গ্রামে বৃষ্টি বরণ

প্রকাশঃ জুলাই ২৯, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৫৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:১৬ অপরাহ্ণ

মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান রুবেলঃ

image_215_70111র্বষাকালের বৃষ্টি বাংলার অপরূপ রূপের একটি নিদর্শন । বৃষ্টি প্রাকৃতিক ঘটনা। আর এই বৃষ্টির সাথে সাথে আসে কবির মনে কবতিা, লেখকের হাতে নতুন নতুন লেখা । সাহিত্যিকরাও বৃষ্টি নিয়ে তাদের সাহিত্যে তুলে ধরনে তাদের ভাবনা আর আবেগ। সইে লেখাগুলো পড়ে পাঠকরাও হয় তৃপ্ত । বৃষ্টি পড়লইে কত কথা মনে হয় , নানান সৃষ্টিচিন্তা মনের ক্যানভাসে এসে উঁকি দেয় । হাজার হাজার পংক্তি আসে মননশীল হৃদয়ের মানুষের মনে । এটা সত্যি যে, বৃষ্টি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে, বৃষ্টির সাহিত্য পাঠ করে পাঠক আনন্দ পায় কিন্তু তার চেয়েওে অনেক আনন্দ পায় মানুষ বর্ষাকে বরণ করায় । গ্রামে বৃষ্টির বরণ এক রকম আর শহরের ব্যস্ততায় তা হয়ে উঠে অন্যরকম । শহরের ব্যস্ততায় যারা হয়তো গ্রামরে বৃষ্টি বরণ করতে পারনে নি আজ তাদের জন্যই গ্রামের বৃষ্টি বরণ নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন ।

গ্রাম বাংলার বৃষ্টিঃ
মনে আনে প্রশান্তি ।
খরতাপ রোদের পর
এক পশলা বৃষ্টি ।
প্রতিটি ফোঁটায় ফোঁটায়
মিলে শুধু প্রাপ্তির তৃপ্তি।

গ্রামের বৃষ্টি নিয়ে কত কবির রয়েছে সুন্দর সুন্দর সাহিত্যের সৃষ্টি । ছন্দে ছন্দে কবি আনন্দ পেয়েছেন লিখে আর দিয়েছেন আনন্দ পাঠকদের হৃদয়ে। কবি তার মনের মাধুরী দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তার রূপ।
গ্রামের বর্ষায় বৃষ্টি বরণ বয়স ও সময়ের উপর নির্ভর করে তার রূপ ও ভাব প্রকাশ করে ।
ছেলেরা বৃষ্টি আসলেই সবকিছু বাসায় রেখে টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে শুরু করে খেলাধুলা । গ্রামের সমবয়সী ছেলেদের ডেকে ফুটবল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে মাঠে । মাঠে জমে থাকে পানি , তারা পানিতে আছাড় খায় আর উঠে দাঁড়ায় । ফুটবল নিয়েও অনেকে গড়াগড়ি করে ।
যাদের ফুটবল নেই , তারা বৃষ্টির সময় পুকুরে নেমে যায় । ডুব দিয়ে খই ভাজার শব্দ উপভোগ করে । আর কারো পুকুরে পানির পরিমান যদি তলিয়ে যাবার মত হয় তাহলে সে মাছ মারার বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে মাঠে মাঠে আর আইলে আইলে মাছ শিকার করতে থেকে।

সত্যি সেই হারানো দিনের ছবিগুলো আজো মনে হয় । যখন দেখি কেউ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ভিজে খেলা করে । তখন আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বারবার মন চায়।

1401866252কৃষকের বৃষ্টি বরণঃ
কৃষকের মনে প্রশান্তি মিলে
প্রয়োজনে বৃষ্টি পেলে ।
খরায় মাটি শুকিয়ে কাঠ
বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে যাক ।
এমন ডাক ডাকতে থাকে গ্রামের সব মেহনতী মানুষ ।

পানি পাওয়ার সাথে সাথে মাঠে হাল ,লাঙ্গল আর কোদাল নিয়ে হাজির হয় কৃষকেরা। বৃষ্টিতে মাথায় মাথল দিয়ে কাজে নেমে পড়ে । বৃষ্টি সবসময় কৃষকের মন আনন্দে ভাসায় না , মাঝে মাঝে অতিবৃষ্টি তাদের কাঁদায়ও । বিশেষত ফসল ঘরে তোলার সময় বৃষ্টি খুবই বিরক্তিকর তাদের জন্য ।

মহিলাদের বৃষ্টি বরণঃ গ্রামের কৃষানী বধূ রান্নার খড়ি শুকিয়ে রাখে অতি যতনে আর বৃষ্টি আসলে তা সংরক্ষনের চিন্তাই আগে তার মনে আসে । তাই বৃষ্টিতে ভিজে হলেও তা রক্ষা করে । গ্রামে বৃষ্টির পানিতে ভাত রান্না করা এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। তাই বৃষ্টির পানি ধরে রাখে মহিলারা । অনেকে আবার বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মনে আনন্দ নিয়ে গোসল করে ।

ছাত্র-ছাত্রীদের বৃষ্টি বরণঃ বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে স্কুল না যাওয়ায় পায়তারা করে তারা । কোন মতে মা বাবাকে বুঝিয়ে স্কুলে না গিয়ে সাথে সাথে দল বেঁধে গোসল করতে বেড়িয়ে পড়ে।

মুজুরের বৃষ্টি বরণঃ মজুরের জন্য বর্ষাকাল সুখকর নয়। বর্ষাকালে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে তারা কাজে যেতে না পেরে চিন্তায় পড়ে যায় পরিবার কিভাবে চলবে । সন্তানদের খরচ আসবে কোথা থেকে । অনেকে কাজ করতে না পেরে পরিবারের সাথে গল্প করে সময় কাটায়।

গবীর-দুঃখীর অবস্থাঃ অতি বৃষ্টির ফলে অনেকের টিনের বাড়িতে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ে । এতে তাদের সব কিছু ভেসে যায়, ভিজে যায় অনেক কিছু এমনকি শরীর এলিয়ে দেয়ায় আশ্রায়স্থল বিছানাও । এমন অবস্থায় খুবই বিপাকে পড়ে যায় তারা । কিভাবে পানি পড়া বন্ধ করে যায় তা নিয়েই তারা লেগে পড়ে।

সব মিলিয়ে বর্ষার বৃষ্টির আনন্দ মাঝে মাঝে কাউকে দিয়ে যায় বেদনাও । তারপরও গ্রাম বাংলার বৃষ্টি সত্যিই অপরূপ।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G