কোরবানির পরবর্তী তিনদিন কী করবেন?

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৬ সময়ঃ ৯:৩১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৩১ অপরাহ্ণ

eid-ul-fitr-celebration

আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয় কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকে। অর্থাৎ যিলহজ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়। তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানো। মানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বা ‘গোশত শুকানোর দিন’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

আইয়ামুত তাশরীক এর ফজিলত:

এ দিনগুলোর ফজিলত সম্পর্কে যে সকল বিষয় এসেছে তা নীচে আলোচনা করা হল :—

(১) এ দিনগুলো এবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—

‘তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে।’ [৪৯]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বোখারি রহ. বলেন :—

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন—‘নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে আইয়ামুত-তাশরীককে বুঝানো হয়েছে।’ [৫০]

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন : ইবনে আব্বাসের এ ব্যাখ্যা গ্রহণে কারো কোন দ্বি-মত নেই।[৫১] আর মূলত এ দিনগুলো হজের মওসুমে মিনাতে অবস্থানের দিন। কেননা হাদিসে এসেছে—

মিনায় অবস্থানের দিন হল তিন দিন। যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দু দিনে চলে আসে তবে তার কোন পাপ নেই। আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোন পাপ নেই।[৫২] হাদিসে এসেছে—

নাবীশা হাজালী থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকিরের দিন।’[৫২]

ইমাম ইবনে রজব রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন : আইয়ামুত-তাশরীক এমন কতগুলো দিন যাতে ঈমানদারদের দেহের নেয়ামত ও স্বাচ্ছন্দ্য এবং মনের নেয়ামত তথা স্বাচ্ছন্দ্য একত্র করা হয়েছে। খাওয়া- দাওয়া হল দেহের খোরাক আর আল্লাহর জিকির ও শুকরিয়া হল হৃদয়ের খোরাক। আর এভাবেই নেয়ামতের পূর্ণতা লাভ করল এ দিনসমূহে। [৫৪]

(২) আইয়ামুত-তাশরীকের দিনগুলো ঈদের দিন হিসেবে গণ্য। যেমন হাদিসে এসেছে—

‘সাহাবি উকবাহ ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন: আরাফাহ দিবস, কোরবানির দিন ও মিনার দিন সমূহ (কোরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলাম অনুসারীদের ঈদের দিন।’ [৫৫]

(৩) এ দিনসমূহ যিলহজ মাসের প্রথম দশকের সাথে লাগানো। যে দশক খুবই ফজিলতপূর্ণ। তাই এ কারণেও এর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে।

(৪) এ দিনগুলোতে হজের কতিপয় আমল সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এ কারণেও এ দিনগুলো ফজিলতের অধিকারী।

আইয়ামুত তাশরীকে করণীয়:

এ দিনসমূহ যেমনি এবাদত-বন্দেগি, জিকির-আযকারের দিন তেমনি আনন্দ-ফুর্তি করার দিন। যেমন রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহর জিকিরের দিন।’ [৫৬]

এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া নেয়ামত নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার মাধ্যমে তার শুকরিয়া ও জিকির আদায় করা।

জিকির আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতি হাদিসে এসেছে।

  • (১) সালাতের পর তাকবীর পাঠ করা। এবং সালাত ছাড়াও সর্বদা তাকবীর পাঠ করা। এ তাকবীর আদায়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে এ দিনগুলো আল্লাহর জিকিরের দিন। আর এ জিকিরের নির্দেশ যেমন হাজীদের জন্য তেমনই যারা হজ পালনরত নন তাদের জন্যও।
  • (২) কোরবানি ও হজের পশু জবেহ করার সময় আল্লাহ তাআলার নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করা।
  • (৩) খাওয়া-দাওয়ার শুরু ও শেষে আল্লাহ তাআলার জিকির করা। আর এটা তো সর্বদা করার নির্দেশ রয়েছে তথাপি এ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব বেশি দেয়া। এমনিভাবে সকল কাজ ও সকাল-সন্ধ্যার জিকিরগুলোর প্রতি যতœবান হওয়া।
  • (৪) হজ পালন অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ তাআলার তাকবীর পাঠ করা।
  • (৫) এ গুলো ছাড়াও যে কোন সময় ও যে কোন অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
20G