প্রতিক্ষণ ডেস্ক
আজ ২৯ মে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাসে যে শক্তিমান অভিনেতার জন্ম তিনি আর কেউ নন, আমাদের সকলের প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। তিনি আজ নেই। কিন্তু তার অভিনয় আজো পুরো বিশ্বে সমাদৃত। অভিনয়গুণে কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন অনেক পূর্বেই। মঞ্চ থেকে তার অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু। এরপর ছোটপর্দা কিংবা বড়পর্দা সব জায়গায় ছড়িয়েছেন মুঠো মুঠো সোনা। নান্দনিক অভিনয় নৈপুণ্যে হয়ে উঠেছেন ভার্সেটাইল এক অভিনেতা। ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’র সেরাজ তালুকদার, ‘সংশপ্তক’এর কানকাটা রমজান কিংবা ‘শ্যামল ছায়া’র একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মানুষ মনে রাখবে অনেকদিন। যিনি এই চরিত্রগুলোকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নিজেকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছেন, তিনিই হুমায়ুন ফরীদি।
আজ তার জন্মদিন। তিনি আজ বেঁচে থাকলে ৬৪ বছরে পা রাখতেন। জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে হৃদয়ের গভীর প্রেম আর অবিরাম ভালোবাসায় “প্রতিক্ষণ পরিবার” আজ স্মরণ করছে এই বরেণ্য অভিনেতাকে।
হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ১৯৫২ সালে ঢাকার নারিন্দায়। তার বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণের পর চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
হুমায়ুন ফরীদির অভিনয়ের শুরুটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলে থাকতেন এ অভিনেতা। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় নাট্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নাট্যচার্য সেলিম আল দীনের নজরে পড়েন হুমায়ুন ফরীদি। এরপর যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারের নাট্যচর্চার সঙ্গে। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে মঞ্চে অভিনয় করেন কীত্তনখোলা, মুন্তাসির ফ্যান্টাসি, কেরামত মঙ্গল, ধূর্ত উই প্রভৃতি নাটকে। কেরামত মঙ্গল নাটকে কেরামত চরিত্রে হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় এখনো আলোচিত হয় ঢাকার মঞ্চে।
টিভি নাটকে হুমায়ুন ফরীদি আলোচনায় আসেন শহিদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে আবদুল্লাহ আল মামুন নির্মিত ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে। নাটকটিতে কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা অর্জন করেন হুমায়ুন ফরীদি।
নব্বইয়ের গোড়া থেকেই হুমায়ুন ফরীদির বড় পর্দার জীবন শুরু হয়। বাণিজ্যিক আর বিকল্প ধারা মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে প্রথম ছবি তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’। এরপর তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে ‘সন্ত্রাস’, ‘বীরপুরুষ’, ‘দিনমজুর’, ‘লড়াকু’, ‘দহন,’ ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘কন্যাদান’ (১৯৯৫), ‘আঞ্জুমান’ (১৯৯৫), ‘দুর্জয়’ (১৯৯৬), ‘বিচার হবে’ (১৯৯৬),‘মায়ের অধিকার’ (১৯৯৬) ‘আনন্দ অশ্র“’ (১৯৯৭), ‘শুধু তুমি’ (১৯৯৭), ‘পালাবি কোথায়’, ‘একাত্তুরের যীশু’, ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’, ‘মিথ্যার মৃত্যু’. ‘বিদ্রোহ চারিদিকে, ‘ব্যাচেলর’ (২০০৪), ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’ (২০০৪), ‘রূপকথার গল্প’ (২০০৬), ‘আহা!’ (২০০৭), ‘প্রিয়তমেষু’ (২০০৯) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
হুমায়ুন ফরীদি দুইবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০-এর দশকে। ‘দেবযানী’ নামের তার এক মেয়ে রয়েছে প্রথম সংসারে। পরে প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে তিনি বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে তাদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জগত থাকে। সে জগতে ভালবাসার অভাব থাকতেই পারে অভিনেতা ফরীদির। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে চলে যান হুমায়ুন ফরীদি। তবে জনপ্রিয়তার আকাশে হুমায়ুন ফরীদি চিরকাল ভালাবাসায় সিক্ত হবেন তার কোটি ভক্তদের কাছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/আরএম