যে লেকে পড়লেই মমি!

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ১০:২২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

nattron lakeমিশরের পিরামিড ও মমি বিশ্ব ইতিহাসের এক অনবদ্য অধ্যায়। পিরামিডগুলো সাধারণত গড়ে উঠেছিল তৎকালীন ফারাওদের সমাধিসৌধ হিসেবে। ফারাওদের মৃতদেহগুলো সরাসরি মাটি চাপা না দিয়ে মমি তৈরি করে পিরামিড বা সমাধিসৌধ নির্মাণ করা হত। সেই সময়ে প্রাচীন মিশরীয়রা তাদের ফারাওদের মরদেহ পেঁচিয়ে দিতো রাসায়নিকে ভেজানো লিনেনে। আর সেই রাসায়নিকের কারণেই দেহগুলো হয়ে উঠত মমি।

পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার উত্তর প্রান্তে কেনিয়া আর তানজানিয়া সীমান্তের মাঝে ন্যাট্রন নামে এমন একটি লেক রয়েছে সেখানে কোন প্রাণী পড়ার পর প্রাকৃতিক ভাবেই মমিতে রুপান্তরিত হয়। লেকের আশপাশে প্রায়ই এমন সব মৃত পশুপাখির দেহ পাওয়া যায়, যেগুলো অনেকটা মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকে।

চমৎকার সৌন্দর্য়ের সেই লেকটিকে অনেকে বেহেস্তের সাথেও তুলনা করেছেন। একহাজার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকাব্যাপী  হ্রদটি দেখতে আর দশটি সাধারণ হ্রদের মতো হলেও এর রয়েছে ভয়াবহ কিছু নিদর্শন। হ্রদের তলদেশের মাটিতে রয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট আর সোডিয়াম বাইকার্বনেট যা সৃষ্টি করে অতিরিক্ত তাপমাত্রা। অতিরিক্ত এই তাপমাত্রার কারণে হ্রদের পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে থাকে।

এর পানির তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১২০ডিগ্রি ফারেনহাইট । মাঝে মাঝে এটি ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করে। এছাড়া এই হ্রদের পানির pH-এর মাত্রা ৯ থেকে ১০•৫, যা সমুদ্রের পানির pH থেকেও বেশি। হ্রদ এলাকায় বার্ষিক মেঘের পরিমাণ মাত্র ৪০০ মিলিমিটার।

lake natronমাঝে মাঝে ফেমিঙ্গো বা অন্য প্রাণী হ্রদের পানিতে পড়ার সাথে সাথে মারা যায়। তাদের দেহের টিস্যুগুলো ক্যালসিয়ামে পরিণত হওয়ায় তারা ক্যালসিয়ামের মূর্তি হয়ে যায়। একে বলে ক্যালসিফিকেশন।

বিজ্ঞানীরা আজো জানে না, কেন ফেমিঙ্গো পাখিগুলো হ্রদের পানিতে পড়ে। সম্ভাব্য ব্যখ্যা হলো, হ্রদের পানিতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হলে সেটা ফেমিঙ্গো পাখিকে আকৃষ্ট করে। এর ফলে তারা পানিতে ঝাঁপ দেয়, যার পরিণতি হয় করুণ। হ্রদের তীরজুড়ে ফেমিঙ্গো, স্টার্লিং, হর্নবিল, ঘুঘুসহ অনেক পাখির মৃতদেহ এমনভাবে পড়ে থাকে, দেখলে মনে হয় যেন তাদের মমি করে রাখা হয়েছে।

আশার কথা হচ্ছে লেকটি নিয়ে গবেষণা চলছে। বছরের কিছু কিছু সময় মৌসুমী ফসলও এখানে হয়। হ্রদটির পাশে ইওয়াসো কেনিয়া সীমান্তের এনজিরো নদীতে হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে লেকটি পর্যটকদের জন্য এখনো নিরাপদ নয়।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

July 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
20G