ঢালিউডের সেরা শিশুতোষ চলচ্চিত্র গুলো

প্রথম প্রকাশঃ আগস্ট ১৯, ২০১৫ সময়ঃ ৫:৩২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩৮ অপরাহ্ণ

ফারজানা ওয়াহিদ

চলচ্চিত্রছোটদের জন্য বাংলা চলচ্চিত্রের সংখ্যা খুবই কম। হাতে গোনা যে কয়টি চলচ্চিত্র ছোটদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো এক কথায় অসাধারণ। ছোটদের চলচ্চিত্র যে শুধু ছোটদের জন্য তা নয়। এগুলো বড়দের কাছেও পছন্দনীয়। এই চলচ্চিত্রগুলো দেখে যেন শিশু কিশোররা অনেক কিছু শিখতে পারে তেমন ভাবেই তৈরি করা হয়েছে।যে কয়েকটি চলচ্চিত্র রয়েছে তা থেকে সেরা চলচ্চিত্র গুলো প্রতিক্ষণের পাঠকদের জন্য দেয়া হলঃ

 

 

আমার বন্ধু রাশেদ

 

চলচ্চিত্র

 

পরিচালকঃ মোরশেদুল ইসলাম

অভিনয়ঃ কাওসার আবেদিন,  চৌধুরী জাওয়াতা আফনান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী, ইনামুল হক, আরমান পারভেজ মুরাদ, হুমায়রা হিমু, কাজী রায়হান রাব্বি, লিখন রাহি, ফাইয়াজ বিন জিয়া, রাফায়েত জিন্নাত

 

কাহিনী সংক্ষেপঃ

আমার বন্ধু রাশেদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বানানো হয়েছে। দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার ডাকে এক কিশোরের মনও কীভাবে আন্দোলিত হয়েছে- সে চিত্রই ফুটে উঠবে ছবির কাহিনীতে। প্রেক্ষাপট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মফস্বলের ছোট একটা শহর। আর চরিত্রগুলো হচ্ছে কয়েকজন স্কুলছাত্র। মূল চরিত্র রাশেদ হঠাৎ স্কুলে হাজির হয়। তার নাম আসলে রাশেদ নয়, স্কুলের শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের নিয়ে রাশেদকে এই নামটি দিয়েছিলেন। ছবিতে দেখা যায়, একাত্তরের উত্তাল দিনগুলো যখন ছোট ছোট ছেলেরা বুঝতে পারছে না, রাজনীতিসচেতন রাশেদ তখন ঠিক তার মতো করে সেটা সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। একসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একদিন এই ছোট শহরেও তারা এসে হাজির হয়। ভয়ংকর এক ধ্বংসলীলার সাক্ষী হয়ে থাকে রাশেদ। স্বাধীনতাসংগ্রামের শুরুতে মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে সে। সঙ্গে কয়েকজন বন্ধু। সম্মুখযুদ্ধে বন্দী হয়ে যায় তাদের পরিচিত একজন মুক্তিযোদ্ধা। একদিন রাশেদ ও তার বন্ধুরা তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে। কিন্তু যুদ্ধের ডামাডোলে রাশেদ ও তার বন্ধুদের একসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয়। রাশেদ আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সব বন্ধু যখন আবার একত্র হয় ছোট্ট শহরটিতে, তারা আবিষ্কার করে রাশেদ নামের বিচিত্র ছেলেটি আর নেই। কিন্তু রাশেদের স্মৃতি তার বন্ধুদের হূদয়ে বেঁচে থাকে চিরদিন।

 

দূরবীন

 

চলচ্চিত্র

 

পরিচালকঃ জাফর ফিরোজ

অভিনয়ঃ কাজী অখতারুজ্জামান, মাহবুব মুকুল, ফারুক খান, আবদুল্লাহিল কাফি, ফেরদৌস কামাল, আমান, সাইফুল্লাহ, বান্না, আফনান, ইব্রাহিম, ফয়সাল, প্রান্ত দাস, শান্ত, উইলিয়াম, তারিক, তুহিন, রুবিনা, মেহেদী হাসান ও বিশেষ একটি চরিত্রে কবি আবদুল হাই শিকদারসহ আরো অনেকে।

 

কাহিনী সংক্ষেপঃ

লাবিবের মা নেই। বাবা বড় ব্যবসায়ী। সবসময় সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ছেলেকে দেয়ার মতো তার তেমন সময় নেই। বাড়ি, গাড়ি, দামী খেলনা কোনো কিছুর অভাব নেই লাবিবের। কিন্তু এসব ওর মনকে এতটুকু খুশি করতে পারে না। ও পাখি হয়ে স্বাধীনভাবে আকাশে উড়তে চায়। ঘাসের বুকে রঙিন পাখা মেলে উড়ে বেড়ানো ফড়িং বা প্রজাপতি ধরতে চায়। স্কুল থেকে বাড়ি আর বাড়ি থেকে স্কুলÑ নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা এই গোলকধাঁধা ওর একদম ভালো লাগে না। কিসের একটা প্রচণ্ড তৃষ্ণা ওর হৃদয়-মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে সর্বদা। চাপা একটা চাওয়া-পাওয়ার মাঝখানে ওর মন নামক সুন্দর ভুবনটা ক্রমেই ছোট থেকে ছোটতর হতে থাকে। নিজের মধ্যে কেমন গুটিয়ে যায় ও।

