সাংসদের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগে স্কুলছাত্রের কারাদণ্ড

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬ সময়ঃ ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

1425391824_vrammoman-adalot_508672টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার নবম শ্রেণির স্কুলছাত্র সাব্বির শিকদার। স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

শুধু তাই নয়, এই কারণে স্থানীয় ঐ সংসদ সদস্য, স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিলে শারীরিক নির্যাতনও করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছে সাব্বির।

মঙ্গলবার হাইকোর্ট নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেয় সাব্বির। আর এ সময় ভারী হয়ে ওঠে গোটা আদালতের পরিবেশ।

গত ২০ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ঐ শিক্ষার্থীকে দণ্ড দেওয়ার ঘটনায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে সখীপুরের ইউএনও মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং ওসি মোহাম্মদ মাকসুদুল আলমকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। আজ তারা বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের অবকাশকালীন বেঞ্চে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেন। একই সময় আদালতে নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেয় সাব্বির।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আদালতে হাজির হন ইউএনও এবং ওসি। এ সময় তারা আইনজীবীর মাধ্যমে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। এ বিষয়ে দুজনের আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন ও শ. ম রেজাউল করিম আদালতকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত সাব্বির শিকদারকে সাজা দেওয়ার সঙ্গে সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়ের করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) কোনো সম্পর্ক নেই। বরং গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় ঐ স্কুল শিক্ষার্থীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঐ ছেলে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নয়। এ সময় ঐ শিক্ষার্থীর পাসপোর্টের কপি আদালতে প্রদর্শন করেন তারা। যেখানে সাব্বিরের জন্ম তারিখ হিসেবে ১০ মে, ১৯৯৫ উল্লেখ রয়েছে। পরে আদালত শিক্ষার্থী সাব্বির শিকদারের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান।

এ সময় আদালতের সামনে গাঁজা উদ্ধারের কথা অস্বীকার করে সাব্বির জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে দুই বছরের সাজা দেন।

ঘটনার বর্ণনায় সাব্বির শিকদার আদালতকে বলে, “গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে আমি বাড়িতে ছিলাম। এ সময় বাহির থেকে কেউ আমাকে ডাক দেয়, ‘সাব্বির বাড়িতে আছ?’ এরপর আমি বাইরে এসে দেখি সিভিল ড্রেসে একজন পুলিশ। তিনি আমাকে বলেন, ‘তোমাকে থানায় যেতে হবে’। পরে আমাকে থানায় ওসির কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ওসি আমাকে মোবাইল ফোন দেখিয়ে বলেন, ‘এগুলো কি লিখেছিস’। আমি বলেছি, ‘এগুলো আমি লিখি নাই।’ এরপর বারবার আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আমি আবারও বলি লিখি নাই। পরে আমাকে এমপির বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।”

সাব্বির আরো বলে, “আমি সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়ের বাসায় গিয়ে দেখি তিনি সোফায় বসে আছেন। আমাকে তার সামনে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি আমাকে বলেন, ‘তুই আমার বিরুদ্ধে কী লিখেছিস?’ এরপর এমপি আমাকে একটি লাঠি দিয়ে দুটি বাড়ি মারেন। এ সময় তিনি ওসিকে বলেন, ‘ওকে থানায় নিয়ে যাও।’ তারপর আমাকে থানায় নিয়ে এসে চোখ বেঁধে বেধম নির্যাতন করা হয়। (ওসি) আমাকে বলেন, ‘তোকে ক্রসফায়ারে দিব।’ ক্রসফায়ারের ভয় এবং নির্যাতনের মুখে স্বীকার করি, আমি লিখেছি। তারপর আমাকে বলে, ‘এ ধরনের লেখা আর লিখবি না।’ এ ঘটনার তিনদিন পর আমাকে ইউএনওর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ইউএনও আমাকে বুকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। তখন আমার হুঁশ ছিল না। কে যেন আমাকে ওইখান থেকে উঠিয়ে নেয়। আমাকে থানায় নিলে ওসি বলে, ‘তোমাকে দুই বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে’।”

ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার এ পর্যায়ে আদালতে কাঁদতে শুরু করে সাব্বির। কাঁদতে কাঁদতে সাব্বির বলে, ‘স্যার আমি এই ঘটনার বিচার চাই। সরকারের কাছে বিচার চাই। আমি সঠিক বিচার চাই।’

আদালত সাব্বিরের কাছে জানতে চান, কেউ তাকে এই বক্তব্য শিখিয়ে দিয়েছে কি না। জবাবে সাব্বির বলে, ‘কেউ শিখিয়ে দেয়নি।’

পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G