ফ্রেমে বাঁধা ধূসর ইতিহাস

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫ সময়ঃ ৩:৫৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

1-05-newsnextbd১. তুরস্কের সমূদ্র সৈকতে ভেসে আসা শিশুর নিথর মরদেহ:

তুরস্কের সমূদ্র সৈকতে ভেসে আসা তিন বছর বয়সী এক শিশুর নিথর মরদেহ উপুর হয়ে পড়ে থাকে। তার পরনে লাল জামা, নীল হাফ প্যান্ট, পায়ে জুতা। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরীয় মৃত শিশুটির শরীরে। শরণার্থীর মর্যাদা না পেয়ে মারা যাওয়া শিশুটির নাম আয়লান। তার মর্মস্পর্শী ছবিটি তোলেন তুর্কি ফটোসাংবাদিক নিলুফার দেমির। আর ছোট্ট আয়লানের নিথর দেহের ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আবারো সর্বত্র ওঠে আলোচনার ঝড়। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ধনী দেশগুলো। অভিবাসী-সংকট নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ইউরোপ প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে। শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ইউরোপের যে কর্তাব্যক্তিরা এত দিন মুখ ফিরিয়ে ছিলেন, তারাও শুরু করেন মানবিকতার ডাকে সাড়া দিতে।

২. সুদানের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ১৯৯৩ :24-565x371

বিশ্ববিখ্যাত ও ঐ সময়ে বহুল সমালোচিত এ ছবিটি ১৯৯৩ সালে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আর এর মাধ্যমেই আলোতে আসেন আলোকচিত্রশিল্পী কেভিন কার্টার। সুদানের
দুর্ভিক্ষের সময় তোলা এ ছবিটি ১৯৯৪ সালে জিতে নেয় পুলিৎজার পুরস্কার। এতে দেখা যায়, দুর্ভিক্ষে খেতে না পেয়ে জীর্ণ-শীর্ণ একটি শিশু মাটিতে মুমূর্ষ অবস্থায় পড়ে আছে, আর খুব কাছেই একটি শকুন বসে আছে। যেন কখন শিশুটি মারা যাবে ও তাকে খেয়ে ফেলতে পারবে তারই অপেক্ষা। ছবিটি ভয়াবহ বিতর্ক সৃষ্টি করে। কথা উঠে যে, ছবি তুলে শিশুটিকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা কেভিন করেছিলেন কিনা? কেভিনের নিজেরও মনে হতে শুরু করে যে, তিনি হয়তো চাইলে শিশুটিকে বাঁচাতে পারতেন। তীব্র মানসিক যন্ত্রণা থেকে ১৯৯৪ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন। যদিও শিশুটি সেসময় মারা যায় নি, আরো বেশ কিছুদিন বেঁচে ছিল। নিয়ং কং নামের ছবির ছেলেটি মারা যায় ২০০৭ সালে।

31৩. রানা প্লাজায় ধস:

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মুহূর্তেই মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে শোক এবং উৎকণ্ঠা। ধ্বংসস্তূপ থেকে আহত-নিহত মানুষ বের করে আনার পুরো প্রক্রিয়াটা চলেছে দিনের পর দিন আর এরই মধ্য দিয়ে আমরা সবাই একটু একটু করে উপলব্ধি করেছি নিদারুণ সেই বিভীষিকা। ব্যাপারটি এতই গুরুতর যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে এর সংবাদ চলে যায়, সেই সঙ্গে এই ধ্বংসস্তূপ থেকে তোলা বিভিন্ন ছবি। যেমন, তাসলিমা আখতারের তোলা প্রচ্ছদের এই ছবিটি। দুইজন মানুষের পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার যে ভীষণ আকুতি উঠে এসেছে এই ছবিতে, শত বলেও তা ব্যাখ্যা করা যাবে না। কী করে মৃত্যু হলো তাদের? তারা কি একজন আরেকজনকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন? কেমন ছিলো তাদের জীবন, তাদের স্বপ্ন? না জানি কী ভীষণ ভালোবাসায় মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরেছিলেন তারা! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখনো আলোচিত হয়ে যাচ্ছে মর্মস্পর্শী এই নিদারুণ করুণ ছবিটি। 

৪. মানুষ মানুষের জন্য:5-530x371

উগান্ডাতে ১৯৮০ সালে চলছিল প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ। সেখানে অনাহারে থাকা এক শিশুর জীবন্ত কঙ্কালে পরিণত হওয়া হাতটি পরম মমতায় ধরে রেখেছেন দাতব্য সংস্থার একজন কর্মী।

এরকম অসংখ্য অসহায় মানুষের আর্তনাদের হাহাকার ফুটে উঠেছিল এই একটি আলোকচিত্রের মধ্য দিয়ে। যারা সেসময় চরম অমানবিক জীবনযাপন করছিল। তাদের এই নিদারুণ নির্মমতার      মর্মস্পর্শী এ ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী   মাইক ওয়েলস।

6-04-newsnextbd-528x371

৫. ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার থেকে পড়ন্ত মানুষ:

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় বিধ্বস্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার। পুরো ভবনে আগুন ধরে গেলে অনেকেই নিচে ঝাঁপ দেন জীবন বাঁচানোর আশায়। সেরকমই এক হতভাগ্য ব্যক্তির ছবি তুলেন এপি’র আলোকচিত্রশিল্পী রিচার্ড ড্রিউ। বলাই বাহুল্য যে, মানুষটি বাঁচাতে পারেননি নিজের জীবন।

৬. থাইল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা:7-03-newsnextbd-528x371

থাইল্যান্ডের নির্বাসিত স্বৈরশাসক ফিল্ড মার্শাল থাম কিটিকাচর্নের দেশে ফিরে আসার কথা শুনে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো থাইল্যান্ড। থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের উপর গণহত্যা চালানো হয় ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর। বহু ছাত্রকে গুলি করে, পিটিয়ে বা আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। সেরকমই একটি ঘটনার ছবি তুলেছেন নীল ইউলেভিচ, যেটা ১৯৭৭ সালে পুলিৎজার প্রাইজ পায়।

8-02-newsnextbd৭. ভূপালের গ্যাস ট্রাজেডি:

১৯৮৪ সালে ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভূপালে একটি কীটনাশক তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটলে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানাইড গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫ জন মানুষ
আহত হন, নিহত হন প্রায় ১৫ হাজারের মতো মানুষ। ফটোসাংবাদিক পাবলো বার্থোলোমিউ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ ছবিটি তারই তোলা যা দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটিকে মাটিতে সমাহিত করার আগ মুহূর্তে তোলা হয়। 

9-01-newsnextbd-593x371

 

৮. যখন সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়:

১৯৮৫ সালে কলম্বিয়াতে আরমেরো নামে ছোট গ্রামের পাশেই নেভাদো দেল রুইজ নামে আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। পুরো গ্রামের উপর এর প্রতিক্রিয়া ছিল ভয়াবহ। এতে ব্যাপক ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়। অমায়রা স্যানচেজ নামে ১৩ বছরের এই মেয়েটি একটি বিধ্বস্ত ভবনের নিচে আটকা পড়ে। উদ্ধারকর্মীদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে টানা ৬০ ঘণ্টা আটকে থাকার পর সে মারা যায়। 

প্রতিক্ষণ/এডি/জেবিএম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G