WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS
WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'
WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''
আমাকে মাঝে মাঝেই টেলিভিশনে ইন্টারভিউ দিতে হয়, বিষয়টি আমি একেবারেই উপভোগ করি না– কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আগে শুধু ঢাকা শহরে সাংবাদিকেরা টেলিভিশন ক্যামেরা নিয়ে ঘুরোঘুরি করতেন। আজকাল ছোট বড় সব শহরেই সব চ্যানেলে তাদের পাওয়া যায়। মাঝে মাঝেই সাংবাদিকেরা আমাকে বলেন, “ছোটদের জন্যে কিছু একটা বলেন।”
আমি অবধারিতভাবে ছোটদের উদ্দেশ্য করে বলি, “তোমরা অনেক বেশি বেশি বই পড়বে এবং অনেক কম কম টেলিভিশন দেখবে।” আমি জানি না টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আমার এই বক্তব্য প্রচার করেন কী না। কিন্তু কেউ যেন মনে না করে আমি কৌতুক করে বা হালকাভাবে কথাগুলো বলি।
আমি যথেষ্ট গুরুত্ব নিয়েই কথাগুলো বলি। একটা বই পড়ে একজন বইয়ের কাহিনি, বইয়ের চরিত্র, ঘটনা সবকিছু কল্পনা করতে পারে। যার কল্পনাশক্তি যত ভালো, সে তত সুন্দর করে কল্পনা করতে পারে, তত ভালোভাবে বইটা উপভোগ করতে পারে। টেলিভিশনে সবকিছু দেখিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, দুঃখের দৃশ্য কিংবা ভয়ের দৃশ্যগুলোর সাথে সে রকম মিউজিক বাজতে থাকে।
কাজেই যে টেলিভিশন দেখছে তার কল্পনা করার কিছু থাকে না! কেউ যদি শুধু টেলিভিশন দেখে বড় হয়, তার মানসিক বিকাশের সাথে একজন বই পড়ে বড় হওয়া শিশুর খুব বড় একটা পার্থক্য থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপকের একবার ধারণা হল, খুব শিশু বয়সে বেশি টেলিভিশন দেখলে একজন শিশুর অটিজম শুরু হতে পারে। তিনি নানা জনকে বিষয়টা একটু গবেষণা করে দেখতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু অধ্যাপক ভদ্রলোক মনোবিজ্ঞানী নন, ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের। তাই কেউ তাঁর কথার কোনো গুরুত্ব দিল না। কর্নেল ইউনিভার্সিটির সেই অধ্যাপক তখন নিজেই নিজের মতো করে একটা গবেষণা শুরু করলেন। সেটি মোটেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা নয়– অর্থনীতি বা ব্যবসা প্রশাসন ধরনের গবেষণা।
তিনি চিন্তা করে বের করলেন, বৃষ্টি বেশি হলে বাচ্চারা বেশি ঘরে থাকে; বাচ্চারা বেশি ঘরে থাকলে বেশি টেলিভিশন দেখে। তাই যে সব এলাকায় বেশি বৃষ্টি হয়, সেখানে বাচ্চারা বেশি টেলিভিশন দেখতে বাধ্য হয়। যদি টেলিভিশন বেশি দেখার সাথে অটিজম বেশি হওয়ার একটা সম্পর্ক থাকে, তাহলে যে সব এলাকায় বৃষ্টি বেশি হয় সেখানে নিশ্চয়ই বেশি বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত হয়।
কর্ণেলের অধ্যাপক দেখতে পেলেন, সত্যি সত্যি যে সব এলাকায় বৃষ্টি বেশি হয় সেই সব এলাকায় অটিজম-আক্রান্ত শিশু বেশি। তিনি এখানেই থামলেন না, গবেষণা করে দেখালেন আমেরিকায় যে সব স্টেটে কেবল টেলিভিশন দ্রুত বেড়ে উঠেছে, সেইসব এলাকায় অটিজমও দ্রুত বেড়ে উঠেছে। মজার ব্যাপার হল, তাঁর গবেষণাটি বৈজ্ঞানিক মহল মোটেও গ্রহণ করলেন না। শুধু তাই নয়, উল্টো গবেষণা করে এ রকম একটা তথ্য আবিষ্কার করে সবাইকে বিভ্রান্ত করে দেওয়ার জন্যে সবাই তাঁকে অনেক গালমন্দ করতে শুরু করল।
আমি আঠারো বছর আমেরিকায় ছিলাম। আমি এর সাথে আরেকটা তথ্য যোগ করতে পারি। আমেরিকাতে টেলিভিশনের ব্যবসা এতই শক্তিশালী যে, সেই দেশে সত্যি সত্যি যদি গবেষণা করে দেখা যায়, টেলিভিশনের সাথে অটিজমের একটা সম্পর্ক আছে সেই তথ্যটাও কেউ কোনোদিন প্রকাশ করার সাহস পাবে না! (আমেরিকার যে কোনো মানুষ যখন খুশি দোকান থেকে একটা বন্দুক, রাইফেল কিংবা রিভলবার কিনে আনতে পারবে!
