মানবতাবাদী বিজ্ঞানী তেসলা

প্রকাশঃ মে ৩১, ২০১৫ সময়ঃ ৪:৪০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

Teslaমহান এক মানবতাবাদী বিজ্ঞানীর নাম নিকোলা তেসলা। যার নামে বলা হয়ে থাকে- দ্য ম্যান হু ইনভেন্টেড দ্য টোয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরী। অসংখ্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পাশাপাশি মানবতার জন্য তেসলা ছিলেন নিবেদিত। তার ভাষায়- মানবতার কল্যাণার্থে কাজ না করলে বিজ্ঞান কেবলি বিকৃতি।

তেসলা এসি বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের বহুমুখী ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের পথ উন্মুক্ত করেন। ১৯০৬ সালে তিনি একটি ম্যাগাজিনকে বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষ তারবিহীন বার্তা আদান প্রদানে সক্ষম হবে।
বর্তমান মোবাইল ও ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ভবিষৎ উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। তার আবিস্কারের মধ্যে আরো আছে তেসলা কয়েল, এক্স-রে, ব্লেডবিহীন টার্বাইন, ফ্লুরোসেন্ট বাতি, লেজার, আড়াআড়ি চলনসই বিমান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র প্রভৃতি। মৃত্যুকালে তার পেটেন্টের সংখ্যা ছিল সাতশর’ও বেশি। তেসলার কাজের ক্ষেত্র ছিল বিস্তৃত- কম্পিউটার বিজ্ঞান, রোবটিকস, ক্ষেপণাস্ত্রবিদ্যা, রাডার, হার্প, নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞান এবং আরো অনেক কিছু।

তবে তার সবচেয়ে আলোচিত কাজ, মহাশুন্য থেকে শক্তি গ্রহণের তাত্ত্বিক আলোচনা। সোজা কথায় চৌম্বক তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক শক্তিকে হাতের মুঠোয় আনা। তেসলার কিছু লেখা থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, তিনি ‘মুক্ত জ্বালানি যন্ত্র’ টাইপের একটা বিশেষ কিছু তৈরি করেছিলেন। যার সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানির কোনো সম্পর্ক ছিল না। ‘মুক্ত জ্বালানি’ ধারণাটা আজকের ওপেন সোর্স আন্দোলনেরও সূচনাবিন্দু। অনেকের অভিযোগ, এজন্যই তাকে জীবন দিতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ওই গবেষণার জন্যই তাকে সরিয়ে রাখা হয়েছে মানুষের হাতের নাগাল থেকে। এত বড় মাপের একজন বিজ্ঞানীকে মানুষ প্রায় ভুলতে বসেছে।

মৃত্যুর কিছুকাল আগে তেসলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সঙ্গে আলাপের জন্য দিনক্ষণ ঠিক করেন। কিন্তু তার আগেই, (৭ জানুয়ারি, ১৯৪৩) রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন সার্বীয় বংশোদ্ভূত মহান এই বিজ্ঞানী ।

মৃত্যুর পর পরই, ১৯৪৩ সালের মার্চে তড়িৎ প্রকৌশলী ড. জন জি ট্রায়াম্ফের নেতৃত্বে নিকোলা তেসলার সব ধরণের গবেষণাপত্র সংগ্রহ করে মার্কিন সরকার। ট্রায়াম্ফ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়ন দপ্তর অধিভুক্ত জাতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা কমিটির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তখন ওটাকে গবেষণার জন্য সংগ্রহ বলে চালানো হলেও আদতে তা ছিল দৃশ্যপট থেকে তেসলার সব গবেষণা সরিয়ে ফেলা বা জব্দ করারই নামান্তর।
এরপর থেকে তেসলার গবেষণাপত্রগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে আজ পর্যন্ত। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে বন্দি করা হয়েছে কঠিন শেকলে। অবশ্য তেসলার গবেষণাপত্র এর আগেও বেহাত হয়েছিল। ১৮৯৫ এর মার্চে একবার তার ল্যাবরেটরিতে আগুন লেগে যায়। অনেক কাগজপত্র খোঁয়া যায় তাতে। ধারণা করা হয় প্রতিরক্ষা দপ্তর তখন বুঝতে চেয়েছিল তেসলা আসলে কি করছেন। এজন্য আগুনের আঁড়ালে তার কাগজপত্র হাতিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়।

আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের প্রায় অস্পৃশ্য এক জগৎ- তেসলার মুক্ত জ্বালানি বা মহাশুন্য থেকে শক্তি গ্রহণের তাত্ত্বিক আলোচনা। তেসলা সম্পর্কে জানা, তার কাজ নিয়ে চিন্তা করা এখন সময়ের দাবি।

প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G