অবহেলিত কোহিনুর এখন নরওয়ের জনপ্রিয় গায়িকা

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১১, ২০১৫ সময়ঃ ১:৪২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৪২ অপরাহ্ণ

primi sui motori con e-max

জন্মের সময়কার কথা কিছুই মনে নেই কোহিনূরের। কোহিনূর কেবল মনে করতে পারেন তিন বছর বয়সের ঝাপসা স্মৃতি, ‘বয়স তখন তিন হবে। রাস্তা থেকে এক সাদা চামড়ার ভদ্রলোক আমাকে তুলে নিয়ে গেলেন। নাম ছিল তাঁর ডা. জ্যাক। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন মাদার তেরেসার অনাথ আশ্রমে।

বিশাল এক পরিবারের সদস্য হলাম আমি। ভালোই কাটছিল দিনগুলো। মনে পড়ে ওয়াজেদ ও লরা নামের দুজনের কথা। খুব যত্ন করতেন আমাদের। ডা. জ্যাকও খুব আদর করতেন।’তবে বিশাল ওই পরিবারে বেশি দিন থাকা হলো না কোহিনূরের। ছয় মাস বাদে একদিন ডা. জ্যাক এলেন তাঁর কাছে। বললেন, নরওয়ে নামের এক দেশে যাবে তুমি, সেখানে মা-বাবাও পাবে। যাবে, কোহিনূর? সাড়ে তিন বছরের কোহিনূর মাথা নাড়ল, না, যাব না আমি! কেন?
‘মাদার তেরেসার অনাথ আশ্রম আমার কাছে পরিবারের মতো হয়ে উঠেছিল। সবার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষমেশ রাজি হতে হলো।’আলো-আঁধারি এক পরিবেশে পুরোনো দিনের কথা বলছিলেন কোহিনূর। আমরা যেন ফিরে গিয়েছিলাম সেই অনাথ আশ্রমে। যেখানে অনেক শিশুর ভিড়ে বসে আছে একটা ছোট্ট মেয়ে। কোহিনূর নামের সেই ছোট্ট মেয়েটা সত্যি সত্যি একদিন নরওয়ে নামের একটা দেশে চলে গেল। দিনটি ছিল ১৯৭৬ সালের ১৪ জুলাই। কোহিনূরের মায়ের পরিচয় আমরা জানি না; বাবা কে, তা-ও জানা যায়নি। আমরা জেনেছি, তিনি যুদ্ধশিশু। যুদ্ধশিশু কোহিনূর এখন অনেক বড়, প্রায় বাংলাদেশের সমান বয়স তাঁর। থাকেন নরওয়েতে। সে দেশে নাম করেছেন সংগীতশিল্পী হিসেবে। নরওয়েতে গিয়ে মা-বাবা পেলেন কোহিনূর, পেলেন বড় এক ভাইকে। দত্তক মায়ের নাম অডি নোর্ডবার্গ, বাবা নিল্স নোর্ডবার্গ আর ভাইয়ের নাম নিল্স জুনিয়র। নতুন একটা নামও পেলেন কোহিনূর, ‘আমার নাম রাখা হলো মারি। মারি কোহিনূর নোর্ডবার্গ। মারি নামে ডাকলেও কোহিনূর নামেই আমি স্বচ্ছন্দ এবং গর্বিত। লোকে যখন আমার এই নাম শুনত, জিজ্ঞেস করত, কেন এমন নাম? তখন সবাইকে আমার ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে হতো। কোত্থেকে এসেছি, কীভাবে এসেছি ইত্যাদি। তবে সব সময় বাংলাদেশের কথা বললে আমার গর্বই হতো, এখনো হয়।’মা-বাবার অভাব কখনোই বোধ করেননি কোহিনূর। নতুন মা-বাবা তাঁকে ভরিয়ে রেখেছেন আদরে-স্নেহে-শাসনে। বড় ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর চমৎকার সম্পর্ক। ‘দত্তক মা-বাবাকে নিয়ে আমি ভীষণ গর্বিত। নিজের সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন আমাকে। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বড় ভাগ্যবান আমি। আজ যে আমি এই পর্যায়ে এসেছি, তার পুরো কৃতিত্ব আমার মা-বাবার।’বলছিলেন কোহিনূর। গান করে নাম কুড়াচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। ডাক পেলেন টিভি ধারাবাহিকে। অভিনয় করলেন নরওয়ের জনপ্রিয় লেখক উন্নি লিন্ডেলসের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত গোয়েন্দা ধারাবাহিক হনিংফেলেনে (দ্য হানি ট্র্যাপ)। সেখানে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মারিয়ান ডালের চরিত্রে অভিনয় করে পেলেন দারুণ জনপ্রিয়তা। তবে গানটাকেই নেশা ও পেশা হিসেবে বেছে নিলেন কোহিনূর। নিয়মিত গান লিখতে শুরু করলেন, সুরও দিতে লাগলেন নিজেই। গান মূলত তরুণ, নারী ও শিশুদের জন্য। বড় কথা হলো, আমার গানে তুলে আনতে চাই সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা, বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার কথা। গান আমার সবকিছু। আনন্দে গান করি আমি। রাগ হলে তা প্রকাশ করি গানে। কাঁদিও গানের মধ্য দিয়ে।’বাংলা ও সোমালিয়ান ভাষায় একটা গান করেছেন কোহিনূর। গানের কথা এ রকম, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি আবো (বাবা), আমি তোমাকে ভালোবাসি হয়ো (মা)…’এই গান ভিন দেশে পাড়ি জমানো মানুষদের জন্য, যাঁরা কষ্টে থাকেন নিজের ভাষায় কথা বলতে না পেরে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G