স্বপ্নীল সৌন্দর্যের আধার রামসাগর দিঘি

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৩, ২০১৫ সময়ঃ ১০:০১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:০১ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

ramsagor 1দিনাজপুর শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে লাল গৈরিক ও স্ফীতিময় খিয়ার মাটির ওপর সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে রামসাগর। চারদিক সুউচ্চ মাটির গড়, মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন দিঘির সুনীল জলরাশি। বিশাল আয়তন এবং নীল জলরাশির জন্যই এ দিঘির নামে সাগর শব্দটি জুড়ে দিয়ে নামকরণ করা হয়েছে রামসাগর।

দিনাজপুরের রাজা রামনাথ রায়ের আমলে এ দিঘিটি খনন করা হয়। দিঘি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রজাদের কর্মসংস্থানের জন্য। এ খননকাজে সে সময় ব্যয় হয় ৩৩ হাজার টাকা । প্রয়োজন হয় ১৫ লাখ শ্রমিকের। রাজা রামনাথের শাসনামলের শেষভাগেই ১৭৫৯ সালে শেষ হয় দিঘি খনন। পরবর্তীতে তার নামানুসারেই এ দিঘির নামকরণ করা হয় রামসাগর।

রামসাগরকে ঘিরে প্রচলিত আছে একটি আবেগঘন উপাখ্যান। কথিত আছে প্রজাদের জলকষ্ট নিবারণের জন্য রাজা এ দিঘি খনন করান। গভীর থেকে গভীরতর খননের পরও পানির দেখা না মেলায় চিন্তিত হয়ে পড়েন রাজা। একদিন রাজা স্বপ্ন দেখেন যুবরাজ রাম যদি আত্ম বলিদানে রাজি হন তাহলেই পানি উঠবে।

স্বপ্ন নিয়ে রাজা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। রাজার শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দৃষ্টিতে পড়ে যুবরাজের। রাজাকে পীড়াপীড়ি করে জানতে পারেন স্বপ্নের কথা।
যুবরাজ রাম জানান, প্রজাবাৎসল্যের চেয়ে পুত্রস্নেহকে বড় করে দেখা উচিত নয়। যুবরাজের অনুরোধে রামসাগরে অর্চনার আয়োজন করা হয়। দিঘির মাঝখানে নির্মাণ করা হয় মন্দির। সেখানে স্থাপন করা হয় মহাশ্মশান শিবের মূর্তি।

shyikh_1348989703_2-Bhawal_NPনির্ধারিত দিনে পবিত্র হয়ে হাতির পিঠে চড়ে কাড়া-নাকাড়া সহকারে যুবরাজ রাম উপস্থিত হন রামসাগরে। পেছনে বেদনা বিগলিত হাজারো প্রজা। তারা শেষবারের মতো আরজি জানান আত্ম বলিদান থেকে বিরত থাকার। ম্লান হেসে পূজার উপকরণ নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশে নেমে গেলেন যুবরাজ রাম।

পূজা সাঙ্গ হতে না হতেই দিঘিতে পানির স্রোতধারা বইতে শুরু করে। মুহূর্তে ভরে যায় বিশালাকৃতির দিঘি। সলিলসমাধি হয় যুবরাজের। আর সে থেকেই দিঘির নাম হয়ে যায় রামসাগর।

রামসাগরের অন্যতম আকর্ষণ সুউচ্চ টিলার ওপর নির্মিত ডাকবাংলো। মৃদুমন্দ বাতাসে দিঘি তরঙ্গায়িত হয় । সে তরঙ্গে এক আকাশের চাঁদ শত চাঁদ হয়ে ধরা দেয়। ডাকবাংলোর সুপ্রশস্ত বারান্দায় বসে মনোলোভা সে দৃশ্য অবলোকনের আকর্ষণ এড়ানো যায় না।

রামসাগরের চারপাশ ঘিরে রয়েছে প্রকৃতির অকৃপণ সৌন্দর্য। স্থানে স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক কর্নার। দিঘির পশ্চিমে ডাকবাংলোর পাশে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুপার্ক। আছে ক্ষুদ্রাকৃতির চিড়িয়াখানা। পাশেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে পর্যবেক্ষক টাওয়ার। ডাকবাংলোর দুই পাশে গড়ে তোলা হয়েছে মনোলোভা বাগান। রামসাগরের সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো শতাব্দীর নির্যাতন সয়েও অবিচল অবস্থানে আছে এই দিঘি। মনে করা হচ্ছে, খনন পদ্ধতিই এই দিঘিকে অবিচল স্থায়িত্ব দিয়েছে।

কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। এ পথে নাবিল পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৯০০ টাকা। এ ছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস, কেয়া পরিবহন, এস এ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহনের নন-এসি বাসও চলাচল করে এ পথে। ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০মিনিটে। আর আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৯টা ৫০মিনিটে। ঢাকা থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে মঙ্গল ও বুধবার। দিনাজপুর থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে সোমবার ও বুধবার।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
20G