তখন তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং শিকল ভাঙার গানের মতো কবিতা; ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। জেলে বন্দী হওয়ার পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী।

এসব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজলের পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা করেন এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন; যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।

মধ্যবয়সে তিনি পিক্‌স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি স্বপরিবারে ঢাকা চলে আসেন। এসময় তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান এবং জাতীয় কবির সম্মানে ভূষিত করা হয়। এই বাংলাদেশেই তিনি জীবনের বাকি সময় কাটান এবং এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী নজরুল ইসলামকে অসম্মান কিংবা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। যদিও এ ধরণের একটি আক্ষেপ আমরা সবসময় শুনে থাকি তাঁর ভক্তদের মুখ থেকে। কিছু মুষ্টিমেয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির মানসিকতা দিয়ে সামগ্রিক নজরুলের মূল্যায়ন করা যায় না। অসংখ্য ভক্তের মনে নজরুল বেঁচে আছেন সকালের সূর্যের মতো, নিশীতের নিশ্চুপ নির্জনতার মতো, ভর দুপুরের উদাসী হাওয়ার মতো, পড়ন্ত বিকেলের গোধূলীর মতো। তাই দিনের আলো কিংবা রাতের আঁধার থেকে নজরুলকে মুছে ফেলা যাবে না। শ্রমিকের মন থেকে নজরুলকে সরিয়ে ফেরা যাবে না। বিদ্রোহী সত্তার আঁচ লাগা বীরের হৃদয় থেকে তাঁকে ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না।

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
20G