WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

মামার জন্মদিনে ভাগিনীর চিঠি মামার জন্মদিনে ভাগিনীর চিঠি

মামার জন্মদিনে ভাগিনীর চিঠি

প্রথম প্রকাশঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫ সময়ঃ ২:২৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৫০ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

জাফর জন্মদিনে নানান জন হরেক রকম উপহার দিয়ে থাকেন। যদি প্রশ্ন করা হয়, শেষ্ঠ উপহার কোনটা? তাহলে নানা জনের নানা মত পাওয়া যাবে। তবে একালে একটা হাতে লেখা চিঠি পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। সেই সৌভাগ্যবানদের একজন, লেখক মোহাম্মদ জাফর ইকবাল। কঠিন কথা কী করে সহজভাবে বলতে হয়ে আর লেখায় প্রকাশ করতে হয়; তা উনার ভালোই জানা। আজ তাঁর জন্মদিন। তাই তাঁরই ভাগিনী অপলা হায়দারের লেখা চিঠিটি দিয়ে আমরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই।

‘‘মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে আমরা ইকবাল মামা ডাকি। ইকবাল মামা বহু বছর আমেরিকায় থাকায় ছোটবেলায় আমাদের কাজিনদের মাঝে এই নিয়ে ব্যাপক রাগ ছিল । এর মধ্যে আবার নাবিল হলো ফলে হিংসাও লাগত। আমরা প্রায়ই চিঠি, ছবি এঁকে পাঠাতাম তাঁকে। তখন শুচি আপুরা ভাল বাংলা লিখতে পারত সেই চিঠির একটা লাইন থাকত, ‘জানি তুমি আর দেশে আসবা না। আসবাও বা কেন তোমার তো নাবিল আছে। আমরা কে?’ খুবই খোঁচা মারা ইমোশনাল চিঠি। শেষে কারও নাম থাকত না। ‘ইতি …’ দিয়ে শেষ হত। কখনও ছবি এঁকে, কখনও নিজেদের ছবি পাঠাতাম। ইকবাল মামার বাচ্চা খুবই প্রিয়। খুবই খুশি হত। একবার আমরা ভিডিও করে পাঠালাম। শম্পু, নোভা আপু গান গাইল, শুচি আর শীলা আপুরা কবিতা আবৃতি করল। এবার আমার টার্ন। আমি বড়মামার অয়োময় নাটকের ‘আসমান ভাইঙ্গা জ্যোৎস্না পরে’ গানটা গাইলাম। প্রবলেম হল এই গানের একটা লাইন ‘আমার ঘরে জ্যোৎস্না কই’ বলার সময় ‘কই’ শব্দে হালকা টান দিতে হয়। আমি টান দিলাম, মাঝে দুইতিনবার ঢোক গিললাম কিন্তু ‘ক ও ও ও ও ও’ করেই গেলাম ‘ই’ কখন বলব বুঝলাম না। মা তখন আসে পাশেই ছিল বলল, ‘হইসে থাম।’ আমি তাড়াতাড়ি ‘ই’ বলে ঢোক গিলে টানটা শেষ করলাম। সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স আমার হল। এই ভিডিও ছাড়া হলেই আমার জায়গায় সবাই হাসা শুরু করত। ফলে আমার খুবই লজ্জা লাগত আমি ওই টাইমে পানি খেতে চলে যাই অথবা বাথরুমে চলে যাই। সবার হাসাহাসি শুনলে কান্নাই এসে যেত। আজ এত বছর পর ওই ভিডিওটা দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে!
আমাদের ধারণা ছিল ইকবাল মামা প্লেনে থাকে অথবা সারাদিন প্লেনে চড়ে। ফলে কোন প্লেন গেলেই আমরা চিৎকার করতে থাকতাম ‘ইকবাল মামা/চাচা চকলেট ফেলো, চকলেট ফেলো।’ কতদিন যে আমরা আশায় ছিলাম ইকবাল মামা প্লেন থেকে চকোলেট ফেলবে আমরা কুড়াবো। ইকবাল মামাকে তেমন ভয় পাই না কিন্তু গম্ভীর দেখে খামোখা গল্প জুড়ে দেই না। জ্ঞানী মানুষ থেকে দূরে থাকাই ভাল।
