যেখানে পান্তা দিয়েই ইফতার

প্রকাশঃ জুন ২২, ২০১৬ সময়ঃ ২:১২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:১২ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

pramanik99-1460386840-2aad600_xlargeচলছে রমজান মাস। রাজধানীসহ দেশের সকল নগর ও গ্রামের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারই ইফতারের আয়োজন করছে হরেক রকম পদের সমাহারে। এসব সুস্বাদু ও দামী খাবারেই ভঙ্গ হচ্ছে সারাদিনের রোজা। কিন্তু এই বাস্তবতার বাইরেও রয়েছে আরেক পৃথিবী। যেখানে কেবল পান্তাভাত দিয়েই ইফতার সারছে কিছু মানুষ।

বরিশালের প্রত্যন্ত এলাকার রোজাদাররা ইফতারের প্রধান খাবার হিসেবে বেছে নিয়েছে ‘পান্তা ভাত’। তীব্র গরমে খরচবিহীন স্বস্তিদায়ক এ খাবার খেয়েই খুশি এ অঞ্চলের অসচ্ছল পরিবারগুলো। এমনকি মোটামুটি অবস্থাসম্পন্ন অনেকের মধ্যেও এই পান্তাপ্রীতি দেখা গেছে।

পান্তা ভাতকে ইফতারের অন্যতম খাবার হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ জানতে কথা হয় বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একাধিক নারী-পুরুষের সঙ্গে।

বরিশাল সদর উপজেলার চরজাগুয়ার হোগলা গ্রামের আয়নাল আলী। স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান মিলিয়ে তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৭ । তিনি একজন ভ্যান চালক। প্রতিদিন তার আয় ১৫০ থেকে ২০০টাকা। রমজানের ইফতারের বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় তার। তাই রাতে সাহরি খেয়ে অবশিষ্ট ভাত পান্তা করে রাখা হয়। ইফতারের শুরুতেই ওই ভাত খায় তারা। তবে ইফতারিতে ছোলা ও মুড়ির আয়োজনও থাকে বলে জানান আয়নাল আলী।

আয়নাল বলেন, ‘হারাদিন রোজা রাইখ্যা মোগো ইফতারে পান্তা ভাত খাইতে কোন অসুবিধা হয় না’। এইতে শান্তি পাই, আর রাইতে তারাবি নামাজের পর আরামে ঘুমাই’।

চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্ণকাঠী গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা ৩ সন্তানের জননী আছিয়া বেগম আর ডেইজী আক্তার। মাটি কাটা আর দিন মজুরীর কাজ করে বাবার বাড়িতে থেকেই সন্তানদের নিয়ে সংসার চলে তাদের। পুরো রমজান জুড়ে বেকার জীবন কাটে এই দুই নারীর। তাই তারাসহ সংসারের সকল সদস্যই রোজা থাকেন। সারাদিন রোজা থেকে তারা ইফতারে কি খায় এমন প্রশ্ন করা মাত্রই মলিন হলো তাদের মুখ। ‘মোগো অত টাহা নাই, মোরা যা পাই তা দিয়াই রোজা খুলি, বেশিভাগ সময় পান্তা পানি মোগোদারে ভাল লাগে’, বলেন আছিয়া।

ডেইজী আক্তার বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় দোহানে যাইয়া পোলাপানের লইগা কিছু কিনি, কিন্তু ওইয়া কিনলে আর চাউল কিনতে পারমু না, চাউল কিনলে ভোর রাইতে ভাত আর রোজা খোলার সময় মরিচ, লবন দিয়া ডইল্লা পান্তা ভাত খাইতে পারি।’

আয়নাল আলী, আছিয়া বেগম আর ডেইজি আক্তারের পরিবারের মতো বরিশালের গ্রাম এলাকার আনেক গরিব পরিবারের ইফতারের সম্বল পান্তা ভাত।

তবে বরিশালে স্বচ্ছল পরিবারের অনেকেই শখে কিংবা গরমে স্বস্তি পেতে পান্তা ভাত ইফতারের অন্যতম খাবার হিসেবে তালিকায় রাখছেন। বরিশাল নগরীর সদর রোড এলাকার এমনই একজন আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এবারের রোজ শুরু হয়েছে জ্যৈষ্ঠ মাসে। এ মাসে তাপদাহের পাশাপাশি রোজার সময় অনেক দীর্ঘ। তাই রোজা থেকে আমার মতো অনেকেই ক্লান্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় ইফতারে পান্তা ভাতকে স্বস্তিদায়ক খাবার হিসাবে তার পরিবার বেছে নিয়েছে।’

অন্যদিকে ভাজা-পোড়া খাবার পরিহার করে ইফতারে ‘পান্তা ভাত’ খাওয়াকে উত্তম বলছেন স্থানীয় চিকিৎসকরাও। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল কাদের জানান, যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা ইফতারে পান্তা ভাত খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস আক্রান্তরা যদি খেতে চান পরিমাণমতো খাবেন।

তিনি বলেন, ‘পান্তা ভাতে রয়েছে পুষ্টি শর্করা। যা শরীরে শক্তি দেয়। বিশেষ করে গ্রামের ঢেকি ছাটা চালের ভাতে থাকে পুষ্টির পাশাপাশি ডি-১ ভিটামিন।’ তাই ইফতারে পান্তা ভাত একটি উপকারী খাবার বলে মন্তব্য করেন তিনি ।

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ভাস্কার সাহা জানান, ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করে পানি মিশ্রিত খাবার খাওয়া অনেক ভাল। পান্তা ভাত পেটের জন্য স্বস্তি দায়ক এবং শরীরে পানি জোগানের জন্য উপযুক্তও।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G