পেঁচার দ্বীপে স্বপ্নের যাত্রা!

প্রকাশঃ জুন ১৮, ২০১৫ সময়ঃ ৩:২৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

pechardwip3প্রকৃতি ক্যানভাসের মতো সাজিয়েছে এই বাংলাদেশকে। আয়তনে ছোট হলেও অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ । এর সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। যার মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। কক্সবাজারের অন্যতম এক পর্যটন এলাকা পেঁচার দ্বীপ।

পেঁচার দ্বীপ! কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপে সোজা রেজুব্রিজের কাছেই মারমেইড ইকো রিসোর্ট। রাস্তার ওপর থেকে তাকালে গাছপালার আড়ালে চোখে পড়ে ছোট-বড় অনেক কুটির। বড় রাস্তার ঢাল বেয়ে নিচে নামতেই কানে আসে কলরব। দু’পাশের জলাধারে ঝিকমিক করে ভরদুপুরের রোদ। অভ্যর্থনা কক্ষে এগিয়ে গেলে কেউ একজন রংচঙে বুনোফুলের গুচ্ছ তুলে দেয় হাতে। তারপর আসে স্বাগত পানীয়, মানে ওয়েলকাম ড্রিংক। সদ্য গাছ থেকে পেড়ে আনা ডাব। ডাবের পানি শেষ করতে করতে বাংলো বরাদ্দের কাজ শেষ। যে বাংলোয় থাকার ব্যবস্থা হয়েছে তার নাম একবার শুনে মনে রাখা শক্ত “রোড লাভার স্কুইড”। বাকি গোটা তিরিশেক ভিলা আর বাংলোর নামেরও একই হাল।pechardwip2

কিন্তু ঘরটা সত্যিই মন ভালো করে দেয়ার মতো। বাইরে স্রেফ কুটিরের মতো দেখালেও ভেতরে মোটামুটি আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা মজুদ। স্নানঘরটায় ঢুকলে মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যায়। প্লাস্টিকের বোতলে ভর্তি বাজারি শ্যাম্পুর বদলে কাচের পাত্রে ভেষজ উপায়ে বানানো শ্যাম্পু। সেটা আবার সবুজ গাছের পাতা দিয়ে কায়দা করে ঢাকা। দু’পাশে দুটো কাঠগোলাপ ফুল গুঁজে দেওয়া। সাবান, শ্যাম্পু রাখা হয়েছে নারকেলের লম্বা একটা খোলের মধ্যে।

মারমেইড ইকো রিসোর্টে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন সব জিনিসপত্র যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা হয়েছে। পেঁচার দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ বহাল রেখেই সব বাংলো তৈরি করা হয়েছে। ইয়োগা সেন্টার, স্পা, নৌকা ভ্রমণ, সম্মেলন কক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ সব কিছুরই এখন ব্যবস্থা আছে এই পরিবেশবান্ধব অবকাশ যাপন কেন্দ্রে। pechardwip4

নাগরিক কোলাহল নেই। হাঁকডাক নেই। দুপুরের রোদ মরে এলে কুটিরের সামনের বাঁশের বেঞ্চে গা এলিয়ে দিয়ে বসতে ভারি আরাম। এ সময়টা নৌকা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার জন্যও অতি উত্তম। বাংলোর সারি আর নারকেল গাছ পেরিয়ে হেঁটে গেলে রেজু খালের পাড়। দেখবেন, নীলচে রং ধরতে শুরু করেছে সবে সাগরের শাখা রেজু খালের পানিতে। পাশ দিয়ে ভেসে যাবে বাহারি সাম্পান। দূরে আদিগন্ত বিছিয়ে থাকা সমুদ্র। নৌকা থামবে ওপারের কোনো এক অজানা চরে। বালুকাবেলায় পা রাখতেই হুটোপুটি করে ছুটে পালাবে লাল কাঁকড়ার দল। দখিনা বাতাসের দোলায় মাথা নেড়ে যেন অভিবাদন জানাবে ঝাউবন। তারপর ইচ্ছেমতো নির্জন সাগরতীরে ছুটোছুটি। কোন ফাঁকে বেলা পেরিয়ে যাবে! ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ক্ষতি নেই।pechardwip1

যত তাড়াই থাকুক, বোট ক্লাবের পাটাতনে পেতে রাখা ঢাউস কেদারায় একবার বসে যেতে ভুলবেন না যেন। আকাশে পূর্ণচন্দ্র। সামনে সাগরের জল। আশ্চর্য মৌনতায় ডুবে আছে সমস্ত চরাচর। মন চাইলে গা এলিয়ে বসে থাকুন গভীর রাত অবধি। একদম কাকপক্ষীটিও জ্বালাতন করতে আসবে না আপনাকে।

যেভাবে যেতে হবে: কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চেপে যেতে পারেন পেঁচার দ্বীপে। ভাড়া ২০০ টাকার মতো। মারমেইড ইকো রিসোর্টে বাংলো আছে নানা রকম। এক রাতের ভাড়া ২৫০০-৫০০০ টাকার মধ্যে। বাংলো বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে যাওয়ার আগেই।

ভ্রমণ, বেড়ানো নিঃসন্দেহে একটি বিনোদনমূলক কাজ। আর স্থানটি যদি হয় কোন ঐতিহাসিক স্থাপনা তবে সে ভ্রমণ একদিকে যেমন ভ্রমণের আনন্দকে  বাড়িয়ে তোলে অন্যদিকে জ্ঞান বিকাশেরও মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

প্রতিক্ষণ/এডি/জহির

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G