মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তুরাগের বিরুলিয়া

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫ সময়ঃ ১:৫৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

2012-01-02-17-15-14-4f01e6229bd90-29প্রাচীন জনপদ, নাম বিরুলিয়া। জমিদার রজনীকান্তের সুদৃশ্য বাড়ি, সঙ্গে প্রায় ১১টি প্রাচীন স্থাপনার জন্য বিরুলিয়া বিখ্যাত। তা ছাড়া এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি মন্দির। ঢাকা শহরের কাছেই এমন একটি জায়গায় একবার ঘুরে আসতে পারেন।

তুরাগ নদের পাড়ে বিরুলিয়া আপনার মন কেড়ে নেবে আশা করি। এখানে পিকনিকও করতে পারেন। বিরুলিয়া যেতে হলে আপনাকে নদ পার হতে হবে। সুতরাং রথ দেখা আর কলা বেচা অর্থাৎ নৌকায় বেড়ানো আর বিরুলিয়া দেখা দুটোই একসঙ্গে হয়ে যাবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরুলিয়ার মিরচিনি মুরালির খুব কদর। তাই তো সারা দেশের বিভিন্ন মেলায় সোনারগাঁয়ের পাশাপাশি বিরুলিয়ার এসব পণ্য বিক্রি হতে দেখা যায়। আর বিরুলিয়া বিখ্যাত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য। বিরুলিয়া গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে নদের পারে অবস্থিত জমিদার রজনীকান্তের সুদৃশ্য বাড়িটি।
আমরা বিরুলিয়ার কাছে খেয়া পারাপারের তুরাগ নদের যে ঘাটে নেমেছিলাম, সে জায়গাটি খুব সুন্দর। ঠিক একটি পুকুরঘাটের মতো শানবাঁধানো। এখানে স্থানীয় এক ব্যক্তির মুখে বিরুলিয়ার ঐতিহ্য ও পৌরাণিক গল্পগাথা শুনে বিরুলিয়া গ্রামের পথ ধরে সামনে যাই। আমাদের পেছন পেছন চলে একদল পিচ্চিপাচ্চা! মেঠোপথ চমৎকার। বৃষ্টির দিন হলে মুখ থেকে ‘চমৎকার’ শব্দটা বের হতো না। তখন এ পথে কাদায় মাখামাখি হয়ে চলতে হতো! বাজার পেরিয়ে সামনে বিশাল মাঠ। তার পাশে প্রায় শতবর্ষের প্রাচীন বৃন্দাবনচন্দ্র জিউ বিগ্রহ মন্দির, আর একটু পরপর লাল মাটির টিনের দোচালা বাড়ি।

এখানে দোকানপাটও রয়েছে কিছু। মাঠের বাঁ পাশে একটি প্রাচীন তেতলা বাড়ি। আমরা কাছের একটি লাল মাটির বাড়িতে ঢুঁ মেরে মাঠের পাশের সেই পুরোনো বাড়িটিতে প্রবেশ করি। কেউ বলল এটা রজনীকান্তের বাড়ি আবার কারও মতে এটি একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ীর বাড়ি। রজনীকান্তের বাড়িটি আসলে বিরুলিয়া গ্রামের শেষ প্রান্তে, নদের কিনারে, যে কথা আগেই বলেছি। সুতরাং এটি কোনো এক ব্যবসায়ীর বাড়ি হওয়ারই সম্ভাবনা ভেবে বাড়িটি ঘুরে দেখি। পরে স্থানীয় লোকজনের কাছে জানতে পারি, বিরুলিয়া ভাওয়াল রাজার জমিদারির একাংশ।

এখন আমরা ইট বিছানো পথে চলছি। পথের দুই পাশে গাছ আর বসতবাড়ি। একটি বাড়ির উঠানে একজন ছাতামিস্ত্রির সঙ্গে দেখা। তিনি তাঁর কাজে মগ্ন, আমাদের দেখে তাঁর মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। আমরাও আমাদের মতো এগিয়ে যাই। এখানে আম আর কাঁঠালগাছ প্রচুর। বেশ কিছু গাছে মৌমাছির চাক লক্ষ করি। সেসব চাকের ছবিও তুলে রাখি। তিন শিশু এখানে তাদের খেলনাগাড়ি নিয়ে খেলা করছে।

অথচ বিরুলিয়ার এই পথে কখনো গাড়ি চলেনি, এমনকি মোটরসাইকেলও চোখে পড়ল না। এভাবেই হেঁটে হেঁটে আমরা জমিদার রজনীকান্তের বাড়ির কাছে পৌঁছে যাই। প্রায় ১২ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বাড়িটির স্থাপত্যশৈলী অসাধারণ। সুন্দর কাজ করা সারা বাড়ি। বাড়ির সামনের উঠান কাঠ দিয়ে ঘেরা, কিন্তু কোনো পরিচর্যা নেই। আমরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে পুনর্নির্মাণ করে বসবাস করা হচ্ছে। কিছু জায়গায় নতুন রং, পলেস্তারা করা। সেসব দেখে মন খারাপ হয়।

বাড়ির চারপাশ তুরাগের পানি দিয়ে ঘেরা। কী যে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ! ছাদ থেকে নেমে কিছু সময় বাড়ির উঠানে বসে গল্প করি, তারপর চলে যাই তুরাগপারে। সেখানে একদল ছেলে তুরাগের পানিতে দাপাদাপি করছে। এখন গেলে বোধ হয় আর এই দৃশ্য দেখা যাবে না।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের পর চারদিকে সবুজে ঘেরা বিস্তীর্ণ মাঠ। তার সামনে গেলে বেড়িবাঁধের ওপারে ঢাকা শহরের মধ্যেই বিরুলিয়ার অবস্থান। মাত্র আধা ঘণ্টায় বিরুলিয়া ঘুরে চলে আসা যায়। যেতে-আসতে সময় লাগে জায়গাভেদে এক থেকে দুই ঘণ্টা। মিরপুর ১ নম্বর হয়ে দিয়াবাড়ির ঘাট হয়ে বিরুলিয়া আসতে পারেন। আবার সরাসরি বিরুলিয়া এসে খেয়া পার হয়ে পৌঁছে যেতে পারেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ,সূত্র: প্রথমআলো

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G