আমরা সবাই জানি সেই দেশে কিছু খ্যাপা মানুষ মাঝে মাঝেই এ রকম অস্ত্র কিনে এনে স্কুলের বাচ্চাদের হত্যা করে ফেলে। সেই দেশে ন্যাশনাল রাইফেল এসোসিয়েশনে এতই শক্তিশালী যে তার পরেও কেউ যদি এত সহজে এত মারাত্মক অস্ত্র কিনে আনতে পারার বিরুদ্ধে কথা বলে, তার কপালে অনেক দুঃখ আছে!)
অটিজম এক সময়ে একটা অপরিচিত শব্দ ছিল। এখন আমাদের দেশেও মোটামুটিভাবে সবাই অটিজম কিংবা অটিস্টিক শব্দটা শুনেছে। সারা পৃথিবীতেই অটিস্টিক বাচ্চার সংখ্যা বছরে ৬ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। পৃথিবীতে এখন শতকরা এক ভাগ মানুষ অটিস্টিক (আমেরিকাতে আরও অনেক বেশি)। কেন এত দ্রুত এই সংখ্যাটি বেড়ে যাচ্ছে, এখনও কেউ জানে না।
কোনো রকম বড় গবেষণা না করেই আমরা বলতে পারি, নিশ্চয়ই এখন বাচ্চাদের যে পরিবেশে বড় করা হয় সেটি আগের থেকে ভিন্ন। সেটি কী আমরা জানি না। কিন্তু যেটি নিশ্চিতভাবে আগের থেকে ভিন্ন সেটি হচ্ছে টেলিভিশন, ভিডিও গেম, স্মার্ট ফোনের ব্যবহার। বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রমাণিত হয়নি– কিন্তু আশংকাটা কি কেউ উড়িয়ে দিতে পারবে?
কেউ কী কখনও ভিডিও গেমের কাগজটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছে? সেখানে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা থাকে, ভিডিও গেম খেলার সময় কোনো কোনো শিশুর মাঝে মৃগী রোগ শুরু হতে পারে! এত সব জানার পরও ছোট একটা শিশুকে টেলিভিশন বা ভিডিও গেমের সামনে বসিয়ে দিতে কি আমাদের জান ধুপপুক ধুকপুক করবে না?
তার চাইতে কত চমৎকার হচ্ছে একটা বই পড়ে শোনানো। একটা বাঘের গল্প পড়তে পড়তে হঠাৎ করে বাঘের গলায় ‘হালুম’ করে ডেকে উঠলে একটা ছোট শিশুর মুখে যে আনন্দের ছাপ পড়ে, তার সাথে তুলনা করার মতো আনন্দময় বিষয় কী আছে? একটা ভূতের গল্প পড়ে শোনানোর সময় নাকি সুরে ভূতের গলা অনুকরণ করলে একটা শিশু যেভাবে খিলখিল করে হেসে উঠে, এটা কি আমরা সবাই দেখিনি?
তাহলে কেন আমরা ছোট একটা শিশুকে বই পড়ে শোনাব না? কেন একজন কিশোর বা কিশোরীকে বই পড়তে উৎসাহ দেব না? কেন একজন তরুণ বা তরুণীকে কবিতা লিখতে দেব না? ছোট একটি জীবন। সেই জীবন আনন্দময় করে তোলার এত সহজ উপায় থাকতেও কেন জীবনকে আনন্দময় করে তুলব না?