বেড়ালের জন্যে ক্যাফে

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫ সময়ঃ ৯:২৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:২৯ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

biralবাড়িতে কুকুর-বেড়ালের মতো প্রভুভক্ত প্রাণী পোষার ব্যাপারটি আমাদের দেশে তেমন দেখা না গেলেও বিত্তবান দেশগুলোতে পোষা প্রাণী ছাড়া বাড়ি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অনেকের বাড়িতে একাধিক পোষ্য কুকুর-বেড়াল থাকে। এসব পোষ্যকে লালনপালনও খুব যত্নের সঙ্গে করা হয়। মূলত উন্নত বিশ্বে পোষ্য প্রাণীদের পরিবারের সদস্য হিসেবে ধরে নেয়া হয়। অনেকের একাকিত্বের সঙ্গী বলতে পোষ্য বেড়াল।

আর তাই বাইরে গিয়ে কোনো সুদৃশ্য ক্যাফেতে কফির পেয়ালায় যখন চুমুক দিচ্ছেন, তখনি তিনি তার পোষ্য বেড়ালটিকে মিস করেন। নিজেকেই দুষেন এমন স্বার্থপরতার জন্য। এত কোমল মায়াবীমুখো বেড়ালটি একা বাড়িতে ফেলে এসে কী করে আনন্দ করছেন! কিন্তু তখনই বাদ সাধে নতুন চিন্তা। যদি প্রিয় বেড়ালকে নিয়েও আসতেন তবে ক্যাফেতে আসা অন্যরা কী ভাববেন? যদি কারও কোন ক্ষতি হয়ে যায়! ক্যাফেতে বেড়ালকে ঠিকমতো খাওয়ানো, যত্ন করার পরিবেশও নেই। এমনই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন ব্রিটেনের বেড়ালপ্রেমীরা।

এ মানসিক চাপ থেকে রেহাই দিতে ব্রিটেনের চালু হয়েছে বেড়ালদের জন্যে একটি ক্যাফে। ক্যাফের মালিক কেটি জেন গ্লেজি। বেড়ালপ্রেমী এবং তাদের প্রিয় বেড়ালদের জন্যে একটি ক্যাফে খোলার ভাবনা অনেকদিন ধরেই কেটি জেন গ্লেজির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এর সঙ্গে রাস্তার বেওয়ারিশ বেড়ালদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার বিষয়টিও যোগ হয়। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। নিজের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে কোমর বেঁধে কাজে নেমে পড়েন ২৮ বছর বয়সি কেটি।

cafa

বছর খানেক ধরে এ কাজে লেগে থেকে অবশেষে জুলাই মাসের ৩১ তারিখে কেটির স্বপ্ন সফল হল। উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের নিউ ক্যাসেলে ২৪ পুডিং সেয়ারে কেটি তার সাধের ক্যাফেটি খুলেছেন। ক্যাফেটির নাম দিয়েছেন ‘মগ অন দ্য টাইন’ ।

এ ক্যাফেটি কেমন লাভবান হবে, লোকজন রসিকতা করবে কিনা, অনেক প্রশ্নই ছিল। কিন্তু কেটি জেন এসব চিন্তা মাথা হতে উড়িয়ে দিয়ে বেড়ালপ্রেমীদের কথাই মনে রেখেছেন। আর বেড়ালকে সঙ্গে নিয়ে নিশ্চিন্ত মনে অতিথিরা যেন তাদের কফির পেয়ালা শেষ করতে পারেন এ উদ্দেশ্য নিয়েই কেটি ক্যাফেটি খুলেছেন। ফলাফল অবস্মরণীয়।

শুরুতেই ছক্কা হাঁকালেন কেটি জেন। তার বেড়াল ক্যাফে ‘মগ অন দ্য টাইন’ সুপার হিট। ক্যাফেটিতে একসঙ্গে ২০ জন অতিথি বসার ব্যবস্থা করে তৈরি করা হয়েছিল।

কেটি জানান, লন্ডনে এ ধরনের ক্যাফের প্রচলন না থাকলেও টোকিওসহ জাপানের অন্যান্য প্রদেশে বেড়ালের জন্যে ১০০টির বেশি ক্যাফে রয়েছে। তিনি সেসব ক্যাফে হতে উৎসাহ ও নির্দেশনা পেয়েছেন।

কেটি জানিয়েছেন, খোলার সঙ্গে সঙ্গেই দু-একটি নয় একেবারে হাজারটি বুকিং হয়েছে। একসঙ্গে এতজনের বেড়ালকে সেবা দিতে না পেরে উল্টো কষ্টই পেয়েছেন তিনি।

cat cafe

এ ক্যাফেতে বেড়ালদের কথা মাথায় রেখেই মেনু সাজানো হয়েছে। রয়েছে দুধ আর মাছের তৈরি উপাদেয় খাবার, স্যুপ। বেড়াল মালিকদের জন্য তো রকমারি ফাস্ট ফুড ও পানীয় আছেই। এখানে আনা হয়েছে কিছু স্থায়ী বাসিন্দা। বাসিন্দাদের ১০জনই হল বেড়াল। ওয়েস্টগেট আর্ক-এ অবস্থিত পশু আশ্রয় কেন্দ হতে এসব বেড়াল আনা হয়েছে।

আগন্তুক বেড়ালদের এসব বেড়াল খুব আতিথেয়তার সঙ্গে কাছে টেনে নেয়। ক্যাফেতে আসা অতিথিরা এবং কাফের স্থায়ী বেড়ালরা দু’পক্ষই যেন একে অপরের সঙ্গ পছন্দ করে সেটিই ক্যাফের মূল বিষয়। বেড়ালকে ঠিকমতো যত্ন নেয়া ও সামলানোর জন্যে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী রাখা হয়েছে। প্রত্যেক কর্মী বেড়ালদের সামলানোর ব্যাপারে খুবই দক্ষ বলে জানিয়েছেন ক্যাফের মালিক কেটি।

ফ্যাশন ডিজাইনের উপর ডিগ্রিধারী কেটি বলেন, এমন ক্যাফে খোলার কারণ আমি বিড়াল পছন্দ করি। আর বেড়ালদের সার্বক্ষণিক চোখে রাখার জন্য প্রতিটি ঘরেই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে আমার মুঠোফোনের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে রেখেছি। যখন চাই তখনই আমি ওদের দেখতে পারি ও সময়মতো উপযুত্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’

বেড়ালের জন্য কেটির এ ক্যাফে সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে। লন্ডনের অনেকেই এখন মাত্র পাঁচ পাউন্ডের বিনিময়ে নিজের বেড়ালকে আনন্দ দিতে কেটির ক্যাফে ঘুরে আসেন। কপির পেয়ালায় চুমুক দেন। নিজেকে স্বার্থপর মনে হয় না কখনই।

প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G