হাত-পা নেই কিন্তু তিনি সফল

প্রকাশঃ এপ্রিল ১২, ২০১৫ সময়ঃ ৬:৫৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

indexসফলতা সোনার হরিন। এই সোনার হরিনের পিছনে আমরা সবাই ছুটে চলেছি প্রতিনিয়ত।  আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা  যারা সফল হতে চান কিন্তু সফল হওয়ার পেছনের কষ্টগুলো নিতে চান না।  সফল মানুষের গল্প শুনতে ভালোবাসেন কিন্তু সেই সফল মানুষের ভেতরের অনুভতিগুলাকে এড়িয়ে যান সযত্নে।

প্রত্যেকটা মানুষের সফল হওয়ার পেছনে থাকে বহু অনিদ্রা রাত যাপন, বহু বছরের কঠোর পরিশ্রম।  ঠিক এরকমই কিছু মহামানব আছেন যারা খুব ছোট থেকে অনেক পরিশ্রম এবং সাধনা করে আজ পৃথিবীর কাছে চিরস্মরণীয়। তাদের কর্মকান্ড আজ আমাদের কাছে গল্প হয়ে আসছে।

আজ আমরা এমন একজনের কথা জানবো যিনি সব স্বাভাবিক ঘটনাকে অস্বাভাবিক করে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে চলেছেন। তিনি হলেন নিক বায়োসিস। জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ এই মানুষটির হাত বা পা কোনোটিই নেই। তারপরও তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন।

নিক বায়োসিস এর জন্মের আগে তাকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের আকাশ ছোয়া স্বপ্ন ছিল। কোনো বাবা-মা ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেন না যে তাদের সন্তান শারীরিক কোনো ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করুক। নিকের বাবা-মায়ের স্বপ্নকে ধুলিসাৎ করে ১৯৮২ সালের ৪ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের একটি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময় হাত-পা বিহীন আজব এক শিশুকে দেখে অনেকেই ভড়কে উঠেন। নিকের অস্বাভাবিক জন্মের কারন চিকিৎসকগণ কিছুতেই খুজে বের করতে পারলেন না। নিকের পরিচয় হলো বিকলাঙ্গ শিশু।

নিকের ডাক নাম ‘নিকোলাস’। তার পিতার নাম পোস্টার বরিস বায়োসিস এবং মায়ের নাম ডুসকা। যেহেতু নিক ছোট বেলা থেকেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে বেড়ে উঠেছিল, সূতরাং কেউ কোন দিন কল্পনা করতে পারেনি বিকলাঙ্গ এই সুন্দর শিশুটি একদিন পৃথিবীর সব মানুষকে (সুস্থ কিংবা বিকলাঙ্গ) অন্যভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখাবে, আহ্বান জানাবে পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার ।

স্কুলে পড়াকালীন সময়ে নিক যখন দেখতেন তার বন্ধুরা খেলাধুলা করছে তখন তিনি হতাশ হয়ে পড়তেন কারণ অস্বাভাবিক হওয়ায় তার কোন বন্ধু ছিল না। এরকম কোনো পরিস্থিতিতে কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষেও টিকে থাকা অসম্ভব। আর সেখানে হাত-পা বিহীন এই মানুষটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে থাকেন।

imagesনিক বায়োসিস ৭ম শ্রেণিতে হয়েছিলেন ক্লাস ক্যাপ্টেন। সত্যিই এ এক আত্মবিশ্বাসের পাহাড়। স্কুলে পড়াকালীন সময়েই নিক বায়োসিস স্টুডেন্ট কাউন্সিলর হিসেবে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে শুরু করেন। তার কাজের ক্ষেত্র ছিল বিকলাঙ্গ শিশুদের সমস্যা সমাধান ও প্রেরণা প্রদান। এ লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী পরিচালনা করতে শুরু করেন।

স্কুলের পাঠ শেষ করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পালা। নিকের বয়স যখন ১৯ বছর তখন তিনি অর্থনীতি ও অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার পর্ব চুকিয়ে এবার নিক পুরোদস্তুর মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন ধরনের সভা – সেমিনারে নিক তার নিজের জীবনের প্রতিকূল অবস্থাকে জয় করার গল্প শুনিয়ে মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা প্রদান করা শুরু করেন। সব জায়গাতেই তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সেই স্বপ্ন কিভাবে বাস্তবায়িত করতে হয় তার উপায়ও বলে দিয়েছেন।

দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে শুধুমাত্র স্বপ্নকে পুঁজি করা এই মানুষটিকে জীবনের সাথে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। বহু মানুষকে তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তার দেখানো স্বপ্নে অনেক মানুষ নতুন করে বাঁচতে শিখেছে, অনেক মানুষ নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিক যাদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তারা সবাই বিকলাঙ্গ নয়, তাদের সবার স্বাভাবিক হাত-পা সবই রয়েছে। তারপরও তারা হতাশার কারণে জীবনের ছন্দপতন হারিয়ে ফেলেন।

নিক সেই সব মানুষদের হতাশা কাটিয়ে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই পথ দেখিয়েছেন। কিন্তু তার এই চলার পথে কেউ তাকে উৎসাহ দিয়েছে, আবার অনেকে তাকে নিয়ে কটাক্ষ করেছে। তবুও স্বপ্ন দেখানো থেকে পিছপা হননি অদম্য এই মানুষটি। নিক এখন একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রেসিডেন্ট।

এছাড়াও নিকের নিজের একটি কোম্পানী রয়েছে যার মাধ্যমে নিক বিভিন্ন স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন সংস্থায় মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উৎসাহ, উদ্দিপনামুলক বক্তব্য রাখেন। নিকের কোম্পানীর নাম – Attitude is Altitude. দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে মানুষের জন্য কাজ করার পরও নিক তৃপ্ত নন। তার মতে, তার এখনো অনেক কাজ বাকি। সারা বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন স্বপ্নবাজ এই মানুষটি।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G