স্মৃতিবিজড়িত ‘ত্রিশাল’

প্রকাশঃ মে ২৬, ২০১৫ সময়ঃ ৭:৩৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫৮ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

aj_nazrulযদি আর বাঁশি না বাজে, আমি কবি বলে বলছিনে, আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি, আমায় ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম, সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।

ত্রিশাল, ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নজরুল স্মৃতিবিজড়িত এ উপজেলায় রয়েছে বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়ি, কবিপ্রিয় শুকনী বিল, দরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়। নজরুলের দুরন্ত শৈশবের নামাপাড়ার বুকে শতবর্ষী বটগাছ।

নজরুলকে ত্রিশালের মানুষ কতটুকু ভালোবাসে তার প্রমাণ মেলে তার নামে গড়ে ওঠা অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আছে দরিরামপুরে নজরুল একাডেমি, নজরুল মঞ্চ, নজরুল ডাকবাংলো, বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়িতে নজরুল জাদুঘর ও কাজীর শিমলা নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়।

এখানকার নয়নাভিরাম প্রকৃতি আর নজরুলকে নিয়ে আগন্তুকদের কল্পনা মিলে হয়ে যায় একাকার। এছাড়া এখানে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের প্রথম ও একমাত্র সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

নজরুলপ্রেমীরা ত্রিশালে তাদের নিজ উদ্যোগে কবির নামে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। নজরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নজরুল ডিগ্রি কলেজ, দুখুমিয়া বিদ্যানিকেতন, বিদ্রোহী কবি পাঠাগারসহ অসংখ্য ক্লাব সংগঠন আগলে রেখেছে বাঙালির প্রিয় কবি নজরুলকে।nazrul2

স্বপ্নপুরীর মতোই মিষ্টি ত্রিশালের একটি গ্রাম কাজীর শিমলা। এ গ্রামেই প্রথম পা পড়ে কবি নজরুলের। ১৯১৪ সালে দারোগা রফিজউল্লাহর মাধ্যমে এ গ্রামে আসেন তিনি। তখন রফিজউল্লাহ দারোগা পেশাগত কাজে কর্মরত ছিলেন আসানসোলে। নজরুলের প্রতিভায় বিমুগ্ধ দারোগা রফিজউল্লাহ ও তার স্ত্রী তাকে পড়ালেখা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। চলে আসেন ত্রিশালে। এখানে এসে ডানপিটে ছেলেটি থাকতেন দারোগার বাড়ির বৈঠকখানায়।

দারোগা রফিজউল্লাহ ত্রিশালের দরিরামপুর হাইস্কুলে (বর্তমানে নজরুল একাডেমি) ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারির কোনো এক সময়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করান তাকে।

জানা গেছে, স্কুলে কবির প্রিয় শিক্ষক ছিলেন খিদির উদ্দিন পণ্ডিত, কৈলাস বাবু, মহিম চন্দ্র খাসনবিস। শিক্ষক বাবু মহিম চন্দ্রীতের সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত করে তোলেন। খিদির পণ্ডিত তার শ্বশুরবাড়ি দরিরামপুর গ্রামে মাঝে মাঝে নজরুলকে নিয়ে বেড়াতে যেতেন।nazrul3

পণ্ডিত সাহেবের শ্যালিকা নূরজাহানের অপূর্ব রূপে মুগ্ধ হন কবি। এরপর নজরুল চলে আসেন বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়িতে। থাকেন জায়গীর হিসেবে। সুকনী বিল এখান থেকে খুব কাছাকাছি হওয়ায় কবি প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতেন এ বিলে।

ত্রিশালের বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়ির যে ঘরে নজরুল থাকতেন তা ঢেলে সাজানো হয়েছে নতুন করে। সেখানে নজরুল মিলনায়তন ও মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে।

কিশোর নজরুলের কৈশোর স্মৃতিমাখা দারোগা রফিজউল্লাহ ও বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়ির ছায়াশীতল পরিবেশের এসব বৃক্ষরাজি, নজরুলের সাঁতারকাটা পুকুরের শান বাঁধানো ঘাট আর স্মৃতিকেন্দ্রের জাদুঘরে রক্ষিত ব্যবহৃত খাট, নজরুলের কলের গান দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য নজরুলপ্রেমী ভক্ত-অনুরাগী ও পর্যটক।

প্রতিক্ষণ/এডি/জহির

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G