প্যাশন ফল এখন বাংলাদেশে

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১৫, ২০১৫ সময়ঃ ৫:৪১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪২ অপরাহ্ণ

প্যসনবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জার্মপ্লাজম সেন্টার বাংলাদেশের ফলদ বৃক্ষের অনন্য এক সংগ্রহশালা। শুধু দেশে নয়, আয়তনে ও বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সংগ্রহে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে বাকৃবির এই জার্মপ্লাজম সেন্টার। (ফল জাদুঘর) পরিচালক ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিম সম্প্রতি উদ্ভাবন করেছেন পুষ্টি নিরাপত্তায় আরো একটি নতুন ফল ‘প্যাশন’। এ ছাড়াও তিনি ড্রাগন, পার্সিমন, বেনিসন, কেউই স্যাক, রাতুল, গোলাপ খাস, কেন্ট, কারাবাউ, স্ট্রবেরি, অরবরই, বাউকুল, আপেলকুল, মিষ্টি কামরাঙ্গা, ডায়াবেটিক আম, বিচি ছাড়া আম, আঙুর, পেয়ারা, রাম্বুটান, কালোপাতি সফেদা, জাপাটি কাবা, বামন জলপাইসহ প্রচুর ফলের জাত উদ্ভাবন করেছেন।
ড. এম এ রহিম জানান, প্যাশন ফলের উৎপত্তি হয়েছে দণি আমেরিকার রেইন ফরেস্টের আমাজান অঞ্চলে। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং তদসংলগ্ন প্যারাগুয়ে ও উত্তর আর্জেন্টিনায়। প্যাশন ফল একটি বহুবর্ষজীবী লতাজাতীয় উদ্ভিদ। প্যাশন ফল দুই ধরনের। পার্পল প্যাশন ফল (Passiflora edulis) ও হলুদ প্যাশন ফল (Passiflora edulis var flavicarpa)। পার্পল প্যাশন ফল হতে প্রাকৃতিক মিউটেশনের মাধ্যমে হলুদ প্যাশন ফল উৎপত্তি হয়েছে; যা আকারে ও গুণাগুণে মাতৃ পার্পল প্যাশন ফল থেকেও উন্নত। প্যাশন ফলের পাঁচটি পাপড়িসমৃদ্ধ ফুল অত্যন্ত আকর্ষণীয়, মনোমুগ্ধকর, দৃষ্টিনন্দন ও সুগন্ধিযুক্ত। এটি দেখতে অনেকটা ঝুমকোলতা ফুলের মতো। ফুলপ্রেমিক একজন মানুষের এ ফুল দেখে হাত দিয়ে স্পর্শ না করে বা তার গন্ধ না নিয়ে যেন তৃপ্তিই আসে না।
ড. রহিম জানান, বাংলাদেশের দণি-পূর্ব কোণে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান), যা অসমতল, বন্ধুর ভূপ্রকৃতিবিশিষ্ট। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে এ অঞ্চলে মাঠ ফসল উৎপাদনের জন্য তেমন উপযোগী নয়। তবে বর্তমানে পাহাড়ি এলাকার উপযোগিতা যাচাই করে বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। এই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হলুদ প্যাশন ফল চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রায় সব জায়গায়ই এ ফলের চাষ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। তবে দেশের মানুষের কাছে এ ফলের চাষাবাদ সম্পর্কিত তথ্য এখনো ঠিকমতো পৌঁছেনি।
জার্মপ্লাজম সেন্টারের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কৃষিবিদ শামসুল আলম মিঠু জানান, ট্রপিক্যাল ও সাব-ট্রপিক্যাল দেশে এ ফল অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্যাশন ফলের বীজকে আবৃত করে থাকা হলুদ, জিলাটিনাস, সুগন্ধিযুক্ত পাল্পকে পানিতে দ্রবীভূত করে খুবই উপাদেয় শরবত প্রস্তুত করা যায়। এটিকে অন্যান্য জুসের সাথেও মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাল্পকে প্রক্রিয়াজাত করে আইসক্রিম, জুস, স্কোয়াশ, জ্যাম ও জেলি তৈরি করা যায়, যা আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত এবং ফ্রেশ ফল হিসেবেও খাওয়া যায়। বীজ ও খোসা থেকে পেকটিন ও উচ্চমাত্রায় লিনোলিক এসিডসমৃদ্ধ তেল আহরণ করা সম্ভব। ফলের আকার দৈর্ঘ্যে ৪ থেকে ৭ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ৪ থেকে ৬ সেন্টিমিটার।
তিনি জানান, পাল্প ও জুসের রঙ হলুদ এবং টিএসএস ১০ থেকে ১৪ শতাংশ। বছরে দু’বার ফল পাওয়া যায়। প্রথমবার মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং জুন-আগস্ট মাসে ফল পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার জুলাই-আগস্ট মাসে ফুল আসে এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ফল পাওয়া যায়। গাছ লাগানোর ১৪ থেকে ২০ মাসের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। ১৮ থেকে ২০ মাস বয়সের একটি গাছে ১০০ থেকে ২০০টি ফল পাওয়া যায়। গাছপ্রতি ফলন ৫ থেকে ১০ কেজি হয়।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G