কালের স্মৃতিচিহ্ন আহসান মঞ্জিল

প্রকাশঃ মার্চ ৯, ২০১৫ সময়ঃ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

59830570ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক হিসেবে আহসান মঞ্জিলের (Ahsan Manzil) নাম শোনেন নি এমন শিক্ষিত বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেষে দক্ষিণমুখী হয়ে দাঁড়ানো আগুনে লালরঙা এই অসাধারণ কারুকার্যময় অট্টালিকা কেবল অমূল্য স্থাপত্য হিসেবেই নয়, ঢাকা নগরের অতীত ইতিহাস ও তৎকালীন জীবনযাত্রায়ও রেখেছে ব্যাপক প্রভাব। উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত ঢাকায় তো বটেই, গোটা পূর্ববঙ্গেও প্রভাব বিস্তার করেছিলো আহসান মঞ্জিল।

স্থানীয়ভাবে ঢাকাবাসীদের কাছে এর পরিচয় নবাববাড়ি নামে। অর্থাৎ এটা শুধু মঞ্জিল নয়, নবাব পরিবারের আভিজাত্য, বৈভব ও প্রভাবের প্রতীক এই অট্টালিকা। পাশাপাশি দুটো বিশাল দ্বিতল ভবনের পূর্ব পাশের ভবনে ছিলো নবাব পরিবারের বাস এবং পশ্চিম পাশেরটি ছিলো দরবার হল। বুড়িগঙ্গার তীরে ইসলামপুরের কুমারটুলিতে রয়েছে বাংলার অন্যতম নজড়কাড়া ঐতিহাসিক নিদর্শন এই আহসান মঞ্জিল। প্রায় প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীর পদচারনায় মুখরিত থাকে এই গোলাপি প্রাসাদ তথা আহসান মঞ্জিল। ঘুরে এলাম বাংলার এই ঐতিহাসিক স্থানটি।

আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস: বর্তমানে যে জায়গার উপর আহসান মঞ্জিল দাঁড়িয়ে আছে সেটা পূর্বে ইসলামপুরের কুমারটুলি নামে পরিচিত ছিল। এটি ঢাকা শহরের দক্ষিণাংশে অবস্থিত। জমিদার শেখ এনায়েতুল্লাহ তৎকালীন জালালপুর পরগণায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে মাঝামাঝি সময়ে “রংমহল” নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। অতঃপর কিছুদিন পরে শেখ এনায়েতুল্লাহ মারা গেলে তাঁর ছেলে শেখ মতিউল্লাহ বিলাসবহুল প্রমোদভবন “রংমহল”-টি তৎকালীন ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন।

এরপর সেখানে ফরাসিরা তাঁদের বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে। ফরাসিরা এই এলাকায় (বর্তমান যে অংশে আহসান মঞ্জিল আছে) উত্তর-পশ্চিম কোনায় “ল্যুসজাল্লা” নামে একটি চৌবাচ্চা নির্মাণ করে। চৌবাচ্চাটি ছিল অপেক্ষাকৃত গোলাকার। কিছুদিন পর ১৮৩০ সালে খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসি বণিকদের কাছ থেকে কুঠিটি কিনে নেন এবং বসবাসের উদ্দেশ্যে সংস্কার করেন। খাজা আলিমুল্লাহর ছেলে নওয়াব আব্দুল গনি ১৮৫৯ সালে প্রাসাদটি পুনরায় নির্মাণ করেন আর প্রাসাদটি তাঁর স্বীয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামেই নামকরণ করে রাখেন “আহসান মঞ্জিল”।

অতঃপর ১৮৮৮ সালের ৭ই এপ্রিল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আহসান মঞ্জিলের অন্দরমহলের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়, সব মিলিয়ে প্রলয়ঙ্করী এই ঘূর্ণিঝড়ে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে আহসান মঞ্জিল কে পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং বর্তমানে যে সুউচ্চ গম্বুজটি দেখা যায় এমনই একটি গম্বুজ যুক্ত করা হয়। তৎকালীন সময়ে আহসান মঞ্জিলের মতো এতো সুউচ্চ ভবন ঢাকায় ছিলোনা। তাই তখন বহুদূর থেকেও আহসান মঞ্জিলের জাঁকালো গম্বুজটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। বড় গম্বুজসহ যে অংশটি রয়েছে তাকে বলা হয় প্রাসাদ ভবন, যেটা আগে রঙমহল ছিল আর এর পাশেই আরেকটা অন্দর মহল আছে, যা “জানানা” নামেও পরিচিত ছিল।

১৯১৫ সালে নওয়াব সলিমূল্লাহ মারা যাওয়ার পর তাঁর স্বীয় পুত্র হাবিবুল্লাহ তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হলে ঋণের দায়ে একের পর এক জমিদারী পরগনাসমূহ হারাতে থাকেন। তাছাড়া অন্যান্য সন্তানেরা যার যার মত সম্পত্তি নিয়ে আলাদা হয়ে যান। নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল এর ফলে ধীরে ধীরে অবহেলায় ভবনটি পরিত্যক্ত হতে থাকে। অতঃপর ১৯৫৮ সালে নওয়াব হাবিবুল্লাহ মারা গেলে তাঁর পুত্র খাজা হাসান আসকারী নামেমাত্র নওয়াব হন।

দেখার মতো বেশ অনেক কিছুই আছে এই পিঙ্ক প্যালেসে। সবই যদি বলে দেই তাহলে পরে জানা জিনিস দেখে আর কি মজা পাবেন? তাঁর চেয়ে বরং সপরিবারে/সবান্ধব ঘুরে আসুন বাংলার ঐতিহাসিক এই স্থানটি। নিজের চোখেই আবিষ্কার করুন একের পর এক জিনিস। এতোটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, যদি আগে গিয়ে না থাকেন, তাহলে সময় নিয়ে প্রতিটা জিনিস দেখে আপনার ভালোই লাগবে। সময়ের অপচয় হবেনা।

আহসান মঞ্জিল যাবেন কিভাবে?

যারা ইতোপূর্বে আহসান মঞ্জিল যান নি, তাদের বাসা যদি পুরান ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে হয় তাহলে সরাসরি সি এন জি তে করে আহসান মঞ্জিল চলে আসতে পারেন। আর যদি বাসা কাছে হয় পুরান ঢাকার তাহলে রিকশা নিয়েই যেতে পারেন। যারা ঢাকার বাহিরে থেকে আসছেন তারা বাসে/লঞ্চে করে বাবুবাজার/সদরঘাট পর্যন্ত এসে রিকশা করে চলে আসতে পারেন।

জাদুঘর প্রদর্শনীর সময়:

১০-১০.৩০ এর মধ্যে জাদুঘর খুলে দেয়া হয়। টিকেট কেটে আপনাকে ঢুকতে হবে, সাধারণত সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত খোলা থাকে। শনিবার – বুধবারের জন্যে এই সময়সূচী প্রযোজ্য। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ, আর শুক্রবার বিকেল ৩-৩.৩০ এর পরে খোলে।

তো যেকোনো একদিন চলে যান, আর ঘুরে আসুন আহসান মঞ্জিল।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G