বহু বছর পর ইকবাল মামা দেশে একবারে চলে এলেন সাথে নাবিল ইয়েশিম। ওরা বাংলা পারে না। এতে আমাদের সমস্যা হয়নি আমরা ইশারায় কথা বলি। আমি খুবই ভাগ্যবান কারণ আমি বড়দের গ্রুপ শম্পু, নোভা আপুদের সাথে খেলেছি, আবার ছোটদের গ্রুপ নীষা, এশার সাথেও খেলেছি। বড়দের গ্রুপে ছোট থাকায় পাত্তা কম পেতাম কিন্তু ছোটদের গ্রুপে আমিই সর্বেসর্বা আমার নিজস্ব একটি আবিষ্কৃত খেলা ছিল। নাম ‘বিনু বিনু’ খেলাটা এমন আমি বিনু গার্মেন্টস কর্মী, আমার কাঁধে আমার বোনরা। ওরা কেউ ইট ভাঙ্গে, কেউ স্কুলে যায়, কেউ গান গায়। ইয়েশিমকে আরেক বোন বানায়ে ফেললাম। এর মাঝে নাবিল এল খেলতে! ওকে কী বানাব? ছেলে বাচ্চাই তো দেখি নি। আমি চিন্তা করে বললাম, ‘তুমি রাখাল ছেলে। আরও চিন্তা করে ইংলিসে বললাম কাউবয়।’ নাবিল বেচারা বলল তার গরু ছাগল কই? আমি বললাম, ‘সব কল্পনায় আছে। এই যে কল্পনায় গরুর দড়ি। যাও মাঠে গিয়ে ঘাস খাওয়াও।’ নাবিল বেচারা কল্পনায় গরুকে গোসল দেয়, কল্পনায় পানি খাওয়ায়, কল্পনায় মাঠে নেয়। আর আমরা রান্নাবাটি দিয়ে রাঁধি, বাঁশি দিয়ে গান গাই, লেগো দিয়ে ইট ভাঙ্গি। দুদিন পর নাবিল ঘোষণা দিল সে আর খেলবে না। কিন্তু ইকবাল মামা আমাদের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। খেলায় যে ভাষা কোন সমস্যা না তা দেখেও খুশি। একবার ঠিক করলাম ছবির এক্সিবিশন দেয়া হবে। পরে তা বিক্রি হবে। সেই টাকায় আমরা জিনিস কিনব। এখানে বলে রাখা ভাল শাহীন মামার(আহসান হাবীব) মত ভাল ছবি আঁকতে পারে আমার বেশ কিছু কাজিন। যেহেতু আমি উদ্যোক্তা এদিকে আঁকতে পারি না তাই আমি ক্লাস এইটের সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের মানব দেহ এঁকে ফেললাম। লাল হার্ট, হলুদ পাকস্থলী, বেগুনি নাড়িভুঁড়ি। সবার আঁকা ছবি কম বেশি বিক্রি হল আমারটা হল না। ইকবাল মামা শেষে বলল যেই যেই ছবি বিক্রি হয় নি সব তিনি কিনে নিবে এত টাকা দিয়ে। আমরা রাজি হয়ে বিক্রি করে দিলাম। পরে নিজেদের জিনিস কিনলাম। বলা বাহুল্য ভাল জিনিসটা আমি নিলাম।
তখন আমাদের বাসা আজিমপুর হওয়ায় ইকবাল মামা ইয়েশিমকে নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি চলে আসত। ২১ ফেব্রুয়ারির ভোর রাতে আমরা সবাই সাদা শাড়ী কালো পাড় পরে বের হতাম বেদিতে ফুল দেয়ার জন্য। সমস্যা হচ্ছে আমরা তিনবোন, মা, ইয়েশিম এত কালো পাড়ের সাদা শাড়ী ম্যানেজ করা। খুঁজে বের করা হত। সবচেয়ে ত্যানা যেটা ওটাই মা-র ভাগ্যে পরত। পরে আমরা কালো টিপ দিয়ে, খালি পায়ে শীত শীত আবহাওয়ায় বেদিতে ফুল দিতে যেতাম। আস্তে আস্তে ভোর হচ্ছে এর মাঝে আমরা হেঁটে যাচ্ছি, অন্যরকম একটি পরিবেশ ছিল।
