সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে স্বকীয়তা হারাচ্ছে জাতি (পর্ব-১)

প্রথম প্রকাশঃ জুলাই ২১, ২০১৭ সময়ঃ ৭:৪৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ

আফজাল হোসাইন মিয়াজী:

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সম্পর্কে জানতে হলে সংস্কৃতি ও আগ্রাসন বিষয় দুটিকে আলাদা করে সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন।

*সংস্কৃতি কি? সংস্কৃতি শব্দের আভিধানিক অর্থ চিৎপ্রকর্ষ বা মানবীয় বৈশিষ্ট্যের উৎকর্ষ সাধন। ইংরেজি Culture-এর প্রতিশব্দ হিসেবে সংস্কৃতি শব্দটি ১৯২২ সালে বাংলায় প্রথম ব্যবহার করা শুরু হয়।

কোন স্থানের মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবিকার উপায়,সঙ্গীত,নৃত্য,সাহিত্য, নাট্যশালা, সামাজিক সম্পর্ক, ধর্মীয় রীতি-নীতি,শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়, তাই সংস্কৃতি।

উক্ত বিষয়গুলোকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ১.বস্তুগত সংস্কৃতি ২.মানস সংস্কৃতি । প্রথমভাগ নিত্যদিনকার জীবনযাপনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।আর দ্বিতীয়ভাগ জীবন উপভোগের ব্যবস্থা এবং উপকরণের সাথে সম্পকির্ত।

নৃবিজ্ঞানী টেইলরের ভাষ্যমতে, “সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জিত নানা আচরণ, যোগ্যতা এবং জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতি, আদর্শ, আইন, প্রথা ইত্যাদির এক যৌগিক সমন্বয় হল সংস্কৃতি।

বলা হয় যে…culture is the mirror of a mirror of a nation.সংস্কৃতি হলো একটি জাতির দর্পণস্বরুপ। সংস্কৃতি হল মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । মানুষের জীবনটাও একটি সংস্কৃতি। এ জন্য বলা হয়ে থাকে Man is a culture building animal. মানুষ হচ্ছে সংস্কৃতি তৈরি কারক প্রাণী। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের এ যুগে সুস্থ ও নির্মল সংস্কৃতি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অপসংস্কৃতির সুনামিতে সুস্থ সংস্কৃতি ভেসে যাচ্ছে।

*আগ্রাসন কি? Aggression – ইংরেজি এই শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে বিনা উত্তেজনায় আক্রমণ করা। অথবা অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা বা আক্রমণ করা। প্রথম বিপক্ষতাচারণ,প্রথম আঘাত বা আক্রমণ।তবে যেটা বাস্তব তা হলো-

প্রথমতঃ‘একজনের পছন্দের ওপরে অন্যের পছন্দকে কৌশলগতভাবে এমনভাবে চাপিয়ে দেয়া যাতে তারা পর্যায়ক্রমে তাতে প্রভাবিত হয় এবং একসময় একজনের পছন্দকে অন্যজন গ্রহণ করে।

দ্বিতীয়তঃ যুব এবং তরুণ সম্প্রদায়ের শিক্ষার মাধ্যমে এমন কিছু বিষয় সংযুক্ত করা এবং এমন কিছু বিষয় কৌশলে বাতিল করা যাতে তাদের চিন্তাধারার পরিবর্তন সাধিত হয় এবং একজনের পছন্দকে অন্যজনের পছন্দ হিসেবে গ্রহণ করে।

সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর সংস্কৃতি অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। আসলে সাম্রাজ্যবাদের বিভিন্ন অংশ রয়েছে; এর মধ্যে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ সবচেয়ে জঘন্য। কথায় আছে কোন জাতিকে ধ্বংস করে দিতে চাইলে তাহলে তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দাও। সারা পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদীরা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে অপসংস্কৃতির মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ইচ্ছেমত পৃথিবী দখলের পায়তারা করছে।এ ক্ষেত্রে  তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G