WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

রামসাগরে এক দিন রামসাগরে এক দিন

রামসাগরে এক দিন

প্রকাশঃ অক্টোবর ২৫, ২০১৫ সময়ঃ ৮:১৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:১৮ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

ramsagar0রামসাগর নাম শুনে অনেকে সাগর ভেবে ভুল করতে পারেন। নাম রামসাগর হলেও রামসাগর কিন্তু সাগর নয়, এমনকি এটা বাংলাদেশের কোনো নদীও নয়। তবে নদী বা সাগর না হলেও পাঠকদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। রামসাগর হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দিঘি এবং সবচেয়ে ছোট জাতীয় উদ্যান।

রামসাগর জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। এটি দিনাজপুর সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে রামসাগর দিঘিকে ঘিরে অবস্থিত। ১৯৬০ সালে রামসাগর বাংলাদেশের বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আনা হয়। ১৯৯৫-৯৬ সালে রামসাগরকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয় এবং ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল একে জাতীয় উদ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

কিছু তথ্য

রামসাগর মানুষের খনন করা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দিঘি। পাড়সহ রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার, দিঘির দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। রামসাগর দিঘির গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। দিঘির পশ্চিম পাড়ে মধ্যখানে একটি সুবিশাল ও মনোরম ঘাট ছিল যার কিছু অবশিষ্ট এখনো রয়েছে। বিভিন্ন আকৃতির বেলেপাথর দ্বারা নির্মিত ঘাটটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ৪৫.৮ মিটার ও ১৮.৩ মিটার।

দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ রামসাগর দিঘি খনন করেন। রামনাথ ছিলেন দিনাজপুর রাজবংশের শ্রেষ্ঠতম রাজা। তিনি ১৭২২ সাল থেকে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরে রাজত্ব করেন। দিনাজপুর রাজবংশের ইতিহাসের মতে, ১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ সালের মধ্যে অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধের পূর্বে রামসাগর দিঘি খনন করা হয়। বিখ্যাত রামসাগর দিঘি আজও রাজা রামনাথের অন্যতম অতুল্য কীর্তি হয়ে আছে দেশ-বিদেশে।

Ramsagar-bg20140722105920কেন হলো রামসাগর

রামসাগর দিঘি নিয়ে প্রচলিত রয়েছে মজার লোককাহিনী। এই অঞ্চলে প্রাণনাথ নামে এক রাজা ছিলেন। সুশাসক ও প্রজাপ্রিয় রাজা বলে তাঁর দেশজোড়া খ্যাতি ছিল, আর ছিল অফুরন্ত ধনসম্পদ।  তৎকালে দেশজুড়ে নেমে আসে প্রকৃতির নিষ্ঠুর তাণ্ডব। শুরু হয় একটানা অনাবৃষ্টি ও খরা। গোটা মৌসুমে একফোঁটা পানিও পড়ল না আকাশ থেকে। অনাবাদি রইল মাঠ। ফসল বা শস্য পাওয়া গেল না একমুঠো। দেশজুড়ে দেখা দিল প্রচণ্ড খাদ্যাভাব। অনাহারে মরে শত শত মানুষ। জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হলো রাজভাণ্ডার। এতে খাদ্য সমস্যার কিছুটা সমাধান হলেও দেখা দিল পানীয়জলের অভাব। দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি ও খরায় খাল-বিল, দিঘি-নালা শুকিয়ে খাঁ খাঁ। একফোঁটা পানি নেই কোথাও। রাজ্যজুড়ে শুরু হলো পানির জন্য আহাজারি।এমন পরিস্থিতিতে রাজা সিদ্ধান্ত নিলেন এক বিরাট দীঘি খনন করার। শুরু হলো দিঘি খনন। হাজার হাজার শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে খনন করে এক বিশাল দিঘি। কিন্তু এত গভীর করে খনন করা সত্ত্বেও দীঘির বুকে এলো না একফোঁটা পানি। হতাশা ও দুর্ভাবনায় বৃদ্ধ রাজা আহার-নিদ্রা ত্যাগ করলেন। তাঁর মৃত্যুর আশঙ্কায় ঘরে ঘরে শুরু হলো কান্নার রোল।