আমার আবার উকিল বাবাও ইকবাল মামা। শুধু আমার না আমার অনেক কাজিনদেরও উকিল বাবা তিনি। আমার মাস্টার্সের পর থেকে মা পাত্র খোঁজা শুরু করল। স্যাটেল ম্যারেজে যা হয় ছোট-বড়-মাঝারি নানা বিষয় আসে। আমি যখন চাকরি-বাকরি করছি সেইসময় সমিকের সাথে পরিচয় হয়। ভাবলাম একদম আননোন কাউকে বিয়ে করার চেয়ে একেই করি। মাকে বললাম। মা চশমা পরে সমিকের ছবি দেখল। আমি বললাম, ‘ইকবাল মামার ডিরেক্ট স্টুডেন্ট, শাহজালাল ইউনিভার্সিটি।’ মা ইকবাল মামাকে ফোন দিল। ইকবাল মামা সমিকরে চিনে না। চেনার কথাও না। দুই ধরণের ছেলেদের স্যার-ম্যাডামরা চিনে। এক যারা খুবই মেধাবী, দুই যারা নানা ধরণের সংস্কৃতিক কর্মকান্ড যেমন, গান-নাচ-ডিবেট করে। সমিক মুখ চোরা ছেলে ওরে চেনার কথাও না। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে আরেকটি বৈশিষ্ট্যের কারণে স্যার-ম্যাডামরা চিনে তা হল সুন্দর হলে। সুন্দরী ছাত্রী কেউ ভুলে না। সে যাই হোক, ইকবাল মামা না চিনেই বলল, ‘শেফু, আমার ইউনিভার্সিটি আবার আমার ডিপার্টমেন্টের ছেলেতো এই ছেলে ভাল না হয়ে যায় না।’ মা ফোন রেখে চাঁপা হাসি দিয়ে বলল, ‘ইকবালতো আবার ডায়ালগ দিল।’ দুইদিন পর ইকবাল মামা ফোন দিয়ে জানাল সমিকের খোঁজ নিতে তাঁর ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করেছে তারা বলছে কেন স্যার আপনার ভাগ্নিকে সমিক পাবে? আমরা কী দোষ করলাম? ইকবাল মামা উত্তরে নাকি বলেছে আমার আরও ভাগ্নি আছে। ইকবাল মামার বলা সত্য-মিথ্যা জানি না মজা করা আমাদের পরিবারের অংশ তবে এই নিয়ে বাসায় তখন অনেক হাসাহাসি হল। কোন কোন কাজিনের এখনও বিয়ে হয়নি তা দেখা হচ্ছিল আর হাসাহাসি চলছিল।
আরেকটা ঘটনা দিয়ে লিখা শেষ করি ইকবাল মামা প্রতি বইমেলায়ে একদিন আমাদের নিয়ে যায়। আমরা বটতলায় দেখা করি। ইয়াসমিন মামী আমাদের একটি করে খাম দেন, ভিতরে ৫০০টাকা থাকে। এই টাকা দিয়ে শুধুই বই কিনতে হবে অন্য কিছু কেনা যাবে না। দুনিয়ার ভক্তদের সামনে গর্বিত ভঙ্গিতে আমরা খাম নিয়ে হাঁটি।
আজ ইকবাল মামার জন্মদিন। দূরে আছি দেখে মনে হচ্ছে ইস কী মজা হত এই দিনে! আসলে তেমন কোন মজাই হত না। রাজ্যের জাম ঠেলে ইকবাল মামার বাসায় যাওয়া হত। মানুষ জন থাকত ফলে কথাও হত না,রাতে খেয়ে চলে আসতাম। তবু দেখা হত এই হচ্ছে সুখ। ইকবাল মামাকে নিয়ে আমার খুবই চিন্তা হয়। শিবির শ্রেণীর মানুষজন ইকবাল মামার তাঁর এত সুন্দর লিখার মাধ্যমে কী বলতে চাচ্ছে তা বুঝার কোন প্রকার চেষ্টা তো করেই না উল্টা পাগড়ি বেঁধে বসে থাকে। এরা তো ভয়ংকর মানুষ কী করতে কী করে, ভয় লাগে খুব। সাবধানে থেকো ইকবাল মামা। নিজের বা পরিবারের জন্য না দেশের জন্য তোমার সাবধানে থাকা লাগবে। শুভ জন্মদিন’’।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/জেডএমলি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G