খোদ চসিকের বিরুদ্ধেই পাহাড় কাটার অভিযোগ

প্রকাশঃ মার্চ ২২, ২০১৭ সময়ঃ ৫:৩৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বিপ্লব পার্থ, চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এর বিরুদ্ধেই এবার নির্বিচারে পাহাড় কেটে লেক সিটি আবাসন প্রকল্প নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে। প্রকাশ্যেই পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংসের এই কার্যক্রম  চললেও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

পরিবেশ আদালত সূত্রে জানা গেছে, চসিকের লেক সিটি  প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে চলছে এই পাহাড় নিধন। প্রকল্পটি তদারকি করছেন পাহাড়তলীর ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও পাহাড় কাটার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান- খলিল ব্রাদার্সের কর্ণধার খলিলুর রহমান। দীর্ঘ দুই বছর ধরে প্রকল্পের নামে প্রায় ২ একর আয়তনের পাহাড় কেটে তারা সমতল করে ফেলেছেন। এর আগেও ৫ টি পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

অথচ ২০১৪ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে কিছু শর্ত দিয়েছিল। শর্তে উল্লেখ ছিল যে, পাহাড় ধ্বংস না করে প্রকল্পটি তৈরী করতে হবে। তবে পাহাড় রক্ষার জন্য পাহাড়ের আশে পাশে রিটেইনিং ওয়াল দেয়া যাবে।

উল্লেখিত এসব শর্ত মেনে নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অঙ্গিকারপত্র দেয় যে,‘ তারা কোন পাহাড় কাটবে না। ২০৮ ও ২৭৮ দাগের কোন পাহাড়ে তারা কোন রকম কাজ করবে না’। কিন্তু ২০১৫ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে জানা যায়, সেখানে ১৫ একর পাহাড়ের কোন নমুনা এখন আর নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঐ প্রতিবেদন পরিবেশ অধিদপ্তরের সচিবের কাছে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সির্টি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ঐ এলাকার নির্বাচিত কাউন্সিলর জসীমের নেতৃত্বে ফের পাহাড় কাটা শুরু করে চসিক।

এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৮ মে পরিবেশ অধিদপ্তর ৯ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসীমকে প্রধান করে খলিলুর রহমানসহ ২০জনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর; বারবার নোটিশ দেয়া হলেও বিষয়টির কোন সুরাহা  হয়নি।এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের সচিবের নির্দেশে চলতি মাসে একটি টিম উক্ত এলাকা পরিদর্শন করেন ।

পরিদর্শন শেষে গত ১৪ মার্চ কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও পাহাড় কাটার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক খলিলুর রহমান এর বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতে চার্জশীট জমা দিয়েছে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০০) অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যাতিত পাহাড় কাটলে অভিযুক্তকে প্রথমে দুই বছরের কারাদন্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার অভিযুক্ত হলে ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার কথা আইনে উল্লেখ রয়েছে।কিন্তু এরপরও বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা।

পরিবেশ অদিপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে লেক সিটি হাউজিং প্রকল্পটি শুরু করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু পরিবেশ অধিপ্তরের কাছে তারা আবেদন করেন ২০১২ সালে। আবেদনে চসিক ৩১ একর পাহাড়ের কথা বলেছিল এবং কন্ট্রোল মানচিত্রে পাহাড় রেখেই প্রকল্পটি করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও তা পরবর্তীতে অমান্যের অভিযোগ ওঠেছে চসিকের বিরুদ্ধে।

এবিষয়ে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক খন্দকার তাহজ্জুদ আলী প্রতিক্ষণকে জানান,‘ আমরা আ্রিইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যেগ নিয়েছি।আমাদের তদন্ত শেষে কাউন্সিলর  জসিম ও খলিল ব্রাদার্সের খলিলুর রহমানকে আসামী করে আদালতে ইতমধ্যে চার্জ শিট দেয়া হয়েছে। বিষয়টি বিচারধীন রয়েছে।’

অভিযোগের দায় স্বীকার করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম বলেন, ‘লেক সিটি হাউজিং প্রকল্প চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্মাণাধীন একটি প্রকল্প। চসিকের একজন কাউন্সিলর হিসেবে আমি শুধুমাত্র প্রকল্পের দেখভাল করেছি। এখানে আমার কি করার আছে? পাহাড় কাটার বিষয়ে চসিক জবাব দেবে।’

প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, লেক সিটি এলাকায় পাহাড় কেটে চারিদিক সমতল করে ফেলা হয়েছে। সেখানে কিছু কিছু ব্যক্তির নামে সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ,‘পরিবেশ অধিদপ্তর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পাহাড় কাটা বন্ধে কার্যত উদাসীন। চসিকের আবাসিক প্রকল্পের অধীনে গত দুই বছর ধরে অনেক পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে।’ এই ধারা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রামে পাহাড়ীভূমি বিলীন হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা স্থানীয়দের।’

এ ব্যপারে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম (০১৮১৯৩২৮০২৩) কে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

লেক সিটি প্রকল্প ও পাহাড় কাটার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিক্ষণকে জানান ‘আমি এ বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করতে চাই না।’

প্রতিক্ষণ/এডি/রাহা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G