যেখানে আত্মহত্যা হাতছানি দেয় !

প্রকাশঃ জুলাই ২, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৩৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:

forestsuciides‘আত্মহত্যা করার জন্য দিনটা খুব ভালো। আকাশে পূর্নিমা নেই, নেই ঘুটঘুটে অমাবস্যা। নেই মন আওরানো বাতাস , নেই ওই কালো শালিকটার ডাক । চমৎকার এই দিনটিতে স্লিপিং ট্যাবলেট খেয়ে অনায়াসে ম’রে যেতে পারি, বক্ষে ঢোকানো যায় ঝকঝকে উজ্জ্বল তরবারি, কপাল লক্ষ্য ক’রে টানা যায় অব্যর্থ ট্রিগার, যে-কোনো একটি দিয়ে আত্মহত্যা ক’রে যেতে পারি…..’

জাপানের একটি অদ্ভুত অরণ্যে কবির এই কবিতাটি যেন বাস্তব রুপ লাভ করে।ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে ৩৫ বর্গ কিলোমিটারের একটি জঙ্গল। ঘন  গাছ-গাছালিতে ঘেরা এ স্থানটি সি অব ট্রিজ অথবা গাছের সমুদ্র নামেও পরিচিত। ঘন জঙ্গল আর অদ্ভুত কিছু পাথর ব্যতিত এই স্থানটিতে কোনো মানব প্রাণের অস্তিত্ব নেই।

হনশু দ্বীপে অবস্থিত জাপানের এই বনটিতে যেন আলো-আঁধার আর মৃত্যুর নিবিড় সখ্য। বনটির নাম অওকিগাহারা। অন্য নামও আছে। ঘণ গাছপালার জন্য কেউ বলে ‘বৃক্ষ সাগর’ আবার কেউ বলে ‘শয়তানের বন’। তবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ‘আত্মহত্যার বন’ হিসেবে।

এ বনটি জাপানিদের কাছে আত্মহত্যার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি জায়গা এবং যা পৃথিবীতে প্রথম সারির আত্মহত্যার স্থানগুলোর অন্যতম। জাপানি পুরান মতে, এ বনে প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়ায় । আপনি শুনলে অবাক হবেন যে, বর্তমানে এই বন থেকে প্রতি বছর উদ্ধার করা হয় প্রায় একশ’র বেশি মৃতদেহ।

১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫শ’র মতো জাপানি এখানে আত্মহত্যা করেছেন। কেবল ২০০২ সালেই ৭৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় এখান থেকে যা ১৯৯৮ সালের উদ্ধার করা ৭৪ জন এর বেশি। এরপর ধীরে ধীরে শুধু আত্মহত্যার হার বাড়তেই থাকে। ২০০৩ সালের দিকে আত্মহত্যার হার ১০০ এর বেশি হয়ে যায় এবং তারপর থেকে জাপানি সরকার আত্মহত্যার হার প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

২০০৪ সালে ১০৮ জন লোক এখানে আত্মহত্যা করে, ২০১০ সালে ২৪৭ জন লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করে যার মধ্যে ৫৪ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। এছাড়া মার্চ মাসে সেখানে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়।

২০১১ সালের দিকে যারা আত্মহত্যা করেছে তাদের অধিকাংশ ফাঁসি অথবা বেশি পরিমানে মাদক নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ধারণা করা হয়, ১৯৬০ সালে সাইকো মাটসুমোটো নামক এক জাপানি লেখকের ‘টাওয়ার অফ ওয়েবস’ নামক একটি উপন্যাস প্রকাশের পর থেকেই এখানে এসে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই উপন্যাসের দুটি চরিত্র এই বনে এসে আত্মহত্যা করেছিল। এরপর থেকেই জাপানের দরিদ্র কৃষকরা এখানে এসে এই বিশ্বাসে আত্মহত্যা করে, যাতে করে তাদের বাচ্চারা পরবর্তীতে পেট ভরে খেতে পারে।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
20G