মুরগীর রাণীক্ষেত রোগে করনীয়

প্রকাশঃ জানুয়ারি ২৩, ২০১৫ সময়ঃ ৬:৫৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:৫৮ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডটকম:

indexলাভবান ভাবে মুরগীর খামার পরিচালনা করতে হলে আপনাকে মুরগীর রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে হবে। সেই সাথে আপনাকে হতে হবে অধিক সচেতন। এ লক্ষে খামারীদেরকে সচেতন করতে আজ থাকছে মুরগীর রানীক্ষেত রোগ সর্ম্পকে বিশদ আলোচনা।

 
ইন্দোনেশিয়ার জাভাতে এই রোগটি প্রথম সনাক্ত করা হয় ১৯২৬ সালে । ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল শহরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ১৯২৭ সালে, তাই এই রোগের নামকরন নিউক্যাসল শহরের নামানুসারে করা হয় নিউক্যাসল রোগ।

 
উপমহাদেশে ভারতের  রাণীক্ষেত নামক স্থানে ১৯২৮ সালে প্রথম এই রোগটি ধরা পড়ায় রোগটি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতে “রাণীক্ষেত” নামেই পরিচিত। এই রোগের ফলে খামারের ১০০% মোরগ-মুরগী আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৭০-৮০% মোরগ-মুরগী মারা যায়।

যেভাবে এ রোগ ছড়ায়:
প্রাথমিকভাবে রাণীক্ষেত রোগের জীবাণু অসুস্থ মুরগী থেকে সুস্থ মুরগীতে স্থানান্তরিত হয়। অসুস্থ মুরগীর চোখ, মুখ, নাক এবং মল দ্বারা জীবাণু আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। শ্বাস নেওয়া ও খাওয়ার মাধ্যমে, খামারে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, খাদ্য, পানি, লিটার, দূষিত টিকা দ্বারা এবং অসুস্থ মুরগীর সংস্পর্শে এলে এ রোগ সুস্থ মুরগীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ:
রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণগুলো স্ট্রেইনের উপর নির্ভর করে। ভ্যালোজেনিক স্ট্রেইন তীব্র সংক্রামক, ম্যাসোজেনিক স্টেইন দ্বারা আক্রান্ত মুরগীতে শ্বাসযন্ত্রের ও স্নায়ুবিক দূর্বলতার লক্ষণ দেখা দেয় এবং ল্যানটোজেনিক স্ট্রেইন সাব ক্লিনিক্যাল রোগ তৈরী করে। আমাদের দেশে সাধারনত ভ্যালোজেনিক স্ট্রেইনের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়।

 

এই স্ট্রেইন দ্বারা সৃষ্ট রাণীক্ষেত রোগের  সুপ্তকাল ২-১৫ দিন। রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণগুলো হলো – শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা (কাশি), স্নায়ুবিক লক্ষণ ( পেশির কম্পণ, ডানা ঝুলে পড়া, মাথা ও ঘাড় মুচরানো, পক্ষাঘাত), চোখের চারপাশে টিস্যু ফুলে উঠা, সবুজাভ পাতলা পায়খানা, ডিমের খোসা পাতলা হওয়া এবং ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া। তীব্র ক্ষেত্রে আকস্মিক মৃত্যু।

ময়নাতদন্তে মুরগীর বিভিন্ন অঙ্গে (প্রভেন্টিকুলাস, সিকাম, ট্রাকিয়া, গিজার্ড) এ রক্তক্ষরণ লক্ষ করা যায়।

রাণীক্ষেত রোগের টিকা:
উন্নয়নশীল দেশে প্রাণিসম্পদ কৃষি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পোল্ট্রি শিল্পের সাফল্য টিকাদান কর্মসূচীর উপর নির্ভর করে। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগসমূহ চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করা গেলেও ভাইরাস ঘটিত রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করা যায় না। কারণ কার্যকরী কোন এন্টিভাইরাল ঔষধ নেই।

 

তাই ভাইরাস ঘটিত রোগ প্রতিরোধে টিকার উপর নির্ভর করতে হয়। যেহেতু রাণীক্ষেত একটি ভাইরাস  ঘটিত রোগ তাই প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য রাণীক্ষেত রোগের টিকা ব্যবহার করা অপরিহার্য।

মৃত টিকা ব্যবহারে সুবিধা:
বর্তমানে বাংলাদেশে রাণীক্ষেত রোগে নিয়ন্ত্রনে যেসব টিকা (বিসিআরডিভি, আরডিভি, বাংলা বিসিআরডিভি) ব্যবহার করা হয় তা জীবিত জীবানু দ্বারা তৈরি। জীবিত টিকার জীবাণু মাঝে মাঝে মিউটেশনের মাধ্যমে রোগের সংক্রামণ ঘটাতে পারে কিন্তু মৃত টিকা ব্যবহারে এ সম্ভাবনা নেই। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন মুরগীতে মৃত টিকা ব্যবহার করা গেলেও জীবিত টিকা এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না।

সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এ রোগ থেকে খামারকে অনেকাংশে রক্ষা করা সম্ভব। তাই খামারীদের উচিৎ সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা এবং আক্রান্ত হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভেটেরনারী চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা।

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G