মুঘল সালতানাতের অসম প্রেম কাহিনী

প্রকাশঃ এপ্রিল ২৭, ২০১৫ সময়ঃ ২:৫৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৫১ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত আনারকলির মাজার
পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত আনারকলির মাজার

অনুষ্ঠানের চারদিকে চন্দন কাঠের তৈরি কৃত্রিম সুবাসিত ধোঁয়ার মধ্য থেকে বের হয়ে আসলেন তিনি। একটি অর্ধ স্বচ্ছ ওড়নায় আচ্ছাদিত ছিল দেহের ওপরের অংশ। তারপর কোনো রকম বাদ্য যন্ত্র ছাড়াই শুধুমাত্র হাতের চুড়িতে সৃষ্ট মূর্ছনা আর নূপুরের রিমঝিমকে সঙ্গী করে অনবরত নেচে চললেন এবং মুগ্ধ করে গেলেন উপস্থিত সবাইকে।

তার গাঢ় নীল চোখ, ডিম্বাকৃতি মুখমণ্ডল, খাড়া নাক এবং অসাধারণ গুনাবলিতে প্রথম দর্শণেই মুগ্ধ হয়ে গেলেন শাহজাদা সেলিম। তার হৃদস্পন্দন প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হলো। এ অপ্সরাকে তার পেতেই হবে। সেটা যে কোনো মূল্যেই হোক!

ইতিহাসে এই নারীকে নিয়ে অনেক মত, অনেক গল্প। কেউ বলে আনার কলি, আবার কেউ বলেন তার প্রকৃত নাম নাদিরা বেগম, কেউ বলে শার্ফ-উন-নেসা। তিনি ছিলেন এক ইতালীয় সওদাগরের সুন্দরী কন্যা। আনারকলি একদিন তার পিতার সঙ্গে আফ্রিকার উত্তর উপকূল থেকে সওদাগর জাহাজে করে যাত্রা করে, তখন তার বয়স মাত্র ১৫। জলদস্যুরা তার বাবাকে হত্যা করে তাকে অপহরণ করে এবং ইস্তাম্বুল ক্রীতদাস বাজারে বিক্রি করে। পরবর্তীতে মনোরঞ্জনের বিভিন্ন রকম তালিম নেয়ার পর তার অবস্থান হয় এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে । ওই ব্যক্তি তাকে কিছুদিন পর তুরস্কের সুলতানের কাছ নজরানা পাঠায়। এবং সর্বশেষ তুরস্কের সুলতান আনারকলিকে সম্রাট আকবরের কাছে পাঠান।

এদিকে প্রথম দর্শনেই সেলিম প্রেমে পড়ে যায় আনারকলির। কিন্তু আনারকলির উপর একমাত্র অধিকার ছিল তার পিতা সম্রাট আকবরের। হেরেমে আনারকলির ঘরে যাওয়ার অধিকার সম্রাটের ছাড়া আর কারো নেই। কিন্তু আনারকলিকে না পেলে চলবে না শাহজাদার। যে রূপ তার সে দেখেছে! আনারকলিকে তার চাই-ই চাই। হেরেমের রক্ষীকে ঘুষ দিয়ে সেলিম ঢুকে গেলো আনারকলির ঘরে। যা হওয়ার তাই হলো। আনারকলিরও ভালো লেগে গেলো শাহাজাদা সেলিমকে। গোপনে গোপনে চলতে থাকলো তাদের প্রেম। আনারকলির বয়স তখন চল্লিশের কাছাকছি আর সেলিমের ত্রিশ।

সেলিমের ঘন ঘন হেরেমে যাওয়াটা চোখে পড়লো সম্রাটের। বন্ধ হয়ে গেলো সেলিমের হেরেমে যাওয়া। কিন্তু যে গভীর প্রেমে মজে আছে সেলিম আর আনারকলি তাতে দূরত্ব মানা কঠিন, মানা কঠিন বাধা-বিপত্তি। রাতের আঁধারে গোপনে তারা দেখা করবে নদীর তীরে ভাঙ্গা মন্দিরের ওখানে। এমনটাই চিঠিতে জানালো শাহাজাদা আনারকলিকে। আনারকলি চিঠি পড়ে অপেক্ষায় থাকলো রাত্রি নামার। রাতে আঁধার ঘন হলে হেরেমের রক্ষীর সহায়তায় আনারকলি বের হয়ে গেলো হেরেম থেকে।

তারপর ধীরে চলে গেলো পূর্ব নির্ধারিত স্থানে। মিলিত হলো প্রেমিক শাহাজাদা সেলিমের সাথে। কিন্তু, সম্রাট আকবর যেহেতু আগেই সব টের পেয়ে গিয়েছিলো তাই তার সেনাদের হাতে ধরা পড়ে গেলো সেলিম-আনারকলি। ঠাণ্ডা মাথার আকবর দেখালো তার নৃশংসতা। নর্তকী হয়ে শাহাজাদার সাথে প্রেম করার অপরাধে সেলিমের সামনেই আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেয়া হলো আর সেই সাথে মৃত্যু হল একটি অসমাপ্ত প্রেমকাহিনীর।

পরবর্তীতে সেলিম আনারকলির স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক সমাধি সৌধ নির্মান করেন লাহোরে। আজো আছে সেটা। সৌধটি অষ্টভুজাকৃতি। আছে আটটি গম্বুজ। গম্বুজগুলো নির্মিত স্তম্ভের ওপর। একটি স্তম্ভে লেখা আছে আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম আর দুই লাইনের একটি ফারসি কবিতা:

তা কিয়ামাত শুকর গুইয়াম কারদিগারি কিশ রা
আহ, গার মান বাজ বিনাম রু ইয়ার-ই-খুশ রা

“একবার, আর একবার দেখতে পাই প্রিয়তমার মুখ যদি
ঈশ্বর, তোমার নাম ডেকে যাবে হৃদয় কেয়ামত অবধি”

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G