এভাবেই কাটছিল দিন। এর মাঝেই একদিন ওর পরিচয় হয় সাঈফ স্যারের সাথে। সাঈফ স্যারের উপস্থিতি ওর জীবনে সূচনা করে এক নতুন দিগন্ত। সাঈফ স্যার হয়ে যায় ওর বন্ধু। যে কল্পনার রঙ মেখে স্বপ্নের রাজ্যে ঘুরে বেড়াত লাবিব, সেই রঙ বাস্তবে ওর জীবনে বয়ে আনে সাঈফ। সুযোগ পায় মুক্ত আকাশে ডানা মেলার।

এই ছবিতে আমরা একজন শিক্ষককে শাসক নয়, বন্ধু হিসেবে দেখতে পাই। শিক্ষক যে ছাত্রদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে সক্ষম তা এখানে দৃশ্যমান। আমরা দেখতে পাই শিশু লাবিবের মানসিক বিকাশ ও জাতীয় শিশু অভিনয় প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার দৃশ্য, প্রাইমারি বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তিপ্রাপ্তির মতো আনন্দময় সুখবর। একজন স্নেহবঞ্চিত অমনোযোগী শিশুর পক্ষে এসব কিছুই সম্ভব হয় একজন স্নেহপরায়ন আদর্শ শিক্ষকের কারণে। এই ছবিটিতে আমরা দেখি লাবিব শিশু হলেও তার মাঝে মানবিক কিছু গুণ প্রতীয়মান। খাবার টেবিলে বসে ভাবছে এই বুঝি মা ওর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। অথচ তখন ওর পাশে শূন্য চেয়ার ছাড়া আর কিছুই নেই। এই জায়গাটিতে এসে কেউ নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। বিড়ালকে খাবার দিয়ে লাবিব বুঝিয়ে দেয় যে, সমাজে সবাই ভালোবাসার মাঝে বেড়ে উঠতে চায়।

শুধু লাবিব নয়, তার অন্য বন্ধুদের দায়িত্ববোধ চোখে পড়ার মতো। বন্ধুরা লাবিবের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ায়। ছবিটিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি স্পষ্ট প্রতীয়মান। লাবিব মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে একপর্যায়ে লাবিবের বাবার ভুল ভাঙে। তিনি বুঝতে পারেন তার অমানবিকতা এবং ছেলের প্রতি অবহেলার বিষয়টি। তাই সাঈফ স্যার ও বন্ধুদের মাঝে ফিরিয়ে দেন লাবিবকে। লাবিব ফিরে পায় আপন ঠিকানা। ছবিটিতে তোমরা যে স্কুলটি দেখছ তা ঢাকার বিখ্যাত সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল। আর বাড়িটি বনানীর ১৩ নম্বর রোডের মমতা।

 

 

দীপু নাম্বার টু

চলচ্চিত্র

 

পরিচালকঃ মোরশেদুল ইসলাম

অভিনয়ঃ বুলবুল আহমেদ, ববিতা, আবুল খায়ের, গোলাম মুস্তাফা, শুভাশীষ, অরুন

 

কাহিনী সংক্ষেপঃ

দীপুর বাবা সরকারি চাকরি করেন। বদলির কারণে প্রতিবছর দীপুকে বদলাতে হয় স্কুল, পরিচিত পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব ইত্যাদি। সংসারে দুজন ব্যক্তি। বাবা ও দীপু। দীপু জানে ওর মা নেই। রাঙামাটি জিলা স্কুলের ক্লাস সেভেনের ছাত্র দীপু। এই স্কুল, শহরটা খুবই ভালো লাগে ওর। তারেক ছাড়া প্রায় সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার। ঘটনাপ্রবাহে তারেক হয়ে ওঠে দীপুর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। এ পর্যায়ে দীপু জানতে পারে ওর মায়ের কথা। জানতে পারে, বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বহুদিন আগে আমেরিকা চলে গেছেন। দেশে এসেছেন কয়েক দিনের জন্য। ছেলেকে দেখতে চেয়ে ছেলের বাবাকে চিঠি লিখেছেন। দীপু একা একাই মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকায় যায়। মাকে পেয়ে দীপুর মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভূতি জেগে ওঠে। মা ও ছেলের চিরন্তন সম্পর্ক ও চূড়ান্ত অনুভূতিও ধরা দেয় তার জীবনে। সে আবার ফিরে আসে বাবার কাছে। মা চলে যান আমেরিকায়। এদিকে দীপু জানতে পারে তারেকের অপ্রকৃতিস্থ মায়ের কথা। তারেকের স্বপ্ন টাকা আয় করে ওর মায়ের চিকিৎসা করাবে। এরপর শুরু হয় দুঃসাহসিক অভিযান। বুদ্ধি আর সাহস খাটিয়ে তারেকের নেতৃত্বে দেশের প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন মূর্তি পাচারকারী চক্রকে ধরিয়ে দেয়। মূর্তি পাচারকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার পরপরই আসে দীপুর বাবার বদলির চিঠি। দীপুর বাবা আবার বদলি হয়ে যান অন্য শহরে। বন্ধুদের স্মৃতি, কিছু চমৎকার সময় আর অভিজ্ঞতাকে পেছনে ফেলে দীপু চলে যায় অন্য শহরে। বন্ধুদের কাছে থেকে বিদায় নিতে কষ্ট হবে তাই না বলেই চলে যায় দীপু।

