ইংরেজি শিখলেই কি ইংরেজ হওয়া যায়?

প্রকাশঃ নভেম্বর ২৩, ২০১৬ সময়ঃ ৩:৩৯ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৪৭ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

protikhon

এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে প্রথমে রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত আপসোসমাখা কথাটিই বলতে হয়; যা তিনি নোবেল পাওয়ার পরে বাঙালির আচরণগত পরিবর্তন দেখে অবাক -বিস্ময়ে বলেছিলেন,

‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী
রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি’

ঠিক তাই আজও আমরা এই একই ভুল করে যাচ্ছি এবং একই ভুলের মাশুল গুণছি। বাংলা আামাকে জানতে-বুঝতে হবে কারণ এটা আমার মায়ের ভাষা। অন্যদিকে ইংরেজি প্রয়োজনের ভাষা। তাই জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া বহুল প্রচলিত একটি বিদেশী ভাষা জানলে নিজের জ্ঞান বাড়বে বৈ কমবে বলে মনে হয় না। এটুকু পর্যন্ত সব ঠিকঠাক।

কিন্তু সমস্যাটা দাঁড়ায় তখনই, যখন কেউ ইংরেজি শিখে মনেপ্রাণে ইংরেজ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। এজন্য সে বিদেশী পোশাক পড়ার পেছনে মনোযোগ দেয় অনেক বেশি। তার ধারণা, ইংরেজ হতে হলে ইংরেজি কথার চেয়ে আগে ইংরেজদের মতো পোশাক পড়া বেশি জরুরী। তাহলেই ইংরেজ হওয়ার দিকে ধাবিত হওয়া যাবে তাড়াতাড়ি।

তাহলে, ইংরেজি বলতে হলে কি প্রথমে ইংরেজ হতে হবে? এমন শর্ত পৃথিবীর কোন আইনে আছে আমার জানা নেই। যে বিদেশীরা বাংলা শেখেন তারা কি বাংলা ভাষা শেখার পাশাপাশি বাঙালি হওয়ার জন্য ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েন? এই ভিনদেশীরা যদি সে চেষ্টা না করে থাকেন; তাহলে আমরা কেন এ ব্যর্থ চেষ্টা করছি?

বাবা-মা, শিক্ষক নাকি নিজেই এ অজ্ঞতার জন্য দায়ী?

ইংরেজ হতে চায়লেই কি ইংরেজ হওয়া যায়?

যদি তাই হতো, তাহলে সবার আগে মাইকেল মধুসূধন দত্তই সে অধিকার পেতেন। শুধুমাত্র ইংরেজ হওয়ার জন্য হিন্দুধর্ম পরিবর্তন করে খ্রীস্টান হলেন, বিয়েও করলেন একজন খ্রিস্টান মহিলাকে, ইংরেজিতে চমৎকার কবিতা-উপন্যাসও লিখেছিলেন। আর পোশাক, তাও একেবারে বিলেতি ঢঙে পড়া। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। উল্টো নিজের ভাষায় না লিখে কেন পরের ভাষায় লিখছেন; এরকম অভিযোগ শুনতে হয়েছিল! অবশেষে সমস্ত ভুল ভাঙার পর একে একে অবিস্মরণীয় কালজয়ী সব সাহিত্য নিজের মায়ের ভাষায় সৃষ্টি করতে শুরু করেছিলেন। আমৃত্যু তাই করে গেছেন।

সুতরাং শেষ কথা হল এই, যেখানে মহাজ্ঞানী মাইকেল মধুসূধন দত্ত সবকিছু বিকিয়ে দিয়েও ইংরেজ হওয়ার অনুমতি পাননি; সেখানে আমি-আপনি তো কোণ ছাড়। বাঙালির শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবান এই মানুষ যা পারেনি, তা আগামীতে আর কেউ পারবে বলে মনে হয় না। কারণ তার মতো মেধাবী হওয়াটাই যে একরকম অসম্ভব। কেন বলছি তা বুঝতে হলে মাইকেলের সমস্ত জীবনী পড়ে নিন; তাহলেই উত্তর খুঁজে পাবেন।

শেষ করছি বাঙালির আধুনিক কবি মধুসূদনের বাংলায় ফিরে আসা সেই কবিতা ‘বঙ্গভাষা’র কিছু অংশবিশেষ দিয়ে –

“ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!”
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে
মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে॥

 

শারমিন আকতার
নির্বাহী সম্পাদক

প্রতিক্ষণ ডট কম
[email protected]

=======

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G