মুছে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যের নিদর্শন

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫ সময়ঃ ৩:৩২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৩২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

tahirpur11হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন যা কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। অযত্ন আর অবহেলায় মুছে যেতে বসেছে প্রাচীর ঐতিহ্যের নিদর্শন।

জেলার তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারা বাজারে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নির্দশন। প্রাচীন ঐতির্যের নিদর্শন গুলোকে সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ গঠানো সম্ভব খুব সহজে।

জেলার সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ও দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এক কালের প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী যা বর্তমানে হলহলিয়া নামে পরিচিত।

প্রায় ১২০০ বছর পূর্বে স্থাপিত নিদর্শন রাজা বিজয় সিংহের রাজ বাড়ি টি এখন ধংসের পথে। দখল করে নিচ্ছে স্থানীয় জনসাধারন। লাউড় রাজ্যের রাজা বিজয় সিংহের আরেকটি নাম সে সময় কার প্রজাগন দিয়ে ছিল রাক্ষুসে রাজা।

অযত্ন, অবহেলা আর রক্ষানাবেক্ষনের অভাবে প্রাচীন ঐতিয্যের নির্দশনটুকু মুছে যেতে বসেছে। জানা যায়- প্রাচীর লাউড় রাজ্যে প্রচুর ধন-সম্পদে পরিপূর্ন ছিল এক স্বাধীন রাজ্য। পশ্চিমে ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর র্তীর পূর্বে জৈন্তায়া, উত্তরে কামরুপ রাজ্য, সীমান্ত ও দক্ষিনে বর্তমানে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া পর্যন্ত ছিল লাউড় রাজ্যের সীমানা। এ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব মিত্র নামে এক বাক্ষ্মণ। খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে তিনি কৌনজ থেকে ভাগ্য অন্বেষণে এখানে আসেন।

পরে লাউড় রাজ্যের গোবিন্দ সিংহ তা পুনুরুদ্বার করে আবার রাজধানী স্ব-স্থানে পুনঃ স্থাপন করেন। ঐতিহাসিক হান্টারের মতে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগল অধিকারের পর লাউড় প্রথম বারের মতো তার স্বাধীনতা হারায় এবং মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়ে বসবাস করে। লাউড়ের রাজা ছিলেন ক্যাতায়ন গোত্রীয় বাক্ষ্মণ। তাদের উপাধি ছিল সিংহ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে দিব্য সিংহ নামে এক প্রভাবশালী রাজার রাজত্ব কালে বিখ্যাত বৈষব সাধক অদ্বৈতাচারের বাবা কুবের আচার্য দিব্য সিংহের মন্ত্রী ছিলেন।

রাজ বাড়ীর পাশে ছিল রেনুকা নদী যা বর্তমানে যাদুকাটা নদী নামে পরিচিতি লাভ করেছে। চৈত্র মাসে এখানে বারুনী মেলা হয় ঢল নামে পূর্ন্যর্তীথদের। অপর দিকে দিব্য সিংহ লাউড়িয়া কৃষদাস এ নতুন নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনিই তার হাতে র্ধম গুরু অদ্বৈত মহাপ্রভুর জীবনী গন্থ ও বাল্যলীলা সুত্র রচনা করে ছিলেন। কৃষদাস পরে নবদ্বীপে নির্বাসনে চলে যাওয়ায় তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।

রাজ বাড়ি দেখতে আসা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান ভুঁইয়া স্থানীয় বাসিন্দারা জানান- অযত্ন, অবহেলা ও সংস্কার না করার ফলে ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের শেষ নির্দশন টুকু বিলুপ্তির পথে। প্রশাসনের সুর্দৃষ্টি পড়লে লাউড় রাজ্যের রাজধানী হলহলিয়া একটি আকষর্নীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে তাহিরপুরের বুকে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান- লাউড় রাজ্যের হলহলিয়ায় স্থাপিত রাজ বাড়ির শেষ নির্দশন টুকু রক্ষানাবেক্ষনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তাহিরপুর উপজেল পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান- হলহলিয়া লাউড় রাজ্যের রাজ বাড়ি ও তাহিরপুরের অতীত ঐতিহ্য বহনকারী নিদর্শন গুলো রক্ষা করা প্রয়োজন।

প্রতিক্ষণ/এডি/রাইন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G