ছুটির ঘণ্টা

চলচ্চিত্র

 

পরিচালকঃ আজিজুর রহমান

অভিনয়ঃ  রাজ্জাক (আব্বাস মিয়া), শাবানা (আঙ্গুরী), সুজাতা (মিসেস), খান শওকত আকবর( নানা), খান আতাউর রহমান( পুলিশ), এটিএম শামসুজ্জামান (পন্ডিত)

 

কাহিনী সংক্ষেপঃ

ঈদের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের বাথরুমে সকলের অজান্তে তালা বন্ধ হয়ে আটকে পড়ে একটি ১২ বছর বয়সের ছাত্র। আর তালা বন্ধ বাথরুমে দীর্ঘ ১১ দিনের ছুটি শেষ হওয়ার প্রতিক্ষার মধ্যে দিয়ে হৃদয় বিদারক নানা ঘটনা ও মুক্তির কল্পনায় ১০ দিন অমানবিক কষ্ট সহ্য করার পর কিভাবে একটি নিষ্পাপ কচি মুখ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এমনই একটি করূন দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। প্রধান অভিনেতা – অভিনেত্রী রাজ্জাক আব্বাস মিয়া শাবানা আঙ্গুরী সুজাতা মিসেস খান শওকত আকবর নানা খান আতাউর রহমান পুলিশ এটিএম শামসুজ্জামান পন্ডিত

 

মাটির ময়নাঃ

চলচ্চিত্র

 

পরিচালকঃ তারেক মাসুদ

অভিনয়ঃ আনু চরিত্রে নুরুল ইসলাম বাবলু, রোকন চরিত্রে রাসেল ফরাজী, কাজী সাহেবের চরিত্রে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কাজী সাহেবের স্ত্রী আয়েশার চরিত্রে রোকেয়া প্রাচী, মিলন চরিত্রে শোয়েব ইসলাম।

কাহিনী সংক্ষেপঃ

আনু মাদ্রাসার একজন ছাত্র। আনুর বাবা একজন ধার্মিক লোক। তিনি তাঁর ছোট ছেলে অর্থাৎ আনুকে পড়াশোনার জন্য মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। গ্রামের মুক্ত জীবন থেকে আনু এসে পরে মাদ্রাসার বন্দি জীবনে। সেখানে তাঁর সাথে পরিচয় হয় রোকনের সাথে। দুজনে খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায় খুব অল্প সময়ে। দুজনের সময় কাটতে থাকে মাদ্রাসায়। মাদ্রাসায় মানিয়ে নেয়ার জন্য দুজনকে অনেক কষ্ট করতে হয়। পুরো চলচ্চিত্রটিতে ষাটের দশকের উত্তাল সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকের ঘটনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মিলিয়ে তৈরি মাটির ময়না চলচ্চিত্রটি। ধর্ম ও যুদ্ধের কারণে একটি পরিবার কিভাবে ধ্বংস হয়ে যায় তা দেখানো হয়েছে। সব মিলিয়ে একটি বাস্তব ধর্মী চলচ্চিত্র এটি। চলচ্চিত্রটি দেখে ছোটরা সেই সময়ের সামাজিক প্রক্ষাপট এবং মুক্তিযুদ্ধ সমন্ধে জানতে পারবে।

 

এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী

 

চলচ্চিত্র

 

পরিচালকঃ বাদল রহমান

অভিনয়ঃ গোলাম মোস্তফা, এটিএম শামসুজ্জামান, শর্মিলী আহম্মেদ, সারা জাকের, শিপলু

 

কাহিনী সংক্ষেপঃ

এমিল খেলাঘরের ‘মুক্ত পাখিকে বন্দী কোরো না’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে খুলনা থেকে ঢাকায় পুরস্কার গ্রহণ করতে আসে। আসার পথে ট্রেনে তার সাথে থাকা ৫০০ টাকা হারিয়ে যায়। টাকাটা তার নানির জন্র তার মা দিয়েছিল। এরপর শুরু হয় তার টাকা উদ্ধারের অভিযান। সে তার সঙ্গী হিসেবে খুঁজে পায় ঢাকার একদল বাচ্চা।  তাদেরকে নিয়েই একটা সুন্দর কাহিনী।

 

প্রতিক্ষন/এডমি/এফজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G