WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

টুপি বুনে স্বপ্ন গড়া টুপি বুনে স্বপ্ন গড়া

টুপি বুনে স্বপ্ন গড়া

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১৫, ২০১৫ সময়ঃ ১২:০৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:০৩ অপরাহ্ণ

tupiরংপুরের টুপিরগ্রামগুলো এখন মহাব্যস্ত। কাউনিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের একেকটি পরিবারযেন এখন একেকটি টুপির কারখানা। গ্রামীণ নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি এসব টুপিএখন দেশ ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছে সৌদি , ওমান কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

গোটা এলাকার প্রত্যন্ত জনপদ ঘুরে এমন একটি পরিবার পাওয়া যাবে না, যেপরিবারের কেউ না কেউএ টুপি তৈরির কাজে যুক্ত নেই। এ থেকে প্রতিমাসে অন্তত৫০ লাখ টাকা বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে দেশে।

ঘরে বসে টুপি বানিয়েই নারীরা দ্রুত পাল্টে ফেলছে তাদের ভাগ্য।মাত্র ক’বছর আগেও যে নারীর ঘরে ছিল না চাল-চুলো, টেলিভিশন কিংবা বিনোদন ছিলযাদের কাছে স্বপ্নের মতো, সে নারীই আজ ঘরে ঘরে উপভোগ করছে বিনোদনমূলক নানাঅনুষ্ঠান।

শুধু তাই নয়, ভালভাবে খেয়ে পরে অনেকেই এখন প্রতিমাসে সঞ্চয়ওকরছে ব্যাংকে। ২০০২ সাল। জেলার অতি অভাবী এক উপজেলা কাউনিয়া। তিস্তাবিধৌত এখানকার মানুষের অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। পরিবারে পরিবারে ছিলঝগড়া-অশান্তি।

ফরিদ উদ্দিন ওশাহিদা বেগমের পরিবারের একই অবস্থা। ফরিদ স্থানীয় এক স্কুলের দফতরি। স্ত্রীদুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে সংসার। অভাবের কারণে ব্র্যাকের সহায়তায় শাহিদাতার বাড়ির এক খড়ের ঘরে গড়ে তোলেন ব্র্যাক স্কুল। ওই স্কুলে আসা-যাওয়া করতআসাদ নামের এক ছেলে। আসাদ শাহিদাকে দাদি বলে ডাকত। সে সুবাদে গড়ে ওঠেঘনিষ্ঠতা।

শাহিদা গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি বালিশের কভার, হাতপাখাইত্যাদিতে সুই-সুতা দিয়ে নকশার কাজ করতেন। আসাদ পাশে বসে সেসব দেখত। এক সময়আসাদ ঢাকা চলে যায় এবং নর্থ সাউথ রোডের গালফ্ ফ্যাশন নামের এক তৈরিপোশাকের কারখানায় চাকরি নেয়। ওই গালফ্ ফ্যাশনই মূলত বাংলাদেশের টুপিবাজারজাত করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

সেখানকার এক কর্মকতা একদিনআসাদের কাছে জানতে চান তার এলাকায় এসব টুপি বা হাতের সূচীকর্ম করে এমনমহিলা আছে কি না? আসাদ তাৎক্ষণিক শাহিদাসহ অন্য নারীদের সূচীকর্মের কথাতুলে ধরে। সে সূত্রেই ওই কর্মকর্তাআসাদকেনিয়ে ঐ গ্রামে আসেন এবং টুপির কাজ নিয়ে কথা বলেন শাহিদার সঙ্গে।

শাহিদার কথায় সন্তুষ্ট হয়ে কামাল পরীক্ষামূলকভাবে শাহিদার হাতে কিছু টুপিতৈরির কাজ দিয়ে যান। সেটিই ছিল শাহিদার জীবনে প্রথম টুপির কাজ। শাহিদা তখনতার স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ে এবং ননদ মিলে কিছু টুপি তৈরি করে ঢাকায় পাঠালে তাদেখে সন্তুষ্ট হন গালফ্ ফ্যাশন সংশ্লিষ্টরা এবং তখন একেকটি টুপিরপারিশ্রমিক হিসেবে শাহিদার হাতে তুলে দেন ২২০ টাকা করে। সে থেকেই টুপিরযাত্রা শুরু শাহিদার। ক্রমেই বাড়তে থাকে টুপির পরিমাণ।

শাহিদাও গৃহস্থালিরকাজের পাশাপাশি মেয়েদের পড়াশোনার অবসরে তাদের নিয়ে এবং গ্রামের অন্য যারাকরতে আগ্রহী তাদের দিয়েও কাজ করাতে শুরু করলেন। এভাবে অল্প সময়েই শাহিদারখোর্দ্দ ভুতছাড়াসহ আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে টুপি ও শাহিদার জীবন স্রোতে এগিয়ে যাওয়ার কাহিনী।গ্রামের মানুষের মুখে ছড়িয়ে পড়ে সাহিদার নাম।

পরবর্তীতে এভাবেই ভুতছাড়া, পার্শ্ববর্তী বল্লভবিষু, শিবু, শাহবাজ, বেটুবাড়ি, পূর্বচাঁদঘাট, পশ্চিমচাঁদঘাট, বখসিপাড়াসহ এখন কাউনিয়া উপজেলাই পরিণত হয়েছে টুপিরকারাখানায়। গ্রাম্য নারীরা কমবেশি সকলেই এখন তাদের প্রতিদিনের কাজের পাশপাশিঘরে বসে তৈরি করছেন টুপি।
রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে কাউনিয়ার বেইলি ব্রিজ পার হতেই হাতের বামেআঁকা বাঁকা সরু পথ পেরিয়েই শাহিদার খোর্দ্দ ভুতছাড়া গ্রাম।

