বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলা (১ম পর্ব)

প্রকাশঃ জুলাই ৭, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৩৯ অপরাহ্ণ

মুনওয়ার আলম নির্ঝর

latim 1শিশুর মানসিক বিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে খেলাধুলা। কিন্তু এখনকার বাচ্চারা একরকম বলতে গেলে কোন খেলাধুলাই করে না। এর অন্যতম কারণ খেলার মাঠের অভাব। ফলে বাচ্চারা ঝুঁকে পড়ছে ভিডিও গেইম, ফেসবুক আর টিভির উপর। আর হারিয়ে যেতে বসেছে এদেশ থেকে অনেক সুন্দর সুন্দর খেলা যেগুলো এখনও অনেককেই নিয়ে যায় স্মৃতির নৌকায় ভাসিয়ে ছেলেবেলায়।

প্রতিক্ষণের পাঠকদের জন্য থাকছে বাংলার হারিয়ে যাওয়া সেইসব খেলা নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন।

কপাল টিপ খেলাঃ উভয় গ্রুপে সমান সংখ্যক প্লেয়ার নির্দিষ্ট দুরত্বে লাইন ধরে বসে থাকতো এবং মাছ ফুল পাখি ইত্যাদির ছদ্দনাম থাকতো উভয়ের প্লেয়ারের। – দুই দলের খেলোয়াড়রা সামান্য কিছু দূরত্বে লাইন ধরে বসে পড়ে। আর প্রত্যেকের এক একটি নাম থাকে যা বিভিন্ন মাছ, ফুল, পাখির নামে হয়ে থাকে।

একদলের অধিনায়ক গিয়ে আরেকদলের যেকোন একজনকে শক্ত করে পেছন থেকে দুহাত দিয়ে দুচোখ ধরে রাখে। আর নিজের দলের সদস্যকে ডাকে আইরে আমার বোয়াল মাছ কিংবা যে নাম তাকে দেয়া হয়েছে সে নামে। তখন ঐ নামের খেলোয়াড়টি কাছে এসে দুচোখ বাঁধা খেলোয়াড়ের কপালে চিমটি বা টুকা দিয়ে আসে। পরে চোখ ছেড়ে কে চিমটি দিয়েছে তার নাম বলার জন্য পাঠানো হয়। যদি সঠিক বলতে পারে তাহলে সে নিজে যতদূর সম্ভব জোরে সামনের দিকে একটা লাফ দেবে। আর যদি বলতে না পারে তাহলে যে চিমটি দিয়েছিল সে লাফ দেবে।

গোল্লাছুটঃ টসের মতো টস করা হয় যাকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ছিটফট। একটি পাতা বা কাগজের এক সাইটে মুখের ভেতর থেকে থুথু (ছেফ) দিয়ে বলা হয় ছেফ না লেফ। এক প চায় ছেফ অপর প চায় লেফ। টসে জিতে সে প্রথমে পায় গোল্লার স্থান। অপর পা ফিল্ডিং করার জন্য মাঠের সুবিধাজনক স্থানে নেয় শক্ত অবস্থান। চিহ্নিত একটি স্থান বা গর্তকেই নির্ধারণ করা হয় গোল্লার স্থান। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দলিয় অধিনায়কের হাত ধরে এক এক করে পরস্পরের হাত ধরে ধরে লম্বা হয়ে গোল্লার চারদিকে সকলেই ঘুরতে থাকে। এবং বলে গুল্লা ঘুর ঘুর ছুড়ানি, হাত বেটি পিরানী অথবা গুল্লা ছাঙ্গে না ভাঙ্গে। তখন প্রতিপ হতে ভাঙ্গে বলা হলেই শুরু হয় সুযোগমতো ভাঙ্গনের পালা।

লাটিম : লাটিম বা লাড্ডু বাংলাদেশের অন্যতম একটি গ্রামীণ খেলা| আগে কাঠ মিস্ত্রীরাই গ্রামের কিশোরদেরকে লাটিম বানিয়ে দিতো। তারা সাধারণত পেয়ারা ও গাব গাছের ডাল দিয়ে এই লাটিম তৈরি করতো। নির্বাচিত পাট থেকে লাটিমের জন্য লতি বা ফিতা বানানো হতো।সাধারণত দুই ধরনের লাটিম খেলা হতো। ১। বেল্লাপার এবং ২। ঘরকোপ।

বেল্লাপারে একটি দাগ কেটে সীমানা চিহ্নিত করা হয়। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় নির্ধারণী খেলায় যে লাটিম পরাজিত হয় তাকে ঘর থেকে নিজেদের লাটিম দিয়ে আঘাত করে করে প্রতিযোগীরা সীমানা পার করে দেয়। ঘুর্ণায়মান লাটিম হাতে নিয়েও প্রতিযোগী লাটিমকে আঘাত করা যায়। মাটিতে রাখা লাটিমকে আঘাত করতে ব্যর্থ হলে ঐ লাটিমের স্থানে ব্যর্থ লাটিমকে রাখা হয় এবং তাকে বেল্লা পার করা হয়। শর্ত অনুযায়ী সীমানা পার করা লাটিমকে নিজের লাটিম বা দা দিয়ে কোপ দেওয়া হয়।

ঘরকোপ খেলায় লাটিমের ফিতা ও লাটিম দিয়ে একটি বৃত্ত আঁকার পর বৃত্তের ভিতর বন্দী লাটিমগুলোকে রাখা হয়। বৃত্তের ভিতরের লাটিমগুলিকে বাইরের মুক্ত প্রতিযোগীদের লাটিম দিয়ে আঘাত বা কোপ মেরে ক্ষত করাই এই লাটিম খেলার উদ্দেশ্য।
প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
20G