প্রযুক্তির ফাঁদে শিক্ষার্থীরা -পর্ব -১

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭ সময়ঃ ৬:৪৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:৪৮ অপরাহ্ণ

আফজাল হোসাইন মিয়াজী:

১৪-০৬-২০১৭ ইং ক্লাস নিচ্ছিলাম অষ্টম শ্রেণীতে ক্লাসের এক ফাঁকে প্রশ্ন করলাম.. তোমাদের কাদের বাসায় স্মার্ট ফোন আছে? সবাই দাঁড়িয়ে গেল। দ্বিতীয় প্রশ্ন কারা কারা মোবাইলে গেমস, ভিডিও, গান, ফেইসবুক এগুলোতে সময় দাও? তিনজন ছাড়া সবাই দাঁড়িয়ে গেল। বিস্মিত হলাম …

শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে বাস্তবতার নিরিখে লিখা শুরু করলাম .. “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি। আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে। ভাইবোন সকলেরে যেন ভালবাসি, এক সাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি। ভাল ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা, পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা। সুখী যেন নাহি হই আর কারো দুখে, মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে”।

একটা সময় ছিল যখন মদনমোহন তর্কালঙ্কার-এর লেখা এই কবিতাটি পড়ার জন্যই যেন শিশুদের রাত পোহাত। বই-স্লেট-পেন্সিল, মাস্টার মশাইয়ের বজ্রকন্ঠ, রবিঠাকুর, নজরুল, সুকুমার পড়তে পড়তে পড়তে কখন যে কৈশোর এসে যেত তা কি সবার মনে আছে? যুগ পাল্টাল, আদর্শলিপি কোথায় যেন হারিয়ে গেল!

এখন বিদ্যালয়–মহাবিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপচে পড়া ভিড়। কাঁধে ভারী ব্যাগ, হাতে নোটবুক, স্মার্টফোন, কানে হেডফোন নিয়ে আমাদের শিশুকিশোররা ছুটে জ্ঞানঅন্বেষণে। কেউ পৌছায় সাফল্যের শীর্ষে, কেউ ছিটকে যায় মাঝপথে। পড়াশোনায় অনীহা ও ঝরে যাওয়াদের ব্যর্থতার কারণ নিয়ে শিক্ষক-অভিভাবক সর্বোপরি আমাদের সমাজ কতটুকু অনুসন্ধিৎসু এই প্রশ্নটি থেকে যায়… বর্তমানে যে বিষয়টি আমাদের কিশোর-কিশোরীদের বিপথগামী করছে তা হল প্রযুক্তির অপব্যবহার।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে দক্ষিণ কুমিল্লা একটি ধনাঢ্য অঞ্চল। সিংহভাগ পরিবারের এক বা একাধিক অভিভাবক সদস্য বিদেশে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন। তাই এখানকার প্রত্যেকটা পরিবার প্রযুক্তির সান্নিধ্যে এসে নতুন প্রজন্মকে হুমকির মাঝে ঠেলে দিয়েছে। এমন কোন পরিবার নেই যে পরিবারে একাধিক স্মার্ট ফোন নেই।

কিছু পরিবারে এমন অবস্থা যে, শিশুর হাতেখড়িও প্রযুক্তির সংস্পর্শ দিচ্ছেন ফলে ঐ সব শিশুরা মোবাইল আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে … বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে সারাক্ষণ মোবাইলে গেমস, ভিডিও, অশ্লীল গান, ফেইসবুকে পড়ে থাকে … পরবাসে থাকা অনেক অভিভাবকেরাও তাদের সন্তানদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন না।

অভিভাবকদের সঠিক দিকনির্দেশনা, অসচেতনতা ও অনেক ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের পাঠবৈমুখ্যের একটি প্রধান কারণ। প্রযুক্তির ফাঁদে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে আছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান প্রয়োজন

… চলবে …

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G