বেলা আনুমানিক১২টায় আচমকা শাহিদার বাড়ির গেটে পা রাখতেই দেখা গেল বাইরে গাছের ছায়ায়বেঞ্চে বসে টুপির নকশা তৈরির কাজে মগ্ন বিভিন্ন বয়সী চার নারী। কথা বলেজানা গেল, তাদেরই একজন শাহিদার মেয়ে ফরিদা পারভীন।

বাসায় ঢুকতেই দেখা গেলবাড়ির আঙ্গিনায় তৈরি করে রাখা টুপিগুলো গোছানোর কাজে ব্যস্ত শাহিদা। শাহিদাজানালেন, তার জীবনযুদ্ধ আর ভাগ্য পরিবর্তনের কাহিনী। ‘৮৭ সালে বিয়ে হয়ফরিদ উদ্দিন ম-লের সঙ্গে। স্বামী তখন সামান্য এক দিনমজুর।

ফরিদের বাসায়থাকার উপযোগী একটি ঘরও ছিল না। ছনের একটা ভাঙ্গা ঘর, মাথার ওপর টিন ছিল না।বৃষ্টি এলে পলিথিন জড়িয়ে কোন রকমে দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতে হতো। লাজ লজ্জাছেড়ে অকপটেই বললেন, ‘ভাত খাবার পারি নাই, চালের বদলে অন্যের বাড়ি থাকি খুদআনি তা খায়া ছেলে মেয়ে নিয়া বাঁচছি।

কষ্ট হয় মেয়ে যখন বৃত্তি পরীক্ষা দিতেযায়, তখন মানুষের বাড়ি থাকি ভাত আনি খোয়াইছি’। অনেকটা গর্ব করে বললেন, এখনতার ৪৫ হাত লম্বা টিনের ঘর রয়েছে, ১১ হাত রান্নাঘর আর কালার টিভি, স্টিলআলমিরা, শোকেজ, ভিসিপি সবকিছুই আছে। তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে ফরিদাপারভীনকে বিয়ে দিয়েছেন বুয়েট থেকে পাস করা প্রকৌশলীর সঙ্গে। ছোট মেয়েরংপুরে বাংলায় মাস্টার্র্সে আর ছেলে অনার্সে পড়ছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে টুপিরকাজ করে। শাহিদা জানালেন, সততা ধৈর্যশীলতাই তাকে এ অবস্থানে এনেছে।

উপজেলাসদরে ৪২ শতক জমি কিনেছেন। তিনি জানান, একেকটি টুপিতে সুই সুতার কাজেপ্রতিদিন তিন চার ঘণ্টার বেশি সময় দেয়া যায় না। প্রতিদিন এ পরিমাণ সময়দিলেও একেকটি টুপি করতে সময় লেগে যায় ৮ থেকে ১০ দিন। অর্থাৎ এক নারী মাসে ৫থেকে ৮ টি করে থাকেন। এ জন্য একেকটি টুপিতে তাদের পারিশ্রমিক দেয়া হয়আড়াইশ’ থেকে সাড়ে তিন শ’ টাকা পর্যন্ত।

আর এ টুপিই সৌদি ওমান কিংবা কাতারেবিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশী টাকায় ৬শ’ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। শাহিদা এখন আরনিজে এ কাজ করেন না। এ গ্রাম সে গ্রাম ঘুরে নারীদের দিয়ে করিয়ে নেন তিনি।এজন্য কারিগরের পারিশ্রমিক ছাড়াও প্রতি টুপিতে তাকে কমিশন দেয়া হয় ৫০ টাকাকরে। এভাবে মাসে এখন তার আয় হয় ২৮ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।প্রতিমাসে ব্যাংকেওসঞ্চয় করছেন তিনি। তার ভাষায় স্বামী সন্তানদের নিয়ে ভাল আছেন তিনি।
বর্তমানঅবস্থা ॥

শাহিদার এই টুপি বিপ্লবের পর এখন কাউনিয়া উপজেলাজুড়েই তৈরি হচ্ছেটুপি। বর্তমানে ঢাকা, ফেনী, ছাগলনাইয়া থেকে লোক এসে টুপির কাপড়, সুতা দিয়েএবং কোন্ ডিজাইনের কতগুলো হবে বুঝিয়ে দিয়ে যায়। ঈদকে ঘিরে প্রতিবছরই তারাঅন্তত ছয় মাস আগে থেকে যোগাযোগ ও অর্ডার দিয়ে যায়। জানা গেছে, কাউনিয়ায় এখনস্থানীয়ভাবে অনেক দালাল-ফড়িয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যারা ঢাকাসহ বাইরেরপার্টিদের কাছে চুক্তি নিয়ে নারীদের দিয়ে কাজ করিয়ে সেখানে সরবরাহ করছেন।

পূর্বচাঁদঘাট গ্রামের টুপি কারিগর রোশনা, সামসুন্নাহার, ইসমাতআরা জানালেন, এখন গ্রামে অনেক দালাল গজিয়েছে। যারা তাদের কাছ থেকে কাজ করিয়ে নিলেও সঠিকমূল্য দেয় না। এ অঞ্চলের কেউ যদিতা শুরু করে তবে তারা এ পশ্চাদপদ নারীদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য দেবে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G