কুমারখালীতে প্রভাবশালীর নদী দখল করে মাছ চাষ

প্রকাশঃ জুন ৭, ২০১৬ সময়ঃ ১:৪৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৪৭ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

400px-KumarkhaliUpazilaKushtiaঝালকাঠির নলছিটির কুমারখালীতে মরা নদী দখল করে মাছ চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে করা কাজটি বৈধ করতে আবার গতকাল সোমবার শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছের পোনাও অবমুক্ত করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁধ নির্মাণ করে মৃত নদীটি দখল করার কারণে স্থানীয় ৩০০ জেলে পরিবারের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া জলাশয় ব্যবহার করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন স্থানীয় কৃষকরা।

এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ৪০ বছর আগে কুমারখালী এলাকায় সুগন্ধা নদীর বুকচিরে চর জেগে ওঠে। এতে ১২০ একরের নদীতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওই অংশটি সংশ্লিষ্টরা মৃত ঘোষণা করে। তবে সুগন্ধা নদীর সঙ্গে সংযোগের কারণে জোয়ারভাটার পানি সচল থাকায় নদীর মরা অংশে মাছ শিকার করে স্থানীয় ৩০০ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছিল। এ ছাড়া কৃষকরা ওই নদী থেকেই জমিতে সেচ দিতেন। গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় প্রভাবশালী অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী, তাঁর ছেলে আসিফ চৌধুরী ও রাজিব চৌধুরী ভাড়াটে লোকজন দিয়ে মরা নদীটি দখল করেন। তারপর তাঁরা সুগন্ধা নদী থেকে জোয়ারভাটার পানি ঢোকার স্থানটিতে বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করেন। ১ জুন বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। গতকাল শিল্পমন্ত্রীকে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা জানান, গত ১৩ মে দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বাঁধ নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁর নির্দেশ উপেক্ষা করে দখলদার অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী ও তাঁর ছেলেরা বাঁধ নির্মাণ করেন। পরে ‘অনুরাগ মৎস্য সমবায় সমিতি’ নামে একটি নামসর্বস্ব সংগঠনের ব্যানারে মাছ চাষের প্রক্রিয়া শুরু করেন। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে প্রধান অতিথি করে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করেছেন। মন্ত্রীকে দিয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করেই অবৈধ দখলের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করেছেন দখলদাররা।

কুমারখালীর জেলে জব্বার সিকদার বলেন, রুনু চৌধুরী ও তাঁর ছেলেরা বাঁধ নির্মাণ করে প্রথমে মাছ শিকার করেন। এ সময় অন্য জেলেদের নদীতে নামতে দেননি। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় প্রায় ৩০০ মৎস্যজীবী পরিবার না খেয়ে মরবে। শিল্পমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে তাঁরা মাছের পোনা অবমুক্ত করেছেন। এতে অবৈধ কাজের বৈধতা পেয়ে যাবেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাছে কাগজপত্র রয়েছে। আমরা এখানে বাঁধ দিয়ে চিংড়ির খামার করব। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তাই অনুরাগ মৎস্য সমবায় সমিতির উদ্যোগে শিল্পমন্ত্রী প্রধান অতিথি থেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেছেন।’

নলছিটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, ‘স্থানীয় অলিউল ইসলাম রুনু চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে সেখানে মাছের পোনা ছাড়বেন বলে শুনেছি। এটা মৎস্য বিভাগের কোনো অনুষ্ঠান নয়।’

এ ব্যাপারে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং যারা বাঁধ নির্মাণ করেছে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। শুনেছি এর পরও কাজ বন্ধ করা হয়নি। আমি বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G