ঐতিহ্য হারাচ্ছে দুর্গাসাগর

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬ সময়ঃ ৪:৫৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৫৬ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

dighibg_393651949প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের রাজার দীঘিটি ঘিরে কয়েকবছর আগেও বসতো পরিযায়ী পাখির মেলা। হরেক রকম নাম জানা-অজানা পাখির অঘোষিত অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল এ দীঘি এলাকা। পাখির টানে, সেইসঙ্গে দুর্গাসাগরখ্যাত এ বিশাল দীঘি, এর চারপাশের সবুজের টানে আসতেন হাজারো দর্শনার্থী, শিক্ষার্থী ও ভ্রমণপিয়াসীরা।
কিন্তু চন্দ্রদ্বীপ রাজের দীঘি দুর্গাসাগরে এখন আর নেই পরিযায়ী পাখির আনাগোনা, স্বভাবতই কমে গেছে দর্শনার্থী।

সেইসঙ্গে অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকটাই দর্শনার্থী খরাতে ভুগছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের রাজার স্ত্রীর নামানুসারে তৈরি দুর্গাসাগর।
স্থানীয়রা জানান, আগে শীতের আগমনী বার্তা বাজতে শুরু হলেই এ দীঘি ও আশপাশের গাছে আসতো প্রচুরসংখ্যক পাখি, পাখির টানে আসতো দর্শনার্থী। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে শীতে তেমন দেখা মিলছে না পরিযায়ী পাখির। ফলে পাখিহীন দুর্গাসাগরে আগের মতো ঘুরতে আসছেন না দর্শনার্থীরাও।

সম্প্রতি সরেজমিনে দুর্গাসাগর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে জানা যায়, ২০০৭ সালের সিডরের পর থেকে দুর্গাসাগরে আগের মতো পাখি আসছে না। ফলে পাখির টানে আসা দর্শনার্থীরাও আর আগের মতো ভিড় করেন না এখানে।

বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের বানারীপাড়া-বরিশাল সড়কের পাশে অবস্থিত দুর্গাসাগর। ১৭৮০ সালে ‍ চন্দ্রদ্বীপ পরগণার তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ প্রজাদের পানি সংকট দূর করতে তার স্ত্রী দুর্গাদেবীর নামানুসারে দুর্গাসাগর দীঘি খনন করেন। স্বাধীনতার পর অনেকটা অকেজো হয়ে যাওয়া দীঘিটি ১৯৭৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো খনন করা হয়।
দুর্গাসাগর এলাকার মোট জমির আয়তন ৪৫ দশমিক ৫৫ একর। এর মধ্যে মূল দীঘি ২৭ দশমিক ৩৮ একর জায়গা ঘিরে। দীঘির চারপাশে ও মাঝের দ্বীপটিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, ওষুধি ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। দীঘির চারপাশে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার হাঁটাপথ রয়েছে।

দীঘিতে মোট ৩টি ঘাট রয়েছে ও মাঝখানে রয়েছে ১টি দ্বীপ। সর্বশেষ ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দীঘিটি সংস্কার করা হয়।Lily02_491426902

এরপর থেকেই মূলত এটি জেলার অন্যতম পর্যটনস্পট হয়ে ওঠে। অনুপম সৌন্দর্য, বৃক্ষরাজিশোভিত ও পাখির কলকাকলিতে মুখরিত দুর্গাসাগরে আসতে শুরু করে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা। সেইসঙ্গে শীতে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা বাড়তে থাকায় দর্শনার্থীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দুর্গাসাগর।

চাহিদা বাড়তে থাকায় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে দুর্গাসাগরে জনপ্রতি ১০ টাকা ও ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সেইসঙ্গে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাও রাখা হয়। এখানে মোটরসাইকেল পার্কিং চার্জ ২০ টাকা ও কার/জিপ ৫০ টাকা এবং বাসের জন্য ১০০ টাকা পার্কিং ফি নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়াও দুর্গাসাগরে পিকনিকের ব্যবস্থা রয়েছে। ১-৫০ জনের জন্য ৮০০ টাকা, ৫১ থেকে ১০০ জনের জন্য ১২০০ টাকা ও ১০০ জনের অধিক ১৫০০ টাকা ফি নির্ধারিত রয়েছে।

দুর্গাসাগরের পানিতে শৌখিন মাছ শিকারীদের জন্য রয়েছে শিকারের সুব্যবস্থা। নির্ধারিত ২ দিনের জন্য নির্দিষ্ট বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের ফি জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা।

বছরের মার্চ মাসে সনাতন ধর্মালম্বীদের দুর্গাস্নান উৎসবও এখানে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া রয়েছে আগতদের জন্য রেস্ট হাউস।
একই রকম মত দুর্গাসাগরের দায়িত্বে থাকা গার্ডদের। তবে দর্শনার্থীরা বলছেন অন্য কথা।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আশিকুর রহমান জানান, তিনি অনেক আগে থেকেই এখানে আসা-যাওয়া করেন। এতো বড় জায়গায় কখনোই তিনি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত লোক দেখেননি। প্রবেশদ্বারে গার্ড থাকলেও পুরো এলাকার আর কোথাও তাদের দেখা যায় না।

তিনি অভিযোগ করেন, দুর্গাসাগরের চারপাশে সীমানা প্রাচীরের বেশকিছু স্থান ভেঙে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা। দীঘির ১ কিলোমিটারের বেশি হাঁটার পথে নেই কোনো বাতি। অনেক স্থানে খুঁটি থাকলেও বাতি নেই। ফলে সন্ধ্যা হলেই পাখি শিকার সহজ হয়ে যায়।

দুর্গাসাগর দেখভালের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নাজির মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, সিডরের পর থেকেই অতিথি পাখির সংখ্যা কমে গেছে।
জনবল ও আর্থিক সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিশাল এলাকাজুড়ে ৪ জন পাহারাদার/মালি রয়েছেন। এতো বড় দীঘির জন্য ৪ জন যথেষ্ট নয়। সীমানা প্রাচীরের দেয়ালগুলো সংস্কারের অভাবে নাজুক হয়ে পড়েছে, অনেক স্থানে ফাটল রয়েছে, আবার স্থানীয়রা ভেঙে যাতায়াতের পথ করে নিচ্ছেন। কখনো কখনো গাছের ডালপালা দিয়ে পথগুলো বন্ধ করে দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, পাখি না থাকার কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা এবারের শীতে অনেকটাই কম। ফলে রাজস্ব আয়ের যে টার্গেট ছিল তা অর্ধেকও হয়নি।

তিনি জানান, তারা পর্যটন করপোরেশনের সঙ্গে ২০১৪ সালে এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সমঝোতা চুক্তি করেছেন। পর্যটন করপোরেশন এ জায়গায় টয়লেট, নিরাপত্তা দেয়াল সংস্কারসহ নানা বিষয়ে দ্রুত কাজ শুরু করবে।
তিনি আরো জানান, দর্শনার্থীরা ভেতরে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা থাকতে পারবেন। এরপর কাউকে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে রাতে বাতি না থাকায় গার্ডদের কষ্ট হয়।
প্রতিক্ষণ/এডি/ফর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G