অবরোধে ক্ষতির মুখে ফুল চাষীরা

প্রকাশঃ জানুয়ারি ২১, ২০১৫ সময়ঃ ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ

জেলা প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

flower

টানা অবরোধের কারণে ফুলের বাজারে ধস নেমেছে। ফুলনগরী খ্যাত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার ফুল চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ।

মাত্র ১৫ দিন আগেও যে ফুল বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ঝোপা (২০টি মালা) দরে। সেই ফুল এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকা ঝোপা দরে। ঝোপা প্রতি কৃষক কম পাচ্ছেন একশত টাকা। সঠিক মূল্য না পেলেও লোকসান ঠেকাতে ফুল তুলে বাজারজাত করতে হচ্ছে কৃষকদের । লাভ তো দূরের কথা  খরচ উঠাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আর ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষক বাঁচাতে তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে কিছু কিছু মাল দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও কৃষকের সঠিক মূল্য তারা দিতে পারছেন না। তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।  কৃষকরা জানিয়েছেন, অবরোধের কারনে হঠাৎ করেই এই দাম পড়ে গেছে। এই অবস্থা কিছুদিন চললে তারা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তবে সামনে ভালবাসা দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসে তারা ফুরের ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন।

ফুল ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, প্রতিদিন ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকার মাঠ থেকে আনুমানিক ৫ হাজার ঝোপা ফুল রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। যশোরের গদখালীর ফুল বাজারের পরে ঝিনাইদহে ফুলের বাজার রয়েছে। ফুলনগরী হিসেবে খ্যাত কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মাঠে গিয়ে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ ফুল ক্ষেতে ফুল ফুটে আছে। হলুদ ও বাসন্তি রং এর গাঁদা ফুলে মাঠ রঙ্গিন। কৃষকরা মুল্য না পেয়ে ফুল তুলছে না। ফুল না তুললে গাছগুলো মারা যেতে পারে শুধুমাত্র সেই গাছ থেকে ফুল তুলে লোকসানে বাজারে বিক্রি করছেন তারা।

কথা হয় বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুল চাষী আকরাম হোসেনের সাথে। তিনি  প্রতিক্ষণকে জানান, ১৫ বছর ফুলের চাষ করছেন এতো কম মুল্যে কখনও ফুল বিক্রি করতে হয়নি তাকে। তার এবার ১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। তিনি আরো জানান, বছরের যে কোন সময় ফুলের চারা রোপন করা যায়। একটি চারা রোপনের তিন মাস পর থেকে ফুল তোলা যায়। আর গাছটি ফুল দেয় আরো ৩ থেকে ৪ মাস। ৩৩ শতাংশের এক বিঘা জমিতে চাষ করে ফুল তোলা পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। এই জমিতে ২ হাজার ঝোপা ফুল হয়, যা বিক্রি করলে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ফুলের দাম কম হওয়ায় তার অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে।

কৃষকের হিসাব অনুযায়ী বর্তমান বাজার মুল্যে এক বিঘায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। ফুল ব্যবসায়ি আলমগীর হোসেন আমাদেরকে জানান, চট্ট্রগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি ফুল বিক্রি করেন। নিজের দুই বিঘা জমিতে চাষ রয়েছে। পাশাপাশি মাঠ থেকে ক্রয় করে বিভিন্ন স্থানে ফুল নিয়ে যান তিনি। কৃষককের ক্ষেত থেকে ফুল ক্রয় করার পর ঝোপা তৈরী করতে হয়। একটি ঝোপা (মালা) তৈরী করতে তাদের ব্যায় হয় ১০ টাকা। এছাড়া রয়েছে পরিবহন খরচ। বর্তমানে ফুল বিক্রির পর এই খরচটিও উঠছে না তার ।

তিনি আরও বলেন, মুল্য না থাকায় ক্ষেত থেকে অনেকে ফুল তুলছেন না। আলমগীর হোসেন আরো জানান, শুক্রবার তিনি ২৪০ ঝোপা ফুল ঢাকায় নেবার চেষ্টা করেছিলেন। সেখানে ১শত ঝোপা পাঠাতে পেরেছেন। বাকিগুলো ফেরত নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ফুল বাজারের অবস্থা এমন দাড়িয়েছে কৃষকের ক্ষেত থেকে তোলা, আর ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ হচ্ছে না। যে কারনে ফুল বাজারে নিচ্ছেন না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবরোধের কারনে তারা ফুল বাজারগুলোতে নিতে পারছেন না। যে কারণে দাম কমে গেছে। এই অবস্থা আরো কিছুদিন চললে অন্যান্য ফসলের সাথে ফুল চাষীরাও মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ব্যবসায়ীরা জানান, কালীগঞ্জ থেকেই হানিফ, মামুন, ইউনিক ও শ্যামলীর বেশ কয়েকটি গাড়ি ফুল পরিবহন করে। অবরোধ আর হরতালে এই গাড়িগুলো বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G