সভ্য দেশের অসভ্য আইন
ইয়াসীন পাভেল, প্রতিক্ষণ ডট কম:
![বারনাদা গ্যালার্দো যিনি চিলির বেওয়ারিশ মৃত শিশুদের নিয়ে সৎকারের ব্যবস্থা করেন।](https://www.protikhon.com/wp-content/uploads/2015/04/chile_baby_bbc_nocredit.jpg)
একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ নিজেদেরকে সভ্য মনে করে গর্বিত হয়। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে নিজেদেরকে উন্নত ভেবে অহঙ্কার করে। তারা অতীতের পানে তাকায় কৃপা আর অবজ্ঞার দৃষ্টিতে।
যে দূরের চাঁদকে সে এতদিন মনে করত কোন এক বুড়ি সেখানে বটের তলায় বসে চরকায় সূতা কাটে, সে চাঁদের বুকে আজ থেকে বহু দিন আগেই তারা পা ফেলেছে। আজ তাদের রকেট পৌঁছেছে লালগ্রহ মঙ্গলে। তারা স্বপ্ন দেখছে হয়তো আর কিছু দিন পরেই তারা মঙ্গলেও পা রাখবে। শুধু তাই নয়, তারা হয়তো কিছু দিন পর গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়াবে।
আকাশের বিদ্যুৎ আজ তাদের নিয়ন্ত্রণে। তাকে বেঁধে আজ চাকরের মত খাটানো হচ্ছে। পৃথিবীর বুকে তারা গড়েছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। তাদের গর্বের বুক অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে স্ফীত।
আরাম আয়েশ, ভোগ বিলাস করার এমন এমন যন্ত্র আবিস্কার করেছে যে হয়তো কিছু দিন পর তাদেরকে নিজ হাতে আর কোন কাজই করতে হবে না। এত উন্নতির পরও কিন্তু এই মানুষগুলো আনন্দে নেই।প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেলেও কিছু কিছু বিষয়ে এখনো তাদের বর্বরতা আদিম যুগকেও হার মানায়। এমন একটি বর্বরতার বাস্তব উদাহরণ চিলি। সেখানকার
![অরোরা এবং অন্য তিনটি শিশু সমাহিত হয়েছে এখানে](https://www.protikhon.com/wp-content/uploads/2015/04/chile_arora_bbc_nocredit.jpg)
মৃত কোন শিশুকে তার পরিবার দাবি না করলে সেটা মানববর্জ হিসেবে পরিণত হয়। এমনকি কেউ যদি সেই মৃত শিশুকে সৎকারের জন্য এগিয়ে আসে তবে তাকেও পড়তে হয় বিভিন্ন আইনি জটিলতায়।
২০০৩ সাল, এপ্রিলের ৪ তারিখ। পত্রিকার শিরোনামটি ছিল “শিশুটিকে মেরে আবর্জনার স্তূপে ফেলে রাখা হয়েছে”। চিলির দক্ষিণের শহর পুয়ের্তো মন্টে এক আবর্জনার মধ্যে ঐ শিশুর মৃতদেহ পাওয়ার খবরে হতবিহ্বল হয়ে গেলেন গ্যার্লাদো।
সিদ্ধান্ত নিলেন শিশুটিকে পরিপূর্ণ ভাবে সৎকারের ব্যবস্থা করবেন তিনি। কিন্তু কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। গ্যালার্দো, শিশুটির নাম দিলেন অরোরা।
আইনি প্রক্রিয়ায় গ্যালার্দো প্রথমে অরোরাকে দত্তক নেন। তারপরে তাকে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন তিনি। সব আইনি জটিলতা পার হতে গ্যালার্দোর কয়েক মাস লেগে যায়।
অবশেষে সমাহিত করা হয় অরোরাকে। এই ঘটনার ঠিক পরের দিন আরেকটা শিশুর মরদেহ পাওয়া গেল আবর্জনার মধ্যে। যথারীতি গ্যালার্দো তাকেও দাফন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। গত ১২ বছরে গ্যার্লাদো এভাবে চারটি মৃত শিশুকে প্রথমে দত্তক ও পরে সমাহিত করেছেন।
এভাবেই তিনি দেশটির অসভ্য ও অমানবিক আইনটি উপেক্ষা করে বেওয়ারিশ শিশুদের দাফনের ব্যবস্থা করে মনুষ্যত্বের পরিচয় দিয়ে চলেছেন বছরের পর বছর।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল