WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

আফরোজা সোমার ধারাবাহিক গদ্য আফরোজা সোমার ধারাবাহিক গদ্য

আফরোজা সোমার ধারাবাহিক গদ্য

প্রথম প্রকাশঃ এপ্রিল ২৮, ২০১৬ সময়ঃ ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ

আফরোজা সোমা

proti-soma

ঘোরলাগা সন্ধ্যায় ওরা ফেরে, অথবা ফেরে না। ফিরতে গিয়ে ওদের হারিয়ে যায় পথ।

ফলে, শিমুলের ডালে ডালে ফুটে থাকা লাল-লাল ফুল হয়ে ওরা ফুটে থাকে ডালে, অথবা শিমুলের ডালে বসা একটি বুলবলি আর একজোড়া শালিক যে খুঁটে-খুঁটে খাচ্ছে ফুল সেই দৃশ্য দেখতে-দেখতে ওরা ভুলে যায় বাড়ি ফেরার গান এবং ওরা দুইজন—দুইটা মানুষ, দুইটা শালিকের ভেতর ঢুকে বসে থাকে, পাখি হয়ে ফুলে-ফুলে খুঁটে খুঁটে যায়, উড়ে উড়ে যায় সন্ধ্যার বিষন্ন বাতাসে।

কারা ওই দুই জন? আমি তাদের চিনি না। শুধু দেখি ওরা হয়তো একা-একা অথবা একাকী দুইজন মানুষ যৌথ হবার নিমিত্তে আরো খুব একা হয়ে যায়।

আমি তাদের চিনিনা। আসলেই নাহ! আমি জানি না ওদের নাম। জানি না, কী ব্যাকুলতা তারা আলগোছে লুকিয়ে রাখে নিজের ভেতর। কিন্তু ওদের হাসি দেখলে আমি যেনো টের পাই: ওরা খুব কান্না চেপে রাখছে, ওরা খুব বিলাপ ঢেকে রাখছে, ব্যাকুলতার গল্পগুলো ওরা আড়ালে রাখছে গভীর দরদ দিয়ে।

ফলে, ওদের জন্য আমার আরো মায়া বেড়ে যায়। গভীর আগ্রহ নিয়ে আমি খুঁটে খুঁটে দেখি ওদের কপালের ভাঁজ, দেখি ওদের চোখের কোণে অভিব্যাক্তি গোপন করার গভীর অভিব্যাক্তি।

কী ব্যাথা তার? কী ব্যাথা তাদের? কী ব্যাথা ওই একাকী যুবকের? কী ব্যাথা ওই তিরিশ কি পয়ত্রিশে থাকা নারীটির? কী ব্যাথা ওই মাঝবয়সীর? আমি জানি না।

শুধু দেখি, ওদের হাসির ফাঁকে গোপনে কান্না জেগে থাকে।

শুধু দেখি, নিজেকে শোনানোর জন্য ওরা আরো খুব সশব্দে হাসে।

শুধু দেখি, কোথাও ভ্রমণে গেলে ওদের কেউ কেউ আলগোছে একা হয়ে মাঠের মধ্যে একটা গাছের ছায়ায় বসে থাকে কিছুক্ষণ, আর হঠাৎ ডাক দিলে কেমন চমকে-চমকে ওঠে।

ওদেরকে দেখি, খুব গল্প হয় ওদের। খুব চা হয়, আড্ডা হয়, সন্ধ্যা যাপন হয়।

মায়ামুখের একটা অচেনা তরুণির হাসির স্নিগ্ধতা নিয়ে ওদের মধ্যে হয়তো কথা হয়; পার্কের রাস্তার পিচের সঙ্গে জুতা ঘষে-ঘষে হেঁটে যাচ্ছে যে যুবক তার প্রতি ওদের একজনের হয়তো খুব তুমুল রাগ হয়, যুবকের জুতার করররত করররত শব্দে হয়তো তাদের একজনের হাতের তালু, পায়ের পাতা নিশপিশ করতে থাকে, মনে হতে থাকে যেনো পানিশূন্য হয়ে চরচর করছে ঠোঁট, পানিশূন্য হয়ে শুকনো হয়ে শুকনো পাতার মতো কুচকে-মুচকে যাচ্ছে হাতের তালু, পায়ের পাতা; কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত জুতার ওই ঘষ-ঘষানির শব্দ মুছে না যাচ্ছে ততক্ষণ শরীরে কেমন কাঁটা দিতে থাকে, রোমকূপে শিহরন তুলে দাঁড়িয়ে যেতে থাকে শরীরের লোমগুলো।

ফলে, এই অদ্ভুত অসুখ থামাতে গিয়ে ভ্রাম্যমান ফেরিওয়ালার থেকে পানির বোতল কিনে নিয়ে সে তার হাতের তালুতে ঢালে, পায়ের পাতায় ঢালে, টিস্যু দিয়ে মোছে, এবং তারপর হয়তো স্বাভাবিক হয়ে আসে তার অনিয়ন্ত্রিত অস্বস্তির বোধ।

হয়তো এই অদ্ভুত অসুখ নিয়েই তাদের মধ্যে লম্বা আলাপের সূত্রপাত হয়, উঠি-উঠি করা সন্ধ্যা দীর্ঘালাপের সন্ধ্যায় পরিণত হয়। তারপর সেই আলাপের মধ্যে আরো অনেক অসুখের কথা হয়, সুখের কথা হয়, আরো অনেকের কথা হয়, নিজের এবং পরের কথা হয়।

গল্পোচ্ছলে অফিসের সহকর্মীদেরকে গল্পের চরিত্রের মতোন বিশ্লেষণ করা হয়; অচেনা জুটিদের দেখে-দেখে কারসঙ্গে কাকে মানাচ্ছে, কার সঙ্গে কাকে মানাচ্ছে না, এই সব কথা হয়।

সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের কথা হয়। জেমস বন্ড-এর চরিত্রে অভিনয় করা সকল হিরোদের মধ্যে পিয়ার্স ব্রসনান-ই যে সবচে সুন্দর, সবচে সুশ্রী, সবচে বেশি সেক্সি, সবচে বেশি ‘লেডি কিলার’সেই সব কথা হয়। অড্রে হেপবার্ন-কে যে কেমন রাজহংসীর মতন লাগে, তার গ্রীবারবাঁক, ঘাড় কাৎ করা তার চাহুনি যে হৃদয়ে ছুড়ি মেরে দেয় হয়তো তাই নিয়ে কথা হয়; হয়তো বাপ্পারাজকে নিয়ে কথা হয়, বাপ্পারাজ যে অধিকাংশ সিনেমায় ভালোবেসে প্রেমের মানুষকে না-পাওয়া বা ত্যাগি বা ব্যাথিত যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে তাই নিয়ে কথা হয়।

হয়তো চাঁদনী রাতে ছাদে সারারাত একা-একা জেগে থাকার কথা হয়। দূরে কোথাও বেড়াতে গিয়ে রাতের বেলায় মাইক্রোবাস পথ হারিয়ে ফেললে অন্ধকার রাস্তার একই মোড়ে গাড়ী যে ঘুরে ঘুরে  কী করে পাঁচ পাক খায় হয়তো সেই সব কথা হয়।

বিকেল বেলায় রেলের শূণ্য কামরায় একাকী একটি তরুনীকে দেখে একজন মাঝবয়সী লোক কেমন কসরত করে তার সিট থেকে সামনের সিটের উপরে পা তুলে হাঁটুটা সামান্য উঁচু করে তার উরুর নিচ দিয়ে কেমন করে লুঙ্গিটা আলতো করে সরিয়ে দিয়ে মেয়েটার দিকে ফিরে শিশ্নটা বের করে শিশ্নে হাত বুলাতে থাকে আর এক দৃষ্টে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে হয়তো সেই কথা হয়। তারপর হঠাত মেয়েটার চোখে পাশ থেকে আবছা কিছু একটা নড়াচড়ার মতন চোখে পড়ায় মেয়েটা ঘাড় ঘুরিয়ে লোকটার উত্থিত শিশ্ন এবং পলকহীন তাকিয়ে থাকা দেখে সে যখন দৌড়ে কামরা থেকে নেমে যায় এবং ট্রেনে উঠার জন্য সহযাত্রী বন্ধুটির আসার অপেক্ষা করে, তখন তার আতঁকে উঠা চোখের অভিব্যাক্তিটা কেমন হতে পারে সেই সব নিয়ে কথা হয়।

কথা হয় আরো বহুকিছু নিয়ে। কিন্তু প্রকৃত আকুলতাগুলো বা ব্যাকুলতাগুলো বা দুঃখগুলো বা ঘা-খাওয়া কোমল জায়গাগুলো ওরা কেউ কাউকে দেখায় না। ফলে, প্রকৃত ব্যাকুলতাগুলো অকথিত থেকে যায়।

ধরা যাক, সেই দুইজন, যারা নিয়েছে আশ্রয় শিমুলের ডালে বসা দু’টো শালিকের ভেতর, যারা যাচ্ছে উড়ে শালিকের ডানায় চেপে, তাদের মতন আরো এমন অসংখ্য জোড়া আছে এই শহরে। তারা আসলে জোড়া নয়। তারা হয়তো দু’টো আলাদা জোড়ার দু’টো ছিন্ন পাখি হয়ে হয়েছে গল্পের সহচর।

ধরা যাক, সেই জোড়া শালিক বা সেই দুই বন্ধু বা অবন্ধু বা গল্পের সহচর আরো গুচ্ছ গুচ্ছ আছে এই ব্যস্ত শহরে।

এই সব শালিকেরা অথবা শিমুলের ডালে ফুল হয়ে ফুটে থাকা শিমুলেরা অথবা বিষন্ন মুখেরা অথবা যাদের হাসির ফাঁকে আলগোছে ঝুলে আছে কান্নার রং তারা কি জোড়া ভাঙা শকুনের দল?

শকুনের জোড়া ভেঙে গেলে যেমন দীর্ঘকালেও আর কারো সাথে লাগে না জোড়া, এরা-ও কি তেমনি মূলত শকুন অথচ মানুষের দেহ ধরে বাস করে ব্যাস্ত শহরে?

ও শকুন, কে গিয়েছে তোমার? বন্ধু?

ও শকুন, কে গিয়েছে তোমার, মনের মানুষ?

ও শকুন, কে গিয়েছে তোমার? আমাকে বলো।

আগের জন্মে আমি রূপকথার জেলে ছিলাম, অদিঅন্তহীন জলের গহীন হতে অমূল্য সম্পদ আমি সঞ্চয় করে এনে দিয়েছি তুলে মানুষের হাতে, ঝড়ে পরা জাহাজের যাত্রীকে বুক দিয়ে আগলে আমি টেনে এনেছি তীরে।

আগের জন্মে আমি ছিলাম ডাকহরকরা। তাই, অগুন্তি লোকের ঠিকানা আমার জানা, অগুন্তি চেহারার আকুলতা আমি করতে পারি পাঠ।

আগের জন্মে আমি ছিলাম এক নদী। আমার তীরে বসে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বলেছে নিজের কাহন। আমার জলে নাইতে নামার ছলে, কত নারী আমাতে শপেছে তার চোখের জল; আমি আজো তাদের দুঃখ ধরে আছি।

অতএব, ও শকুন,  কী দুঃখ তোমার? আমাকে বলো। আমাকে বলো, তোমার বন্ধুর গালের কোন দিকে ছিল তিল? তাহলেই আমি বলে দিতে পারি এখন কোন গাঁয়ে তার বাস । আমাকে খানিক ব্যাখ্যা করে বলো যে, কেমন ছিল তোমার বন্ধুর মুখের অবয়ব, কেমন ছিল তার গায়ের বরণ। তাহলেই, আমি তোমাকে বলে দিতে পারি ঠিকানা না-জানা তোমার সে বন্ধুর গাঁয়ের নাম।

ও শকুন, আমাকে বলো, কোথায় হারিয়েছো তুমি তোমাকে? অথৈ জলের গহীনে ডুব দিয়ে দিয়ে আমি করবো হারানো তোমার সন্ধান; সাতরাত সাতদিন একটানা সাগরের এ মাথা-ওমাথা করে সন্ধান তোমাকে খুঁজে পেয়ে পুনরায় তোমার হাতে এনে আমি দেবো তোমাকে।

ও শকুন, তুমি এসে বসো আমার তীরে। এসো, গা ধোয়ার ছলে এসে নামো আমার জলে। আমি তোমার দুঃখ করবো পান। তোমার কান্না আমি আমাতে করবো ধারন। তবু, ও  সুন্দর মানুষ, আর গুমরে কেঁদো না তুমি ওই বিষন্ন শকুনের মতন।

=====

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G