বই কেনা, বই পড়া

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৭, ২০১৬ সময়ঃ ২:০৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:০৬ অপরাহ্ণ

সাদিয়া এইচ. তানহাঃ

1690493_284182001739769_688644473_n

বাঙালি বই কিনতে চায় না। এই অপবাদ বাঙ্গালির চিরকালের সঙ্গী। বাঙালি বিরিয়ানির দোকানে গিয়ে কাচ্চি আর মুরগি-মুসল্লম কেনে কিন্তু বইয়ের দোকানে গেলেই বাঙ্গালির কাছে বইয়ের দামটা বড্ড বেশি মনে হয়। কথাটা অনেকাংশেই সত্যি। বাঙ্গালির পাঠাভ্যাস অন্যান্য জাতির তুলনায় অনেকটাই কম। একথা এমনকি শিক্ষিত বাঙ্গালিদের বেলায়ও সত্য। একে তো বই পড়ার অভ্যাসই বাঙ্গালির কম, তার উপর যদি বই কেনার অভ্যাসের কথা বলা হয় তবে বাঙ্গালির আর মুখ লুকানোর জায়গাই থাকে না। সেজন্যই তো বাংলাদেশের বই প্রকাশকদের নিত্য অভিযোগ, এক বই মেলার বাইরে সারা বছর বইয়ের বিক্রি নাকি হয়ই না।

এতকিছুর পরও বাঙালিদের কয়েকজনের মধ্যে বেশ ভালো রকমের বই কেনার নেশাই রয়েছে। বই পাঠকদের একাংশ যখন এর-ওর কাছ থেকে বই ধার করে বা লাইব্রেরিতে বসে বা হালে পিডিএফ ডাউনলোড করে বই পড়ার কাজটা চালিয়ে নিচ্ছেন তখন একদল বই প্রেমী শুধু বই পড়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, বরং সেই বইটিকে নিজের করে নিতে চাইছেন। চাইছেন বইটির মাধ্যমে নিজের বইয়ের সংগ্রহশালার সৌন্দর্য বাড়াতে। সেই সকল বই ক্রেতা বইপ্রেমীদের বই কেনার কিছু বিখ্যাত জায়গার খোঁজ-খবর করতেই আজকের এই প্রতিবেদন।

ঢাকা মহানগরীতে বই কেনার সর্বশ্রেষ্ঠ চারটি জায়গা হচ্ছে নীলক্ষেত, বাংলাবাজার ও শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেট ও কাঁটাবন কনকর্ড এম্পোরিয়াম মার্কেট। নীলক্ষেতকে রীতিমতো নতুন ও পুরনো বাংলা ও ইংরেজি বইয়ের খনি বলা যায়। নীলক্ষেত শিক্ষার্থীদের অতি প্রিয় জায়গা কারন এখানে স্বল্পমূল্যে সকল প্রকার পাঠ্যপুস্তক পাওয়া যায়। এছাড়া বাংলা সাহিত্য ও বিশ্বসাহিত্যের বিভিন্ন মননশীল ও সৃজণশীল বই তো এখানে পাওয়া যায়ই। নীলক্ষেত একটা কারণেই কেবল সমালোচিত। আর তা পাইরেটেড বইয়ের বিক্রির কারনে। তবে পাইরেটেড বই বলেই দাম কম হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা বই কেনার জন্য প্রথমেই স্মরণ করে নীলক্ষেতকে। দামাদামি করতে জানলে খুব কম দামে বই মেলে নীলক্ষেতে।

nelkhat1

বাংলা বাজার হচ্ছে বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশনীগুলোর ঘাটি। বাংলা ভাষায় মৌলিক বই প্রকাশ করে থাকে এমন বিখ্যাত প্রকাশনীগুলোর প্রায় সবগুলোই বাংলা বাজারে অবস্থিত। এদের মধ্যে রয়েছে ইত্যাদি, মাওলা ব্রাদার্স, অনুপম প্রকাশনী, জাগৃতি, সন্দেশ, বাতিঘর প্রভৃতি। অর্থ্যাৎ একুশের বই মেলার সময় আমরা যে সব প্রকাশনীগুলিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জড়ো হতে দেখি তাদের মেলাবহির্ভূত আবাসভূমি বাংলা বাজার। এই বাংলা বাজারও বইপ্রেমী পাঠকদের জন্য চমৎকার একটি জায়গা। এখান থেকে পাঠকগণ ডিসকাউন্টসহ বই কিনতে পারেন।

শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট আর কাঁটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়াম মার্কেটও বই প্রেমীদের আরো দুটি অতি প্রিয় জায়গা। বাংলা বাজারে অবস্থিত প্রকাশনীগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র বলা যায় আজিজ সুপার মার্কেট আর কনকর্ড এম্পোরিয়াম মার্কেটকে। বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রকাশনীসমূহ অর্থ্যাৎ মাওলা ব্রাদার্স, প্রথমা, অন্যদিন প্রভৃতি সকল প্রকাশনীর শো রুম এই দুটি মার্কেটেই ভাগাভাগি করে অবস্থান করছে।

এই চারটি জায়গা ছাড়াও বই প্রেমীদের বই কেনার জন্য একটি প্রিয় জায়গা হচ্ছে নিউ মার্কেট। নিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাতে বেশ কটি দোকানতো রয়েছেই, নিউ মার্কেটের ভেতরেও রয়েছে অনেকগুলো বইয়ের দোকান। নিউ মার্কেটের বইয়ের দোকানগুলোতেও ২০% কমিশনে বই পাওয়া যায়।

সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছিলেন, “বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।” কথাটি আসলেই সত্যি। বই কিনে দেউলিয়া হওয়া তো দূরের কথা বরং জ্ঞানরাজ্যের ঐশ্বর্যের সন্ধান পায় মানুষ বইয়ের মাধ্যমে। তাই যেকোন জ্ঞানপিপাসু মানুষই স্বপ্ন দেখে নিজের ঘরে একটি ছোট্ট লাইব্রেরি বানাবার, সেই লাইব্রেরির জ্ঞান সাগরে অবগাহন করার। আর বই কিনে দেউলিয়া হওয়ার ভয় যখন নেইই এবং আমাদের মাসিক খরচ থেকে মাত্র দুশো-একশ টাকা বাঁচিয়েই যখন আমরা বই কিনতে পারি তখন বই কিনতে বাঁধাটা কোথায়? তাই আসুন, আমরা বই কেনার অভ্যাস করি আর শুরু করি জ্ঞানের রাজ্যে পরিভ্রমণ করা।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
20G