যে খাবারগুলো শিশুদের জন্য বিপদজনক

প্রকাশঃ আগস্ট ৮, ২০১৫ সময়ঃ ৯:১৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

BABY-FOOD-MESSসুস্থ সবলভাবে একটি শিশু বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক পুষ্টিকর খাবার। শিশুর বৃদ্ধির জন্য ও সঠিক বুদ্ধির বিকাশের জন্য শিশুকে খাবার দেয়ার সময় কিছু দিক অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

অনেক সময় অনেক আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনেক ধরনের খাবার শিশুকে দিতে চান বা খাওয়াতে চান তার সব কিছু হয়তো শিশুর জন্য ভালো নাও হতে পারে। তাই নিজে সন্তানকে খাওয়ানোর সময় বা অন্য কেউ কিছু খাওয়ানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে খাবার গুলো শিশুর ওই বয়সের জন্য উপযুক্ত কিনা, যদি উপযুক্ত হয়ও তা সঠিক আকৃতি বা অবস্থায় দেয়া হচ্ছে কিনা।

অনেক ধরনের খাবার আছে যেসব খাবার শিশুর ১ বছর বা তার কিছু সময় পরেও তাদের জন্য বিপত্তি ডেকে আনতে পারে। শিশুর ১ বছর হওয়ার আগে যেসব খাবার শিশুকে দেয়া বিপদজনক তার একটি তালিকা এখানে উল্লেখ করছি-

বিপদজনক খাবারগুলো:

১/ বাদামঃ

শিশুদের সীমিত দাঁত নিয়ে এই বয়সে আস্ত বাদাম খেতে দেয়া বিপদজনক কারন তারা ভালো ভাবে চিবিয়ে খেতে শেখে না তখনও। এমনকি শিশুরা ৩-৫ বছরের হলেও আস্ত বাদাম না দিয়ে গুঁড়ো করে বা ছোট টুকরো করে খেতে দিতে হবে।

২/ বড় ফলঃ

ফল যেমন আঙ্গুর, বেরি ইত্যাদি ফলও যদি আস্ত দেয়া হয় শিশুরা কম দাঁত নিয়ে চিবিয়ে খেতে পারবে না। তাই এসব ফল দিতে হলেও ছোট ছোট টুকরো করে কামড়ের আকারে দিতে হবে।

৩/ সবজির বড় টুকরো

সবজির বড় টুকরো যেমন গাজর, শশা ইত্যাদির এবং ফলের বড় টুকরো যেমন আপেল, নাশপাতি ইত্যাদি দেয়া উচিত নয় এই বয়সে। ভালভাবে রান্না করে ছোট টুকরো করে বা পিষে দিতে হবে।

৪/ কিশমিশঃ

এই বয়সে তাদের কিশমিশ দেয়াও ভালো নয়। কিছুটা বড় হওয়ার পর দিতে হবে।

৫/ পপকর্ণঃ

শিশুর এই বয়সে পপকর্ণ দেয়াও বিপদজনক। কারন এটি তারা চিবিয়ে খেতে পারবে না ভালোভাবে, গলায় আঁটকে যেতে পারে।

৬/ শক্ত চকলেট বা জেলিঃ

এই খাবারগুলোও শিশুদের দেয়া যাবে না, বর্জন করতে হবে এই বয়সে।

৭/ অ্যালার্জি উৎপাদক খাবারঃ

কিছু খাবার আছে যেগুলো শিশুর প্রথম দিকে দেয়া উচিত নয় যা অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে। যদি পরিবারের অন্য কারো কোন এক বা একাধিক খাবারে অ্যালার্জি থাকে তাহলে সেই খাবারগুলো শিশুর কিছুটা বয়স বৃদ্ধির পর সতর্কতার সাথে দিতে হবে। দেখতে হবে তার কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় কিনা। যদিও একজনের একটি খাবারে অ্যালার্জি থাকলে অন্যজনেও সেই খাবারে থাকবেই এমন কোনো কথা নেই। আর চাইলে সেগুলো দেয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিলে ভালো হয়।

৮/ বাদামঃ

চিনাবাদাম বা এই ধরনের কিছু বাদাম অ্যালার্জির সৃষ্টি করে থাকে তাই সবচেয়ে ভালো হয় এসব খাবার শিশুর এক বছর বয়স হওয়ার আগে না দেয়া। আর যদি পরিবার কোন সদস্যের বাদামে অ্যালার্জি থাকে তাহলে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করে দিতে হবে বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে দিতে হবে।

