WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

পাগলা কানাই ও বাউলিয়ানা পাগলা কানাই ও বাউলিয়ানা

পাগলা কানাই ও বাউলিয়ানা

প্রথম প্রকাশঃ মার্চ ৯, ২০১৫ সময়ঃ ৭:৪৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:২১ পূর্বাহ্ণ

ইফতেখার রাজু, প্রতিক্ষণ ডট কম.

Pagla-Kanaiবেঁচে থাকাটা মানুষের পরম প্রাপ্তি নয়। ভবলোকে মনুষ্যের শ্রেষ্ঠত্ব তখনই হয় যখন তার আগমন ও প্রত্যাগমন সাধু ও শাস্ত্রীয় হয়। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যাশা করেন সকল মানুষ যেন শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েই পরলোকে আসে। আর জাগতিক জীবনে পোশাকি ধর্মের বেশ ছেড়ে মানবিক সাধুত্ব অর্জন করে।

 মানুষ এবং মানবতার এমন দর্শন চর্চাই হল বাউলিয়ানা। অথচ বর্তমান প্রজন্মে বাউলিপনা নিয়ে বাহাস চলে। বাউল দর্শন না বুঝে অনেকে ধর্মীয় ও সংস্কৃতির নানা ছাঁচে ফেলে বাউল সাধকদের দুষেন।

যদিও ভালোবেসে এখন অনেক নামকরা শিল্পী থেকে বেসুরো পারিযায়ী কন্ঠীরাও বাউল গানের চর্চা করেন। তবে আবার তাদের অনেকেই বাউল গান নিয়ে নানা রকম উক্তি, কটূক্তিও করেন। যা মেনে নেওয়া যায়না।।

 মূল বিষয় হল, অনেকেই বাউলিপনার উদ্ভব, বিকাশ, সাধনা ও এদের জীবনাচারণ সম্পর্কে  বিশদ জানেন না।

কিন্তু সমালোচনায় ‍মুখর থাকেন। অথচ বাউলদের শুরুটা গান দিয়ে হলেও, তাঁরা জীবনের শেষ পর্যন্ত জনমানুষের মুক্তি আর নিপীড়িত মানুষের কথা বলে যান। যেমন বাউল পাগলা কানাই বলেন,..

জিন্দা দেহে মরার বসন থাকতে কেন পর না,  মন তুমি মরার ভাব জান না,

মরার আগে না মরিলে,
পরে আর কিছুই হবে না।

অর্থাৎ, প্রাণ থাকতেই মরণের পোশাক কাফন, খিলকা, আঁতর, তাজ আর দোর-কঁপনি পরতে হবে মানুষের। প্রাণহীন দেহে মরার বসন পরাতো মানবের পরাজয়।  তাই জীবনকে মানবীয় করতে শরীরে প্রাণ থাকতে মরার বসন পরার মাধ্যমে সৃষ্টিকে স্বার্থক করার কথা বলেছিলেন এই বাউল।

বাংলার আধ্যাত্মিক মরমিয়া ভাব সংগীতের ঋষিতুল্য কবি হলেন পাগলা কানাই। ১৮০৯ সালে ঝিনাইদহের লেবুতলা গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গ্রামের মক্তবে মাত্র কিছুদিন পড়াশোনা করেন। কানাই নিজেই স্বগোক্তি করেন এভাবে…

“লেখাপড়া শিখব বলে পড়তে গেলাম মক্তবে, পাগলা ছ্যাড়ার হবে না কিছু, ঠাট্টা করে কয় সবে। বাপ এক গরীব চাষা, ছাওয়াল তার সর্বনাশা।

পাঠশালায় পড়াকালে তার বাবা কুড়ন শেখ মারা যান। কিছুদিন পর মা মারা গেলে, এতিম ভবঘুরে কানাইয়ের বাকি জীবন কাটে বেড়বাড়িতে বোনের বাড়িতে। ওই বাড়িতে গরুর পাল চরাতেন। রাখালদের সঙ্গে নিয়ে গান বাঁধতেন, তাতে সুর দিতেন। পরে দুই টাকা বেতনে খালাসির চাকরি নেন মাগুরা জেলার আঠারখাদার জমদিার চক্রর্বতী পরবিাররে নীলকুঠিতে।গানের টানে তাও ছাড়েন। বিয়ে করেও সংসারবিবাগী ছিলেন আধ্যাত্মিক এই মানুষ। পুঁথিগত বিদ্যা ছাড়া শুধু আধ্যাত্মিক চেতনায় ভর করে মানবীয় সুখের সন্ধানে গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে দোতারা হাতে ঘুরেছেন।

