রঙ রহস্য

প্রকাশঃ মে ২১, ২০১৫ সময়ঃ ১:০৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

rong rohosso picযদি লাল গোলাপ হঠাৎ কালো হয়ে যায়, যদি গাছের পাতা হয়ে যায় সাদা, শুভ্রতার সাদা রঙ যদি হয়ে যায় লাল, তাহলে কেমন লাগবে একটু ভাবুন তো! কি হবে ভালোবাসার গোলাপের, কি-ই বা হবে শুভ্রতার! বিশাল ঝামেলা। লাল গোলাপ হারাবে তার সকল আবেদন, গাছের পাতার বিমুগ্ধতা খুঁজতে গিয়ে বিফল হবে মানুষ। একটু বর্ণ বা রঙের পরিবর্তনের জন্য হয়ে যেতে পারে অনেক কিছু। সঠিক বস্তুর সঠিক রঙ হওয়া তাই বাঞ্চনীয়। আর এই রঙ দেখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের চোখ এবং মস্তিষ্ক।

আমাদের মস্তিষ্কে রঙের অনুভূতি সৃষ্টি হয় যেভাবেঃ

রঙ পর্যবেক্ষণের কাজটা মানুষের চোখ এবং মস্তিষ্ক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে করে থাকে। আমাদের চোখ এবং মস্তিস্ক একজোট হয়ে আলো-কে ট্রান্সলেট করে রঙে পরিণত করে। চোখের ভেতরে থাকা আলোক সংবেদী কোষ স্নায়ুর মাধ্যমে আমাদের মস্তিস্কে বার্তা প্রেরণ করে থাকে। অর্থাৎ এই আলোক সংবেদী কোষগুলো ডাকঘর এবং স্নায়ুগুলো ডাকপিয়নের মত কাজ করে। ডাকপিয়ন যেমন আমাদের কাছে চিঠি নিয়ে আসলে চিঠি পাবার পর আমাদের যেরকম আবেগের বিভিন্ন ধরণের অনুভূতি (হাসি,কান্না ইত্যাদি) সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি আলোক সংবেদী স্নায়ু মস্তিস্কে বার্তা প্রেরণ করলে আমাদের মস্তিস্ক তখন আমাদের মাঝে রঙের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

আমাদের চোখের যে রেটিনা আছে, সেটা মিলিয়ন মিলিয়ন আলোক সংবেদী কোষ দ্বারা আবৃত। এর কিছু কোষ হচ্ছে রড কোষ, আবার কিছু কোষ হচ্ছে কোণ কোষ। এই আলোক সংবেদী স্নায়ুমুখগুলো আমাদের মস্তিস্কে স্নায়ু উদ্দীপনার সৃষ্টি করে এবং অপটিক নার্ভের (দর্শন স্নায়ু) মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্টেক্সে পাঠায়। এভাবেই আসলে আমাদের মাঝে রঙের অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

