ইশরাতের পদ্মা জয়ের গল্পগাঁথা

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ১২, ২০১৫ সময়ঃ ৫:০৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:১৬ অপরাহ্ণ

ফারহানা আক্তার তানিয়া


padma_bridgeআবহমান কাল ধরে বাঙালি নারীকে ঘরের কোণে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এসেছে এদেশের পুরুষ শাসিত সমাজ। আজকের এই আধুনিক যুগে এসেও যে নারীরা তাদের পুরোপুরি স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে তাও কিন্তু নয়।

বেগম রোকেয়া এবং নবাব ফয়জুন্নেসা, নারী জাতির অগ্রগতির দুই পথিকৃৎ, কতই না সংগ্রাম করেছেন আমাদের এই দেশের অবলা নারীদের জন্য। কিন্তু তারা কি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন? না, হননি।

হলে কি আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পদ্মা সেতুর কাজে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র নারী প্রকৌশলীকে আমরা কাজ করতে দেখতাম? আজ যদি বেগম রোকেয়া থাকতেন, তাহলে তিনি হয়তো আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে নারীর অসহায় আত্মসমর্পনের কথা না বলে বিজয়ী নারীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতেন।

প্রিয় পাঠক, বলছি প্রকৌশলী ইশরাত জাহানের কথা। বয়স সবেমাত্র বিশ। জীবনের রূঢ় যাত্রা পথের শুরু। আরও কত পথই না পেরুতে হবে কে জানে। কিন্তু তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে শুরুতেই যোগ হল রাজ্য জয়ের কাহিনী।

ইশরাতের জীবনের শুরুটা আর আট-দশজনের মতো স্বাভাবিক হলেও শেষে এসে করলেন কিস্তিমাত। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হন দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। পাস করার পর চাকরি নেন চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পরেশনে (এমবিইসি)। মাত্র তিন মাস হলো সেখানে চাকরি নিয়েছেন। কোম্পানিটি পদ্মা সেতুর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।

podda setu2পদ্মার পাড়ে ধু-ধু বালুচরে প্রায় আধা কিলোমিটার লম্বা এক কারখানা। এই কারখানায় দিনরাত চলছে সেতুর পাইলিং পাইপ তৈরির কাজ। চীন থেকে আনা বিশাল বিশাল ইস্পাতের পাতগুলোকে এক হাজার ৫০০ টন ক্ষমতার বেন্ডিং মেশিনে মুড়িয়ে সিলিন্ডার বানানো হয়।

ছোট সিলিন্ডারগুলোকে আগুনের তাপে জোড়া লাগিয়ে পাইলিং পাইপ বানানো হয় এই কারখানায়। এখানে প্রতিটি পাইলিং পাইপের মেজারমেন্ট করাই ইশরাতের কাজ।

কাজটি ততটা সহজ নয়। পদ্মার চকচকে বালুর চরে ফুরফুরে বাতাসের চেয়ে কটকটে রোদের রাজত্যই বেশি। এছাড়াও আছে আরো কতশত সমস্যা। ইশরাতের দুচোখে এখন পদ্মা জয়ের স্বপ্ন। তাই সমস্যা, এখন আর কোনো সমস্যাই নয়। মাথায় হেলমেট, হাতে গ্লাভস, পায়ে বুট জুতা আর দুচোখ জুড়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে সাথে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন; বাংলার নারীর জয়গাঁথা লেখার পথে। কোনো এক স্বপ্নকথায় আলোকবর্তিকার মশাল হাতে বিজয়িনী বেগম রোকেয়া অন্ধকারে সবার আড়ালে আলোর মশাল জ্বালিয়ে বাংলার নারী প্রকৌশলী ইশরাত জাহানের হাতে হয়ত তুলে দিয়েছিলেন আগামীর জয়ের গল্পগাঁথা।  

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G