একদিন রাজা স্বপ্নে দৈববাণী পেলেন, তাঁর একমাত্র পুত্র রামকে দিঘিতে বলি দিলেই পানি উঠবে। রাজার মুখে স্বপ্নাদেশ শুনে সারা রাজ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। কিন্তু রাজপুত্র রামের মনে কোনো বিকার নেই। নিজের প্রাণের বিনিময়ে প্রজাদের জীবন রক্ষা করতে রাজকুমার অবিচল। রাজার নির্দেশক্রমে দিঘির মধ্যস্থলে একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করা হলো। এরপর গ্রামে গ্রামে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে প্রজাদের জানিয়ে দেওয়া হলো, কাল ভোরে দিঘির বুকে পানি উঠবে।

পরদিন ভোর না হতেই রাজবাড়ির সিংহদ্বার খুলে গেল। বেজে উঠল কাড়া-নাকাড়া। হাতির পিঠে চড়ে সাদা কাপড় পরে যুবরাজ যাত্রা শুরু করলেন সেই দিঘির দিকে। যুবরাজ রাম সিঁড়ি ধরে নেমে গেলেন মন্দিরে। সঙ্গে সঙ্গে দিঘির তলদেশ হতে অজস্র ধারায় পানি উঠতে লাগল। চোখের পলকে পানিতে ভরে গেল বিশাল দিঘি। পানিতে ভেসে রইল রাজকুমারের সোনার মুকুট। যুবরাজ রামের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে দিঘির নাম রাখা হলো রামসাগর।

আরো একটা লোককাহিনী শোনা যায়। রাজা রামনাথের দিঘি খনন করার পর পানি না উঠলে রাজা স্বপ্ন দেখেন দিঘিতে কেউ প্রাণ বিসর্জন করলে পানি উঠবে। তখন স্থানীয় রাম নামের এক যুবক দিঘিতে প্রাণ বিসর্জন দিলে রাজার নির্দেশেই সেই যুবকের নামে দিঘির নাম রাখা হয় রামসাগর।

এখানে যা দেখবেন

রামসাগরে স্থির, স্বচ্ছ সাগরের মতো নীল জলরাশি দেখলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। মূল দিঘির চারপাশে জুড়েই রয়েছে প্রশস্ত পাকা রাস্তা। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে 9447000500_f3dd652fc1_bযেতে দিঘির সৌন্দর্য দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য উপভোগ করা সত্যিই বিস্ময়কর। পুরো রামসাগর পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। তবে দর্শনার্থীরা চাইলে ভ্যান বা রিকশা ভাড়া করেও ঘুরতে পারেন, আর সঙ্গে গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই। গাড়িতে বসেই আপনি দিব্যি রামসাগরের সৌন্দর্য দেখতে পারবেন। রামসাগর জাতীয় উদ্যানের পাকা রাস্তার এক পাশে রামসাগর দিঘির নীল স্বচ্ছ টলমলে জলের হাতছানি আর এক পাশে উঁচু উঁচু টিলার নয়নাভিরাম সবুজের সমারোহ। টিলাজুড়ে নানা জাতের গাছগাছালি। গাছগুলোতে পাখিদের আড্ডা আর কলকাকলিতে রামসাগরে সব সময়ই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। শীতকালে রামসাগর দিঘির জলে হাজার হাজার জলজ অতিথি পাখির খুনসুটিতে তৈরি হয় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

রামসাগর জাতীয় উদ্যানে আছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। সেখানে আছে বানর, অজগর আর বেশ কিছু হরিণ। শিশুদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন পশু-পাখির মূর্তি দিয়ে গড়া একটি শিশুপার্ক। আছে সাতটি পিকনিক কর্নার। রামসাগর জাতীয় উদ্যানে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর (১০-১০-১০) ব্যক্তিগত উদ্যোগে রামসাগর গ্রন্থাগার নামে আট শতাধিক বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি পাঠাগার।

যেভাবে যাবেন

রামসাগর দিঘির শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশে সারা বছর অগণিত ক্লান্ত মানুষ ছুটে আসেন নাগরিক জীবনে কিছুটা বৈচিত্র্য আর প্রশান্তির আশায়। রামসাগর জাতীয় উদ্যানের যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত ভালো। সড়কপথে অনেক বাস সার্ভিস রয়েছে। ঢাকার কল্যাণপুর থেকে প্রতিদিনই দিনাজপুরের উদ্দেশে বাস যায়। তা ছাড়া বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে সহজেই চলে আসা যায় দিনাজপুরে। দিনাজপুর শহর থেকে অটোরিকশায় ৩০-৪০ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যায় রামসাগর জাতীয় উদ্যানে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G