গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২, ২০১৫ সময়ঃ ৯:৪৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৪৮ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

Rose-gardeগোলাপ ফুলকে ফুলের রাণী বলা হয়। রঙ, গন্ধ ও সৌন্দর্যের জন্য গোলাপ ফুল সবার কাছেই প্রিয়। যার কারণে বাংলাদেশে এই ফুলের চাহিদাও অনেক বেশি।বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে বহুজমিতে গোলাপের চাষ হচ্ছে। এছাড়া দিন দিন গোলাপের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গোলাপ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাহলে চলুন জেনে নেই গোলাপ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে।

জাত সমূহ: আমাদের দেশে নানান রঙ ও জাতের গোলাপ ফুল চাষ করা হয়ে থাকে। জাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গোলাপ সাদা, লাল, হলুদ, কমলা, গোলাপি এবং মিশ্রিত রঙের হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও রানি এলিজাবেথ (গোলাপি), ব্ল্যাক প্রিন্স (কালো), ইরানি (গোলাপি), মিরিন্ডা (লাল), দুই রঙা ফুল আইক্যাচার চাষ করা হয়।

বংশবিস্তার: কাটিং, গুটিকলম ও ‘টি’ বাডিং এর মাধ্যমে গোলাপের বংশবিস্তার করা হয়। কাটিং ও গুটি কলম জুলাই-আগস্ট মাসে

রোজ এবং ‘টি’ বাডিং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে শেষ করতে হয়।

জমি তৈরি: ১. সাধারণত চারা রোপণের ২-৩ সপ্তাহ আগে জমিকে গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে ও সমান করে নিতে হবে।

২. এরপর জমিতে ১.২ মিটার চওড়া ও পরিমাণমত লম্বা উঁচু বেড তৈরি করে নিতে হবে।
৩. দু’টি বেডের মাঝখানে পানি নিকাশ ও সেচের জন্য নালা তৈরি করতে হবে।
৪. বেডে গাছ লাগানোর জন্য এক মিটার গভীর এবং ৬০ সে.মি. চওড়া গর্ত করতে হবে।
৫. গর্ত করার সময় ২০ সে.মি. গভীর উপরের মাটি আলাদা করে রেখে বাকি মাটির সাথে ১০ কেজি কম্পোস্ট, আধা কেজি খৈল ও একমুঠো হাড়ের গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে।
৬. বাকি উপরের মাটির সাথে প্রয়োজনমত গোবর মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে নিতে হবে।
৭. বড় জাতের গোলাপের জন্য বেশি গোবর সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। বড় জাতের গোলাপের জন্য এক গর্ত থেকে অন্য গর্তের দূরত্ব ৬০ সে.মি. এবং ছোট জাতের জন্য ৩০ সে.মি. দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

চারা রোপণ: ১. নতুন চারা না লাগিয়ে এক বছর পুরানো চারা লাগানো উচিত।
২. গর্তের মধ্যে চারা সোজাভাবে লাগাতে হবে।
৩. চারার শেকড় মাটি দিয়ে সম্পূর্ণgolap- ঢেকে দিতে হবে।
৪. জোড় কলমের মাধ্যমে তৈরি চারার জোড়ের জায়গাটি মাটি থেকে অন্তত ৩-৪ সে.মি. উপরে রাখতে হবে।

সার প্রয়োগ: কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে গোলাপ ফুলের গাছে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।

তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে।

এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

সেচ: ১. চারা রোপণের পর, চারার গোড়ায় প্রাথমিক অবস্থায় ঘন ঘন পানি দিতে হবে।roses-
২. চারা মাটিতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নতুন ডালপালা ছাড়ার পর খরা মৌসুমে প্রতি ১০ দিন পর পর একবার সেচ দিলেই চলবে।
৩. প্রতিবার পানি সেচের পর গাছের গোড়ার মাটি ঝরঝরে করে দিতে হবে।

পরিচর্যা: ১. চারার জোড়া জায়গাটির নিচের অংশ থেকে অর্থাৎ শিকড় গাছ (Root stock) হতে কোন ডালপালা বের হলে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে দিতে হবে।

২. গাছের প্রথম দিকে বের হওয়া পুষ্পকুঁড়ি ভেঙ্গে দিলে পরবর্তীতে গাছ বড় আকারের ফুল দিবে। ৩. মার্চ-এপ্রিল মাসে পচা গোবর এবং কম্পোস্টের মালচ গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
৪. বয়স্ক ডালে ফুল ভালো হয় না। তাই সাধারণত অক্টেবর-নভেম্বর মাসে গোলাপ গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে। ছাঁটাইয়ের সময় মরা ডাল, রোগাক্রান্ত ডালপালা ইত্যাদি ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।
৫. গাছের বৃদ্ধির উপর নজর রেখে গোলাপ গাছে How-to-Prunহালকা, মধ্যম এবং ভারী ছাঁটাই করতে হয়। প্রথম বছরে গাছ ছাঁটাইয়ের কোন প্রয়োজন হয় না।
৬. ছাঁটাইকৃত ডাল যেন শুকিয়ে না যায় তার জন্য ডালের সামনে ছত্রাকনাশক ঘন করে গুলে তুলির সাহায্যে লাগিয়ে দিতে হবে।
৭. ডাল পালা ছাঁটাইয়ের পর গোলাপ গাছের গোড়া থেকে ২০ সে.মি. দূরে গোল করে মাটি খুঁড়ে শেকড়কে বের করে দিতে হবে। ৮-১০ দিন এ অবস্থায় রেখে দিলে শেকড়ে বাতাস ও রোদ লাগবে। এতে গাছের গোড়ায় থাকা ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস হবে।

গোলপ উৎপাদনে খরচ: এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গোলাপ ফুল চাষের জন্য প্রায় ১০০০০ টাকার প্রয়োজন হবে।

প্রশিক্ষণ: গোলাপ চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে।রোজ এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও

 উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

বাজার সম্ভাবনা: আমাদের দেশে সারাবছরই গোলাপ ফুলের চাহিদা থাকে। সৌখিন মানুষ তার ঘর সাজানোর জন্য ফুল ব্যবহার
করে। এছাড়া বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন সভা, সমাবেশ অনুষ্ঠানের স্থান ফুল দিয়ে সাজানো হয়ে থাকে। তাই বলতে গেলে সারাবছরই ফুলের চাহিদা থাকে।

আমাদের দেশের প্রায় সব জেলা শহরে ফুলের দোকান দেখা যায়। এসব ফুলের দোকানে ফুল সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব।

এছাড়া গোলাপ ফুল চাষ করে দেশীয় বাজারে বিক্রয়ের পাশাপাশি ফুল বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। রজনীগন্ধা ফুল বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পার।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G