কানাই মরমীবাদী চিন্তাকে নিয়ে গেছেন বিশ্বদরবারে। তিন সহস্রাধিক দেহতত্ত্ব, জারি, বাউল, মারফতি, ধুয়া, মুর্শিদী গানের স্রষ্টা তিনি। মূলত দেহতত্ত্ব নিয়ে মরমী ও ভাবগান রচনা করেছেন। তবুও সমাজ -সমকালের ভাবনা, বর্ষার রূপ, আশ্বিনের ঝড়, মানুষের কষ্ট, দরিদ্রতা, বানবাসীর কান্না সমাজপতিদের করাল থাবা আর সামপ্রদায়িকতার ছোবল কোনটাই বাদ পড়েনি পাগলা কানাইয়ের গানে।

Kanai2014071205331220150309115535গেলো দিন/শুন মুসলমান মোমিন/পড় রাব্বুল আলামিন/দিন গেলে কি পাবি ওরে দিন/দিনের মধ্যে প্রধান হলো মোহাম্মদের দ্বীন”।

কানাই যেমন ইসলামের সত্যকথা গানে গানে বলেছেন ,তেমনি হিন্দু পুরাণ, রামায়ণ ও মহাভারত থেকে  উপমার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন।

“কী মজার ঘর বেঁধেছে, হায়রে ঘর বাইন্ধাছে দুই খুঁটির উপর/ পাগল কানাই বলে ভাই সকলে যখন আসবে ঝড়, ছয় রিপু ছেড়ে যাবে/ সারথী নাহি রবে, পড়ে রবে এইতো সাধের ঘড়”।

সংঘাতময় পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় মৌলবাদ রুখতে পারে বাউল মতবাদ৷ একশ্রেণির মানুষের মধ্যে বাউলদের সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে৷

অথচ শান্তিপ্রিয় বাউলেরা কোনো ধর্মকেই খাটো করে দেখেন না৷ তাঁরা চান সব ধর্মের মানুষ ধর্ম সঙ্গে মানবতাবাদের চর্চা করুক৷

” ১৭ শতকে বাংলাদেশে বাউল মতের উদ্ভব হয়। এ মতের প্রবর্তক হলেন আউল চাঁদ ও মাধববিবি। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া-পাবনা এলাকা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম-বোলপুর-জয়দেবকেন্দুলি পর্যন্ত বাউলদের বিস্তৃতি। আর মধ্যপ্রাচ্যে আরবের রাজ শক্তির প্রতিঘাতে জন্ম হয় সুফি মতবাদের । বিকাশ ঘটে ইরান ও মধ্য এশিয়ায়। দহ্মিণ এশিয়ায় এসে অধ্যাত্ম সঙ্গীত চর্যাগীতিতে রুপান্তর হয়।পরে তুর্কী বিজয়ের মধ্যদিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সূফী-দরবেশ গণের আগমনে বৌদ্ধ সিদ্ধাচর্যাগণের আদর্শমানবতাবাদ, সুফীবাদে সম্মিলিত হয়ে ভাবসঙ্গীতে রুপান্তর হয় । তাই বাউলিইজমে বৈষ্ণবধর্ম এবং সূফিবাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

বাউলেরা উদার ও অসাম্প্রদায়িক ধর্মসাধক। দেহের ভেতরে যে আত্মা তার খোঁজে কাটে তাদের জীবন।বাউলদের বিশ্বাস আত্মাকে জানলেই পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তাকে জানা যায়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে একে পৃথক দর্শন বুঝায়। কিন্তু আসলে এ কোন পৃথক মতবাদ নয়। তাই আমরা তথাকথিত জ্ঞান আর দিব্যি দিয়ে বাউলদের শিক্ষা থেকে নিজেকে বঞ্চিত না করে বরং কানাই পাগলা সহ সব  বাউলা চারণ কবিদের সৃষ্টি বিশ্বে তুলে ধরাই হবে শ্রেয়।

তৎকালীন সামাজিক প্রতিকূলতার প্রেক্ষাপটে মানুষের জন্য বাংলার ভাবদর্শনে মরমীবাদের উৎকর্ষ সাধনে পাগলা কানাই বলেন…

কত ফকির বৈষ্ণব আছে রে ভাই , সেই ঘরের ভিতর।

পাগল কানাই বসে বাংলা ঘরে,  সদায় করে ভয় আমার।

সে ঘরের সারথীর নাম, মন পবন তাই শুনিলাম।

ঘরের মধ্যে ষোলজনা করতেছে কারবার।”

 ঝিনাইদহের বেড়বাড়িতে আছে কবি পাগলা কানাইয়ের বাড়ি। তার বাড়ির নামে ওই এলাকাকেই এখন লোকে পাগলা কানাই নামে চেনে। সেখানে স্থানীয় সরকার কর্তৃক নির্মিত হয়েছে পাগলা কানাইয়ের নামে পাঠাগার, সংগীত শিক্ষাকেন্দ্র, মিলনায়তন, সমাধি ও কবির একটি আবক্ষ প্রতিমূর্তি।

 

 প্রতিক্ষণ/এডি/ই রা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G