৯/ ডিমঃ

এই বয়সে কিছুটা অ্যালার্জি উৎপাদক খাবার হচ্ছে ডিম। তবে সবার সমস্যা হবেই তা নয়। তাই পরিবারে যদি কারো ডিমে অ্যালার্জি থাকে সেক্ষেত্রে কিছুদিন অপেক্ষা করে দেয়াই উত্তম। যদি অ্যালার্জির কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ডিম খেতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে দিতে হবে ধীরে ধীরে।

১০/ চিংড়ী মাছঃ

সব বয়সে সবচেয়ে বেশি অ্যালার্জি উৎপাদক খাবার হচ্ছে চিংড়ী মাছ। তাই শিশু বেশ কিছুটা বড় না হওয়া পর্যন্ত এই খাবারটি না দেয়াই ভালো।
স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি ফলটিও অ্যালার্জি উৎপাদক। তাই শিশুদের এক বছর বয়স পর্যন্ত না দেয়াই ভালো।

১১/ টক ফলঃ

অনেক সময় টক ফল যেমন টক কমলা, লেবু ইত্যাদি সব শিশুদের সহ্য হয়না। এর ফলে অনেক শিশুদের দেহে ফুসকুড়ি হতে পারে। তাই একদম কম বয়সে এগুলো না দেয়াই ভালো।

১২/ চকলেটঃ

অনেক শিশুদের চকলেটে অ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে। তাই কমপক্ষে কয়েক বছর চকলেট না দেয়াই ভালো। আর চকলেট দাঁতের সুরক্ষাকারী ইন্দ্রিয়কে কাজ করতে বিলম্ব ঘটায়।
অন্যান্য বিপদজনক কিছু খাবার

১৩/ গরুর দুধঃ

শিশুর প্রথম জন্মদিনের আগে গরুর দুধ না দেয়াই ভালো। কারন গরুর দুধে থাকে বেশি প্রোটিন এবং সোডিয়াম যা শিশুর ছোট অন্ত্রে তা পরিপাক করতে ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়া গরুর দুধে মায়ের দুধ ও ফর্মুলা দুধের থেকে কম আয়রন এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড কম থাকে যা শিশুর বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে যদি কম বয়সে গরুর দুধ দেয়া হয় তাহলে অ্যাসিডিটির ও অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে।

১৪/ মধুঃ

অনেকের মাঝেই প্রচলিত আছে যে শিশুর জন্মের পরই মুখে মধু দেয়া। এটা শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। কমপক্ষে এক বছর পর্যন্ত শিশুকে মধু দেয়া যাবে না। কারন এতে Clostridium botulinum নামক জীবাণু থাকে। যা বড়দের জন্য ক্ষতিকর না হলেও শিশুদের জন্য বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

১৫/ সামুদ্রিক মাছঃ

টুনা, স্যামন, কোরাল ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছে উচ্চ পরিমানে পারদ থাকে তাই এগুলো শিশুদের দেয়া ঠিক নয়।
পাস্তুরাইজেশন ছাড়া দুধে অনেক ধরনের বিপদজনক ব্যাকটেরিয়া থাকে পাস্তুরাইজেশন ছাড়া দুধে তাই ছোট শিশুদের দেয়া উচিত না।

১৬/ চা এবং কফিঃ

চা, কফি, কোকোয়াতে থাকে ক্যাফেইন যা ক্যালসিয়াম হজমে বাধা দেয়। তাই এই সব পানীয় শিশুদের এবং ছোট বাচ্চাদেরও পান করতে দেয়া উচিত নয়।

১৭/ কার্বোনেটেড ড্রিংকসঃ

পেপসি, স্প্রাইট, কোক, সোডা পানি এসব কার্বোনেটেড ড্রিংকসে প্রচুর চিনি, সোডিয়াম এবং আর্টফিশিয়াল ফ্লেভার দেয়া থাকে যা শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব ড্রিংকসের গ্যাসের কারনে কার্বোনেশন ঘটে যা শিশুদের ছোট পাকস্থলীতে সমস্যার সৃষ্টি করে।

১৮/ লবনঃ

শিশুর খাবার তৈরিতে খুব কম পরিমান লবন ব্যবহার করা উচিত। কারন লবনেও রয়েছে প্রচুর সোডিয়াম যা শিশুর পাকস্থলীতে খাবার পরিপাকে সমস্যার সৃষ্টি করে।

প্রতিক্ষণ/এডি/তাফসির

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G