যিনি প্রথম রঙ নিয়ে গবেষণা করেছেনঃ

নিউটন সাহেবের মাথায় আপেল পড়ার পর থেকে উনি দুনিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছেন কত কিছু আবিষ্কার করে।এই মহাকর্ষ আবিষ্কারের সাথেই তাঁর নাম সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত হয়। মজার ব্যাপার হল, আলো নিয়ে প্রথম গবেষণা করেছেন এই নিউটন। তিনি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছিলেন যে, রঙ কোন বস্তুর নির্দিষ্ট কোন বৈশিষ্ট্য নয়, এটা আলাদা কোনো বস্তুও নয়।
আসলে, বস্তুর পৃষ্ঠ বা তলের উপরে আলো পড়লে যদি বস্তুটি আলোর সবটুকু শোষণ করে কোন একটা নির্দিষ্ট রঙ শোষণ করতে না পেরে সেই রঙটিকে প্রতিফলিত করে দেয়, তাহলে আমরা বস্তুটিকে সেই নির্দিষ্ট রঙের দেখি।
সেই হিসাবে বলা যায়, আপেলের মাঝে লাল রঙ নেই। আপেলের পৃষ্ঠে বা তলে যখন আলো আপতিত হয়, তখন আপেলের পৃষ্ঠটি লাল ব্যতীত অন্যান্য সকল রঙ শোষণ করে নেয়, এবং লাল রঙকে প্রতিফলিত করে। তাই আমরা আপেলকে লাল রঙের দেখি। আমরা আসলে এই প্রতিফলিত আলো দেখেই ভাবি যে আপেলটি লাল রঙের। তাঁর মানে দাড়ায়, আমরা আসলে প্রতিনিয়ত ধোঁকা খাচ্ছি। কেননা আপেল তো লাল রঙের নয়, আপেল শুধুমাত্র লাল রঙকে শোষণ করতে পারছেনা বলেই তাকে ছেড়ে দিচ্ছে। আর আমরা তখন আপেলকে লাল রঙের দেখি।

রঙের ধরণঃ

রঙ মূলত দু’ধরণের – মৌলিক রঙ এবং যৌগিক রঙ

মৌলিক রঙ বলতে আমরা সবাই বুঝি- লাল, সবুজ, নীল। কেউ কেউ মৌলিক রঙগুলোকে সংক্ষেপে “আসল” অর্থাৎ, আসমানী (নীল), সবুজ, লাল বলে থাকে।

তবে আপনি যদি চিত্রশিল্পীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন, তখন মৌলিক রঙ হিসেবে লাল, হলুদ এবং নীলকেই পাবেন। সেক্ষেত্রে সবুজ একটি যৌগিক রঙ। তবে সাধারণত আমরা যে স্ট্যান্ডার্ডে রঙের বিচার করি, তাতে লাল, নীল, সবুজকে মৌলিক রঙ হিসেবে বলতে পারি।
আর এই লাল, নীল, সবুজ রঙকে সমান অনুপাতে মিশিয়ে আমরা সাদা রঙ পেতে পারি। আবার এই তিনটি রঙকে বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে আমরা আলোক বর্ণালীর সবক’টি রঙই পেতে পারি।
আর এই তিনটি মৌলিক রঙ থেকে আমরা যেসব রঙ পাব, এগুলো হচ্ছে যৌগিক রঙ।
আমারা খালি চোখে সাধারণত যে রঙ দেখি তা আমাদের রঙ সনাক্ত করার ক্ষমতার খুবই সামান্য। কিন্তু আমাদের চোখই প্রায় ১০ মিলিয়ন রঙকে পৃথকভাবে সনাক্ত করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা প্রত্যেক রঙকে পৃথক করার জন্য তাদেরকে সংখ্যার এবং কোডের মাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া রঙের আরও ভেরিয়েশনের জন্য কয়েকটি কালার মডেল প্রবর্তন করেছেন। কেননা, শুধুমাত্র লাল, সবুজ, নীল রঙ (RGB Color) দিয়ে একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জের বা সীমার রঙ তৈরি করা সম্ভব। আমরা বর্তমানে যেসব প্রযুক্তি (কম্পিউটার, টেলিভিশন, প্রিন্টার ইত্যাদি) ব্যবহার করি, তার জন্য আরও অনেক বেশি রঙের ভেরিয়েশনের প্রয়োজন হয়। তাই, CMY (Cyan, Magneta, Yellow) কালার মডেলের রঙগুলোকে বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে আরও প্রচুর রঙ তৈরি করতে পারি। বিশেষ করে প্রিন্টার এই কালার মডেল ব্যবহার করে ছবি প্রিন্ট করে।

বিশ্বাস করুন আর নাই বা করুন, পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সাদা এবং কালো বলতে কোন রঙ নেই। সাদা হচ্ছে সকল রঙের সমষ্টি আর কালো হচ্ছে সকল রঙের অনুপস্থিতি।

প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G